রোববার, ১৯ মে, ২০২৪, ঢাকা

‘মে-জুন মাসে কঠিন চাপে থাকবে ব্যাংক খাত’

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:১৬ এএম

শেয়ার করুন:

‘মে-জুন মাসে কঠিন চাপে থাকবে ব্যাংক খাত’

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, সরকার টাকা ছাপানো বন্ধ রেখেছে এটা ঠিক, কিন্তু ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ জোগান দেওয়া হচ্ছে। এতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা কাজে আসছে না। বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার যেভাবে ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভর করছে, তাতে  আগামী মে ও জুন মাসে ব্যাংক খাতের ওপর বড় ধরণের চাপ পড়বে। কারণ এই দুই মাসে সরকারের ব্যয় সবচেয়ে বেশি থাকে। এই চাপ নেওয়া ব্যাংকের জন্য খুব কঠিন হবে।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট গোলটেবিল আলোচনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ইনস্টিটিউট অব কস্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট একাউন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি)। 


বিজ্ঞাপন


এতে প্রধান অতিথি হিসেবে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়েশা খান উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির চীফ এডভাইজর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন এবং এফবিসিসিআই এর প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, দেশের একমাত্র সমস্য ম্যাক্রো ইকোনমিকসের আনস্টেবিলিটি। এটি ঠিক করতে হলে চারটি বিষয় সমাধান করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, একক বিনিময় হার, রিজার্ভ বাড়ানো এবং ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণ কমানো।

তিনি আরও বলেন, বাজেটের প্রধান সীমাবদ্ধতা হলো প্রয়োজনীয় রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতা। তাই জিডিপির তুলনায় বাজেট ছোট হলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি বাড়ানোর সুযোগ নেই। মূল্যস্ফীতি কমাতে টাকা ছাপানো বন্ধ রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে যে ঋণ করা হচ্ছে তা আবার জোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ কাজ করছে না।

আরও পড়ুন

রাজস্ব আয়ে ১৫.২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

তিনি বলেন, আমাদের এক্সচেঞ্জ মার্কেট স্থিতিশীল করতে হবে। সারা পৃথিবীতে যখন বিনিময় হার বাড়ছিল তখন আমরা ধরে রেখেছি। এর খেসারত এখন দিতে হচ্ছে। একক বিনিময় হার চালু করলে এ সম্যা বেশি দিন থাকবে না। আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত অর্থবছরে ১ লাখ কোটি টাকা ছাপিয়ে বাজেট ঘাটতি মেটানো হয়েছে। এ কারণেই মূল্যস্ফীতির বর্তমান এই অবস্থা।

এইচ মনসুর বলেন, টাকাকে আকর্ষণীয় করতে উচ্চ সুদহারের দিকে যেতে হচ্ছে। বর্তমানে এটি করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। খুব অল্প সময়ের জন্য হলেও এটি চালিয়ে যেতে হবে। আগমী ৯ থেকে ১২ মাস এটি অব্যাহত রাখতে হবে। তবে ব্যবসায়ীদের ঋণ পেতে হলে সরকারকে ব্যাংক নির্ভরতা কমাতে হবে। ব্যাংক খাতে বাজেট ঘাটতি কমানো হলে ওই টাকা ব্যবসায়ীরা পাবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. ফরাসউদ্দীন বলেন, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। কারণ যখন ৯ শতাংশ সুদহার ছিল তখনও মূল্যস্ফীতি ছিল। এটি সমাধানের জন্য মজুত ও সরবরাহ বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে স্বচ্ছতার সাথে কাজ করতে হবে।

সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, রফতানি আয়ের ১২ ভাগ কেন বিদেশে থেকে যাচ্ছে, কেন বছরে ৭০০ কোটি ডলার পাচার হচ্ছে? আমরা কেন ধরতে পারছি না। সরকার বাহাদুরকে বলব এটি নিয়ন্ত্রণ করুন।

সাবেক এ গভর্নর আরও বলেন, একক বিনিময় হার না হলে রিজার্ভ পতন থামবে না। মধ্যস্বত্বভোগীদের সুবিধার জন্য একাধিক বিনিময় হার রাখা হচ্ছে। একক বিনিময় হার হলে মধ্যস্বত্বভোগী থাকবে না। সরাসরি রেমিটার বেনিফিট পাবে। এতে ডলার সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া বিদেশে থাকা রফতানি আয় সর্বোচ্চ ৫ শতাংশের আশেপাশে থাকতে পারে। কিন্তু এটি ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এটি সমাধান করতে হবে।

বাজেট ঘাটতি পূরণের জন্য বিদেশ থেকে ঋণ না নিয়ে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বিদেশি উৎস কিংবা ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিয়ে ঘাটতি পূরণ করলে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হয়। ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিলে বেসরকারি খাত ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কিন্তু সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নিলে মূল্যস্ফীতিতে আঘাত হয় না।

আইসিএমএবি'র সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমান কাউন্সিল সদস্য আরিফ খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইসিএমএবি'র প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।

টিএই/এমএইচএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর