শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

আস্থা সংকটেও আমানতে বাজিমাত

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
প্রকাশিত: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৪০ পিএম

শেয়ার করুন:

Bangladesh Bank

* তিন মাসে আমানত বেড়েছে ৭৩ হাজার কোটি
* প্রবৃদ্ধিতে এগিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ব্যাংক
* শহরের তুলনায় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি বেশি
* আমানত বাড়লেও কমছে বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি 

দেশে বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে নজিরবিহিন লুটপাটের ঘটনা ঘটে ব্যাংক খাতে। বিভিন্ন ব্যক্তি কিংবা লুটেরা গোষ্ঠির লুটের চিত্র গোপন রাখা হলেও আওয়ামী সরকারের পতনের পর বেরিয়ে আসতে শুরু করে থলের বেড়াল। এতে চরম আস্থা সংকট দেখা দেয় ব্যাংক খাতে। ভয়ে আমানত তুলতে শুরু করে মানুষ। তবে সম্প্রতি আমানত ফিরতে শুরু করেছে। সবশেষ জুন প্রান্তিকে আমানত বেড়েছে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা। আর এক বছরে আমানত বেড়েছে প্রায় ১ লাখ ৫৭ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।


বিজ্ঞাপন


কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৫ সালের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ ছিল ১৯ লাখ ২৩ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা। সেটি জুন শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৯৬ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ, মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে (এপ্রিল-জুন) ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে প্রায় ৭৩ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। আগের তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) বেড়েছিল ৩৯ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। গত বছরের এপ্রিল থেকে তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) বেড়েছিল ৭৬ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা। 

সবমিলে গত এক বছরে ২০২৪ সালের জুন থেকে ২০২৫ সালের জুন) ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে প্রায় ১ লাখ ৫৭ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। সে হিসেবে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ। আগের এক বছরে (২০২৩ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের জুন) ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছিল ১ লাখ ৫১ হাজার ৮১২ কোটি টাকা বা ৯ শতাংশ।

আমানতের প্রবৃদ্ধিতে এগিয়ে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত খাতের বাংকগুলো। তিন সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। এ ছাড়া বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ, বেসরকারি ব্যাংকে ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ, ইসলামী ধারার ব্যাংকে ২ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোতে আমানতের প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক ছিল। আগের তিন মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত, বিশেষায়িত, বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর আমানতের প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক থাকলেও ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোয় আমানতের প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক ধারায় ছিল।

আরও পড়ুন

ব্যাংক খাতে ‘রক্ষকরাই ভক্ষক’, দৃশ্যমান হচ্ছে আমলনামা

বৈষম্য দূর করতে ‘বৈষম্যমূলক’ নীতিমালা

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন- এই তিন মাসে শহরের তুলনায় গ্রামীণ এলাকায় আমানতের প্রবৃদ্ধি বেশি হয়েছে। এ সময়ে গ্রামীণ এলাকায় আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ, যেখানে একই সময়ে শহরাঞ্চলে প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। অন্যদিকে গত জুন শেষে শহরাঞ্চলের আমানতের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ৮০ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা, যা ব্যাংক খাতে মোট আমানতের ৮৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। একই সময়ে গ্রামীণ এলাকার আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১৬ হাজার ২৪ কোটি টাকা। এটি মোট আমানতের ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এক বছর আগে ২০২৩ সালের জুনে ব্যাংক খাতে মোট ১৮ লাখ ৩৮ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা আমানতের মধ্যে শহরাঞ্চলের আমানতের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৫৫ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা বা ৮৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। ওই সময়ে গ্রামীণ আমানতের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৮৩ হাজার ২২১ কোটি টাকা বা ১৫ দশমিক ৪০ শতাংশ।

RRR

তবে আলোচ্য সময়ে ব্যাংক আমানতে যতটা প্রবৃদ্ধ ছিল বিপরিত অবস্থান বিনিয়োগ বা ঋণ বিতরণে। গত মার্চ শেষে মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ১২ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা। জুন শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ লাখ ৩৪ হাজার ১৭২ কোটি টাকায়। ফলে তিন মাসে ঋণ বেড়েছে ২১ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ২৬ শতাংশ। আগের তিন মাসে ঋণ বেড়েছিল ২৯ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আর গত এক বছরে ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৭০ কোটি টাকা বা ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ। 

আরও পড়ুন

লুটপাটে নিঃস্ব ব্যাংকের ‘মামার বাড়ির আবদার’

ব্যাংকে পারিবারিক ক্ষমতা কমছে, খেলাপিতে আরও ‘কড়াকড়ি’

এ বিষয়ে অর্থনীতি বিশ্লেষক ও গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো এম হেলাল আহমেদ জনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বিগত সময়ে নানা অনিয়ম লুটপাটের কারণে ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকদের ব্যাপক আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। গত সরকারের সময়ে এস আলম গ্রুপ দেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি ইসলামি ব্যাংকের মালিকানা নিয়েছিল এবং আরও কয়েকটি ব্যাংক থেকে বিপুল অর্থ ঋণ নিয়ে সেগুলো ফেরত প্রদান না করে বিদেশে পাচার করেছে। এখন সেগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলাতে হবে। জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। আর নতুন করে যেন কোনো অনিয়ম না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে উন্নতি দেখা গেছে। বিভিন্ন কারণে ব্যাংকগুলোতে যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছিল তা এখন আবার ফিরে আসছে। এখন ব্যাংকগুলোতে আমানত বাড়ছে। তারল্য বেড়েছে। একসময় তারল্য নিয়ে কত নেতিবাচক ঘটনা ঘটেছে। সামনে বিনিয়াগ বাড়লে অর্থ উদ্বৃত্ত কমে আসবে এমন প্রত্যাশা করা যায়।’

টিএই/ক.ম 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর