সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

ঢিমে তালে চলছে ৩০ বছরের পুরনো ধলুর ক্যান্টিন

জনি সরকার
প্রকাশিত: ১১ মার্চ ২০২৩, ০১:২০ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img
ইনসেটে বিভাষ চন্দ্র দেবনাথ (ধলু)

ক্ষেতলাল সরকারি ছাঈদ আলতাফুন্নেছা কলেজের প্রধান ফটকের সামনে ছোট্টো একটি ক্যান্টিন। মাটির দেওয়ালের ওপর টিনের চালা দেওয়া ছাউনি। মাটির জীর্ণ সেই দেওয়ালের খানিক অংশ রঙ করা। তাতে স্পষ্ট করে লেখা—ধলুর ক্যান্টিন, স্থাপিত: ১৯৯২। সাল দেখেই স্পষ্ট হওয়া যায় যে, প্রায় ত্রিশ বছর আগে ১৯৯২ সালে এই দোকানটি তৈরি করেছেন ধলু। সেই থেকে ধলুর দোকানে মিলছে রকমারি সব খাবার দাবার। চা-বিস্কুট, পান-সিগারেট, মুড়ি, বুট, কলা ইত্যাদি। এছাড়াও ধলুর ক্যান্টিনের ঐতিহ্যবাহী দুটি খাবার রয়েছে একটি সন্দেশ; আরেকটি পেঁয়াজু। এই দুটি অবশ্য তিনি নিজের হাতেই তৈরি করেন ধলু। আরও রয়েছে মাটির কলসের ঠাণ্ডা পানি।

ধলু দোকানির পুরো নাম বিভাষ চন্দ্র দেবনাথ (ধলু)। তিনি জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল পৌর এলাকার ফকিরপাড়া মহল্লার মৃত সুধির চন্দ্র দেবনাথের ছেলে। সবাই তাকে ধলু কাকা নামে চেনেন। জীবিকার তাগিদে কলেজ গেটের সামনে ছোট্ট পরিসরে গড়ে তোলেন ক্যান্টিনটি। সেই থেকে ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে সততার সঙ্গে ঢিমে তালে চলছে ক্যান্টিনটি। ক্যান্টিন চালিয়ে কোনো রকমে চলে তার সংসার। শত অভাব অনটন মাথায় নিয়েও হাসিমুখে তিনি এই ক্যান্টিন চালান।


বিজ্ঞাপন


জানা যায়, ক্ষেতলাল সরকারি ছাঈদ আলতাফুন্নেছা কলেজটি সরকারিকরণের আগে এস.এ.কলেজ নামে পরিচিত ছিল। সেই থেকেই ত্রিশ বছরের পুরনো এ ক্যান্টিনে পর্যায়ক্রমে বছর-বছর যেসকল শিক্ষার্থী বসে চা, নাস্তা করেছিল। তাদের মধ্যে অনেকেই আজ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে করেন চাকরি। সকলের ভাগ্য পরিবর্তন হলেও পরিবর্তন ঘটেনি ধলুর ক্যান্টিনটির। কলেজের পাশেই কয়েক বছর পূর্বে অস্থায়ীভাবে গড়ে উঠেছে ক্ষেতলাল পৌরসভা কার্যালয় এবং রয়েছে জীর্ণশীর্ণ ডাকবাংলো। ডাকবাংলোই নতুন আগন্তুক, কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী, ছাত্র-ছাত্রী এবং পৌসভার স্টাফদের বরাবর চলাচল ঐতিহ্যবাহী এই ধলুর ক্যান্টিনে। ছোট্ট এই ক্যান্টিন থেকে যে আয় আসে তা দিয়েই চলে ধলুর অভাবের সংসার। একজনের উপার্জিত অর্থেই চলে সেই সংসার। পরিবারে রয়েছেন স্ত্রীসহ দুই সন্তান।

কলেজে পড়া ১৯৯৮ ব্যাচের ছাত্র ও বর্তমান পৌর স্টাফ শামীম বলেন, আমাদের সময়ে আমরা ধলুর ক্যান্টিনে বসে অনেক সময় কাটিয়েছি। অবশ্যই আমাদের ব্যাচের আগের অসংখ্য ব্যাচ পার হয়ে গেছে, যারা ধলুর ক্যান্টিনে বরারবের মত সময় কাটিয়ে গেছেন।

ক্ষেতলাল সরকারি ছাঈদ আলতাফুন্নেছা কলেজের প্রভাষক তাজির আহম্মেদ সাকিব বলেন, ধলু কাকার দোকানে ছোট বেলা থেকে সন্দেশ ও পিঁয়াজু খেতাম। এখন আমি এই কলেজের প্রভাষক। কলেজে আসলে এই দোকানের পিঁয়াজু ও সন্দেশ খেয়ে থাকি। স্বাদ আগের মতোই আছে।

সরকারি ছাঈদ আলতাফুন্নেছা কলেজের হিসাব সহকারী মো. শাহিনুর ইসলাম বলেন, আমি আমার বাবা, চাচার কাছে এই ধলু কাকার দোকানের গল্প শুনেছিলাম। এখন আমি নিজেই এই দোকানে এসে খাই। অনেক ভালো লাগে তার হাতের তৈরি খাবার। যুগের সাথে সব কিছু পরিবর্তন হলেও ধলু কাকার জীবনের কোনো পরিবর্তন হয়নি।


বিজ্ঞাপন


ক্যান্টিন মালিক ধলু বলেন, প্রায় ত্রিশ বছর আগে এই ক্যান্টিন গড়ে তুলেছি। তখন আমি বিয়ে করিনি। এমনও দিন গেছে সারাদিনে মাত্র একশ টাকা বিক্রি করেছি। তারপরেও আমি এখন পর্যন্ত ক্যান্টিনটি ধরে রেখেছি। আগে লাল চা ছিল দুই টাকা কিন্তু কলেজ পড়ুয়াছাত্র-ছাত্রীদের কাছথেকে নিতাম এক টাকা। এভাবেই চালিয়ে গেছি শখের এ ক্যান্টিন। এখন সময়ের বিবর্তনে চা পাঁচ টাকা দামে বিক্রি হয়। আমার ক্যান্টিনে বসে সময় কাটানো, চা-নাস্তা করা অনেক ছাত্র-ছাত্রী এখন সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে চাকরি করছে। ধাপে ধাপে যত শিক্ষার্থী কলেজে পড়েছে, তারা এখনও এক নামে আমার এ ক্যান্টিনকে এক নামে চিনে। সংসারের অভাব-অনটনের কারণে উন্নতভাবে গড়ে তুলতে পারিনি আমার এ ক্যান্টিন। যে আয় হয় তা দিয়েই কোনোমতে সংসার চলে।

ক্ষেতলাল পৌরসভার মেয়র সিরাজুল ইসলাম সরদার বলেন, আমি প্রায় ৩০ বছর থেকে ধলু মিয়ার চায়ের দোকান দেখে আসছি। তার অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। আমি আমার পৌরসভা ও ব্যাক্তিগত ভাবে তাকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর