শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

প্রান্তিক জনপদে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ‘নীরব বিপ্লব’

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
প্রকাশিত: ১৭ আগস্ট ২০২৫, ১১:১৩ এএম

শেয়ার করুন:

প্রান্তিক জনপদে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ‘নীরব বিপ্লব’
  • আমানত বেড়েছে ৫ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা
  • ঋণ বিতরণ বৃদ্ধি ১০ হাজার ২৬৬ কোটি
  • রেমিট্যান্স সংগ্রহ বেড়েছে ২৫ হাজার কোটি
  • শীর্ষে ইসলামী ব্যাংক ও ডাচ-বাংলা

গ্রামীণ ও প্রান্তিক জনগণের কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে দেশে যে কটি উদ্যোগ সবচেয়ে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে, তার একটি হলো এজেন্ট ব্যাংকিং। ২০১৩ সালে চালু হওয়ার পর থেকে গত এক যুগে এটি গ্রামীণ অর্থনীতিতে দৃশ্যমান প্রভাব ফেলেছে। ব্যাংকের শাখা ছাড়াই গ্রাহককে সেবা দেওয়ার এই পদ্ধতিকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে নতুন ব্যাংকিং সংস্কৃতি। এই মাধ্যমে গত এক বছরে গ্রাহকের সংখ্যা, আমানত বৃদ্ধি, মোট লেনদেন, ঋণ বিতরণ ও প্রবাসীদের রেমিট্যান্স সংগ্রহের সূচকে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ‘নীরব বিপ্লব’ সৃষ্টি হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


গত জুন পর্যন্ত মাত্র এক বছরে শুধু গ্রাহকই বেড়েছে প্রায় পৌনে ১৪ লাখ, ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১০ হাজার ২৬৬ কোটি এবং রেমিট্যান্স সংগ্রহ বৃদ্ধির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন মাস শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে মোট হিসাবধারীর (গ্রাহক) সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৩০ লাখ ৩৪ হাজার ৫৩৮টি। আর এক বছর ২০২৫ সালের গত জুন শেষে হিসাবধারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৪৪ লাখ ৬ হাজার ২৩৬টি। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে গ্রাহক বেড়েছে ১৩ লাখ ৭১ হাজার ৬৯৮টি বা ৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৭৪১ কোটি ৮০ লাখ। যা গত জুনে এসে দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৮ কোটি ৫৩ লাখ। সেই হিসাবে এক বছরে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১০ হাজার ২৬৬ কোটি ৭৩ লাখ। যা শতকরা হিসাবে প্রায় ৫৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ। পাশাপাশি এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত রেমিট্যান্স আসার স্থিতি ছিল ১ লাখ ৫৮ হাজার ৩১২ কোটি ৯৫ লাখ। যা চলতি বছরের জুন শেষে হয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৮৮৮ কোটি ১৫ লাখ। এখানে বছর শেষে বেড়েছে ২৫ হাজার ৫৭৫ কোটি ২১ লাখ। শতকরা হিসাবে তা ১৬ দশমিক ১৫ শতাংশ।


বিজ্ঞাপন


5

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের ব্যাংকের সাথে লেনদেন সহজ করতেই মূলত এজেন্ট ব্যাংকিং চালু হয়েছে। এটা এখন সারাদেশে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কারণ সাধারণ মানুষ হাতের কাছে ব্যাংকের সাথে লেনদেন করতে পারছেন। এমনকি সাধারণ মানুষ এখন এসব এজেন্ট ব্যাংকিং থেকে ঋণও নিতে পারছে। যার ফলে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ব্যতিক্রম ছাড়া সবকটি সূচকে অতীতের রেকর্ড ভেঙে বিপ্লব ঘটিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ২০২৪ সালের জুন শেষে এজেন্ট ব্যাংকিয়ে আমানতের পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার ৭৩ কোটি। যা চলতি বছরের জুন শেষে হয়েছে ৪৫ হাজার ৬০৫ কোটি ২৭ লাখ। সেই হিসাবে ১ বছরের ব্যবধানে এজেন্ট ব্যাংকিয়ে আমানত বেড়েছে ৫ হাজার ৫৩২ কোটি ২৭ লাখ। তবে এজেন্টের এক বছরে ৬১৮টি কমে গত জুন শেষে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৩৭৩টি। একইভাবে আউটলেটের সংখ্যা ৯১৬টি কমে গত জুনে হয়েছে ২০ হাজার ৫৭৭টি। আর এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা দানকারী ব্যাংক কমেছে ১টি। তবে লাইসেন্সধারী ব্যাংকের সংখ্যা ৩১টিই রয়েছে।

এজেন্ট ব্যাংকিং ধীরে ধীরে একটি কার্যকর মাধ্যম হয়ে উঠছে। বিশেষ করে গ্রামীণ ও ব্যাংকিংসেবার বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীর কাছে প্রবাসী আয় পৌঁছে দিতে সবয়চেয়ে কার্যকর চ্যানেল হয়ে উঠেছে। মূলত দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রচলিত ব্যাংকিংব্যবস্থার বাইরে নিরাপদ আর্থিক সেবা পৌঁছে দিতে বিকল্প হিসেবে ২০১৩ সালে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সূচনা হয়।

এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার বিষয়ে ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সোহেল আর কে হুসেইন বলেন, ‘গত বছরের আগস্টে দেশে যে পরিবর্তন হয়েছে, তার ধাক্কা কিছুটা এই সেবায়ও লেগেছে। সেবাটির আরও বিস্তৃতি ঘটানোর পাশাপাশি নতুন কিছু করা গেলে গ্রাহক ও লেনদেন আরও বাড়বে। নতুন সেবার মধ্যে এজেন্ট ব্যাংকিং আমানতের সঙ্গে বিমা সুবিধা চালু করা হচ্ছে। ঘরের কাছে হাত বাড়ালে এজেন্ট সেবা মিলছে। এজেন্টদের মাধ্যমে ব্যাংকের অনেক সেবা মিলছে। সেজন্য এজেন্টে ব্যাপক সাড়া মিলছে।’

4

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি এপ্রিল-জুন সময়ে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিতরণ করা মোট প্রবাসী আয়ের ৫৫ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ বা ১ লাখ ১ হাজার ২৮২ কোটি টাকার বেশি বিতরণ করেছে। দ্বিতীয় স্থানে ডাচ-বাংলা ব্যাংক পিএলসি প্রায় ৫১ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা এবং তৃতীয় স্থানে ব্যাংক এশিয়া পিএলসি ১৪ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা বিতরণ করেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এজেন্ট ব্যাংকিং ধীরে ধীরে একটি কার্যকর মাধ্যম হয়ে উঠছে। বিশেষ করে গ্রামীণ ও ব্যাংকিংসেবার বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীর কাছে প্রবাসী আয় পৌঁছে দিতে সবয়চেয়ে কার্যকর চ্যানেল হয়ে উঠেছে। মূলত দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রচলিত ব্যাংকিংব্যবস্থার বাইরে নিরাপদ আর্থিক সেবা পৌঁছে দিতে বিকল্প হিসেবে ২০১৩ সালে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সূচনা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের রেকর্ড ভঙ্গ কেবল একটি পরিসংখ্যান নয়, দেশের প্রান্তিক অঞ্চলে আর্থিক সেবা পৌঁছে দিতে বিপ্লব বয়ে এনেছে। এজেন্ট ব্যাংকিং এখন প্রবাসী আয় বিতরণের অন্যতম চ্যানেলে পরিণত হয়েছে। এটি প্রত্যন্ত এলাকার পরিবারগুলোকে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়নে যুক্ত করেছে।’

টিএই/জেবি/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর