সোমবার, ৬ মে, ২০২৪, ঢাকা

বাংলাদেশ ব্যাংক-আইএমএফের বৈঠকে রিজার্ভ, খেলাপি ঋণ নিয়ে আলোচনা

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
প্রকাশিত: ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:১৮ এএম

শেয়ার করুন:

বাংলাদেশ ব্যাংক-আইএমএফের বৈঠকে রিজার্ভ, খেলাপি ঋণ নিয়ে আলোচনা

বেশ কিছু এজেন্ডা নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিশেষ প্রতিনিধি দল। ঢাকায় অবস্থান করা প্রতিনিধিদলটি বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন। দুপুর একটা পর্যন্ত চলা বৈঠকে আইসিটি, গবেষণা ও পরিসংখ্যান বিভাগের চারজন নির্বাহী পরিচালক এবং বিভিন্ন বিভাগের পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ব্যালেন্স অব পেমেন্ট সূচকের উন্নতি ও পরবর্তী (২০২৪-২৫) অর্থবছরের পূর্বাভাস নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকে আইএমএফ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আরও তিনটি বৈঠক হয়েছে। মুদ্রানীতি কমিটি, ব্যাংকিং সুপারভিশন কমিটি এবং সাসটেইনেবল ফাইন্যান্সি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এসব বৈঠক হয়। এসব বৈঠকে মূল্যস্ফীতি সুদহার, বিনিময় হার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।


বিজ্ঞাপন


এছাড়া বৈঠকে আর্থিক খাত সংস্কার, খেলাপি ঋণ, সুদের হার বাস্তবায়ন, মুদ্রানীতি, মূল্যস্ফীতি, বিদেশি বাণিজ্যের ভারসাম্য ও আউটলুক, মুদ্রা বাজার ও তারল্য ব্যবস্থাপনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংক্রোচনমূলক মুদ্রানীতির মাধ্যমে সুদের হার বৃদ্ধিসহ গৃহীত পদক্ষেপের তথ্য সংগ্রহ করেছে সংস্থাটি। একইসঙ্গে রিজার্ভ পরিস্থিতি, ডলারের বিদ্যমান রেট, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক লেনদেন বিষয়ে হালনাগাদ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ জানতে চেয়েছে। ব্যাংক খাতের  সংস্কার, একীভুতকরণের পদক্ষেপ, রাজস্ব সংক্রান্ত পরামর্শের অগ্রগতি প্রতিবেদন নিয়েছে আইএমএফ।

আরও পড়ুন

‘মে-জুন মাসে কঠিন চাপে থাকবে ব্যাংক খাত’

এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও পর্যবেক্ষণে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় অংশীজনদের সঙ্গে সংস্থাটি সঙ্গে ঋণ কর্মসূচি চলমান। তবে প্রথমদিনের বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য সংস্থার গৃহীত পদক্ষেপকে যথাযথ বলে জানিয়েছেন দাতাসংস্থটির সদস্যরা।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা জানান, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোর গড় খেলাপি ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কী ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চেয়েছে আইএমএফ।


বিজ্ঞাপন


সূত্র জানায়, আইএমএফ ৪৭০ কোটি টাকা ঋণ ছাড়ের শর্ত হিসাবে ৪৭টি সংস্কার প্রস্তাব দেয়। এসবের মধ্যে অধিকাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। মূলত সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির মাধ্যমে স্মার্ট পদ্ধতিতে সুদের হার নির্ধারণ, রিজার্ভের লক্ষ্যপূরণ, বাজারভিত্তিক ডলারের রেট কারা আগে ক্রলিং পেগের মাধ্যমে ডলার লেনদেন, জিডিপির তুলনায় রাজস্ব আদায়ের অনুপাত বৃদ্ধি, ব্যাংক খাতের সংস্কারসহ একীভূতকরণ নীতিমালা এবং বৈদেশিক বাণিজ্যিক লেনদেনসহ সামষ্টিক অর্থনীতির রিভিউ সংক্রান্ত বিষয়াবলির ওপর আলোচনা করেছেন। প্রথমদিনের এই আলোচনায় বাংলাদেশে গৃহীত পদক্ষেপে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছেন আইএমএফের প্রতিনিধিরা।

প্রতিনিধিদলটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ইত্যাদি সংস্থার সঙ্গে আগামী ৮ মে পর্যন্ত বৈঠক করবে।

আরও পড়ুন

একদিনে ১৩ হাজার কোটি টাকা ধার দিল বাংলাদেশ ব্যাংক

এর আগে গেল ১৮ এপ্রিল ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নতি সেভাবে হয়নি। সময় এসেছে বাংলাদেশকে এখন মুদ্রার নমনীয় বিনিময় হারের দিকে যেতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় উঠে এসেছে, বুধবার গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের পরামর্শে বিপিএম-৬ অনুযায়ী তা ১৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। এটি অবশ্য প্রকৃত রিজার্ভ নয়। আর প্রকৃত ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ বের করতে বিপিএম ম্যানুয়াল থেকে চলতি দায় বাবাদ আকু বিল, বৈদেশিক পাওনা, প্রকল্প বকেয়া বিল, এবং বিশেষ পরিপূরক মুদ্রার (এসডিআর) বকেয়া হিসাবে ৫ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার বাদ দিতে হবে। সেই হিসাবে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত জানুয়ারিতে, ফেব্রুয়ারি মার্চে গড় আমদানি ব্যয় ছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ৫ দশমিক ২০ বিলিয়ন এবং মার্চে ৫ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা  আহসান এইচ মনসুর বলেন, আইএমএফের দল এবার রাজস্ব নীতিতে গুরুত্ব দেবে। আর ব্যাংক সংস্কারের নামে ব্যাংক একীভুতকরণ নিয়ে আপত্তি তুলতে পারে। রিজার্ভ কেন বাড়ছে না সে বিষয়ে আলোচনায় বাড়তি গুরুত্ব পেতে পারে।’

আরও পড়ুন

শেয়ার দাম কমার নতুন সীমা বেঁধে দিল বিএসইসি

চলতি ক্যালেন্ডার বর্ষের মার্চ মাসেও প্রকৃত রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশ। মার্চ শেষে প্রকৃত রিজার্ভ থাকার কথা ১৯ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার, কিন্তু বাস্তবে ছিল প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের জুনে ২৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও নিট রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে সাড়ে তিন বছরের মেয়াদে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কার্যক্রমের বিপরীতে আইএমএফ অনেক শর্ত দেয়। রিজার্ভ ছাড়া প্রায় সব শর্ত পূরণ করে দুই দফায় দুই কিস্তির অর্থ পেয়েছেও বাংলাদেশ। এবার তৃতীয় কিস্তির পালা। আগামী জুনে যা পাওয়ার কথা। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের শর্ত কতখানি কী পূরণ হলো, তার মূল্যায়নের ভিত্তিতে এই কিস্তি ছাড় করা হবে।

টিএই/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর