• পাইকারি দোকানে চাপ কম, খুচরা বিক্রেতাদের মুখে হাসি
• চাহিদা বেশি পাঞ্জাবি-টি শার্টের, নারীদের ওয়ান পিস
• উৎসব ছাড়া জমে না আজিজ মার্কেট
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে রেজাল্টের অপেক্ষায় শরিফ-তাহমিদ ও ফিরোজ আলম। তিন বন্ধু ঈদ উপলক্ষ্যে পাঞ্জাবি কেনার জন্য এসেছেন আজিজ সুপার মার্কেটে। একাধিক দোকান ঘুরে নিচতলার ‘বিজে পয়েন্ট’ নামের এক দোকান থেকে তিনজন তিনটি ম্যাচিং করে পাঞ্জাবি কিনেছেন। শুধু তারাই নন, রাজধানীর শাহবাগের এই বিপণী বিতানটি একসময় বইয়ের জন্য পরিচিত হলেও এখন তরুণ-তরুণীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে। কারণ এই তিন বন্ধুর মতো অন্যরাও তুলনামূলক সহনীয় দামে নিজেদের পছন্দের দেশীয় পোশাক কেনার সুযোগ পান এখানে।
বিজ্ঞাপন
যদিও আগের তুলনায় কাপড়ের রঙ, মান ধরে রাখতে অনেক দোকানি ব্যর্থ হচ্ছেন এমন অভিযোগ আছে ক্রেতাদের।
ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে এই তিনবন্ধু জানান, ঢাকার অন্য মার্কেটগুলোতে কাপড়ের দাম তুলনামূলক বেশি। এছাড়াও অনেক ভিড় থাকে। সেই তুলনায় আজিজ সুপার মার্কেট কিছুটা ফাঁকা। তাই কেনাকাটা করে স্বস্তি পাওয়া যায়।
এদের মধ্যে শরিফ বলেন, ‘তিনবন্ধু একই ধরনের পাঞ্জাবি কেনার জন্য এসেছি। এই জায়গায় একই ধরনের অনেক দোকান থাকায় অন্য কোথাও যাওয়া হয়নি।’
বিজ্ঞাপন
আজিজ সুপার মার্কেটের নিচতলায় বিজে পয়েন্টের মালিক বাহালুল ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘পাঞ্জাবি ও টি-শার্ট মূলত পাইকারি বিক্রি হয়। রোজা শুরু কিছুদিন পর থেকেই ঢাকা এবং বাইরের বিক্রেতারা পোশাক নিয়েছেন। আমাদের খুচরা বিক্রিও হয়। তুলনামূলক ভালো বিক্রি হচ্ছে এবার।’
পোশাকের বিশেষত্ব তুলে ধরতে গিয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘সব জিনিসের দাম বেড়েছে। পোশাকেরও দাম ক্রমেই বাড়ছে। কিন্তু আমরা কাপড়, রঙ, সুতা সব কিছুতে যাতে মান ঠিক থাকে সেটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করি। এটার ফিডব্যাকও ভালো আসে।’
‘মেঘ’ নামের আরেকটি শো-রুমে গিয়ে দেখা গেল, পাঞ্জাবি ও কাতুয়া দেখছেন নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। তাদের মধ্যেও তরুণ ক্রেতা বেশি। অনেকে আবার সন্তানদের জন্যও ঈদের পোশাক দেখছেন দোকানটিতে।
মেঘ- শো-রুম দেখভালের দায়িত্বে থাকা ওবায়দুল ইসলাম নাহিদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাদের বিক্রি খুব ভালো হচ্ছে। সরাসরি কেনার বাইরে অনলাইনেও পছন্দের পোশাক নেওয়ার সুযোগ আছে।’
তিনি জানান, পুরুষদের অনেকের পছন্দের পোশাক কাতুয়া ৮৫০ টাকা থেকে দাম শুরু। পাঞ্জাবি ১ হাজার ৫৫০ টাকা থেকে শুরু করে ২ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত আছে। এছাড়া যুগলদের জন্য পাঞ্জাবি ও থ্রি-পিস পাওয়া যাচ্ছে ২ হাজার ৫০০ টাকায়।
কাতুয়া কিনতে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এক মার্কেট থেকে বড়-ছোট সবার পোশাক কেনা যায় যে কারণে আজিজ আসা। কাতুয়া পছন্দ হয়েছে। দামও সহনীয় পর্যায় আছে।’
আজিজ সুপার মার্কেটের একাধিক শো-রুম আছে কাপড়-ই বাংলার। বিশেষ করে নারীদের ওড়না, থ্রি-পিস, ওয়ান পিস কাপড়ের জন্য পছন্দের দোকান এটি।
দোকানের ব্যবস্থাপক জানান, ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ২ হাজার ৬৯০ টাকা পর্যন্ত থ্রি-পিস আছে। দেশীয় সিঙ্গেল কামিজ ১ হাজার ৩৯০ থেকে ১ হাজার ৮৫০ টাকা পর্যন্ত দামের আছে।
এই দোকানে ঈদ উপলক্ষ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ছাড়ের কথা বলা না থাকলেও নির্ধারিত দামের চেয়ে কিছুটা কম নেওয়ার কথা জানালেন দোকানি। তবে মার্কেটের একাধিক দোকানে ঈদ উপলক্ষ্যে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় চলছে।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে আজিজ সুপার মার্কেটের আহ্বায়ক সভাপতি রবিউল ইসলাম রবি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘অন্যান্য বছরের চেয়ে মার্কেটের চিত্র ভিন্ন। আমরা রমজানের শুরুতেই সাজসজ্জা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছি। মার্কেটের নিরাপত্তা কর্মীদের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরাও এখানে নিয়মিত কাজ করছেন। ক্রেতারা যাতে নির্বিঘ্নে কেনাকাটা করতে পারেন, যাতে কোনো ধরনের সমস্যা না হয় সেজন্য সবাইকে আগে থেকেই নির্দেশনা দেওয়া আছে। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মানুষ আসছেন। কেনাকাটা করতে পারছেন। আশা করি ব্যবসায়ীরাও খুশি।’
বইপ্রেমীদের আড্ডা থেকে যেভাবে পোশাকের মার্কেট
জানা যায়, আশির দশক থেকে বইপ্রেমী, সাংস্কৃতিক কর্মীদের অন্যতম আড্ডাস্থল ছিল আজিজ সুপার মার্কেট। ১৯৮৭ সালে পাঠক সমাবেশ দিয়ে আজিজ মার্কেটে বইয়ের দোকানের যাত্রা শুরু। এরপর আরও বাড়তে থাকেন বইয়ের দোকান।
দোকানিরা জানান, ২০০০ সালের পর থেকে আজিজ মার্কেটে একটা-দুইটা করে বাড়তে থাকে কাপড়ের দোকান। দিনদিন পোশাকের চাহিদা বাড়ায় ব্যবসায়ীরাও তাদের ব্যবসার ধরণ বদলাতে শুরু করেন। ২০০৫ সালের পর থেকে কাপড়ের দোকান থেকে বেশি ভাড়া এবং অতিরিক্ত অগ্রিম অর্থ পাওয়ার কারণে দোকানের মালিকরাও পোশাক বিক্রেতাদের বেছে নিয়েছেন। এভাবে করে ধীরে ধীরে কমে বইয়ের দোকান। অবশ্য এখনো নিচতলায় বেশ কিছু বইয়ের দোকান আছে। তবে মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের বইয়ের দোকান বেশি।
বিইউ/এএস