মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

নিষিদ্ধ জালে বিলুপ্ত মাছ, হুমকিতে জীববৈচিত্র্য

পুলক পুরকায়স্থ
প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:৫৩ এএম

শেয়ার করুন:

নিষিদ্ধ জালে বিলুপ্ত মাছ, হুমকিতে জীববৈচিত্র্য

দেশী মাছের অফুরন্ত ভান্ডার খ্যাত মৌলভীবাজারের হাইল হাওড়, কাউয়াদিঘী হাওড়, হাকালুকি হাওড়সহ বিল ও জলাশয়। বর্তমানে অবাধে এসব জায়গায় নিষিদ্ধ জাল দিয়ে প্রতিনিয়ত চলছে মাছ শিকারের মহোৎসব। এতে হুমকিতে পড়ছে হাওড়ের জীববৈচিত্র্য।

দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ শিকার চলছে। এ কারণে মা মাছ, পোনা মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ অকালে মারা যাচ্ছে। রয়েছে আইনের যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না বলে অভিযোগও। জানা গেছে, হাওড়সহ বিল ও জলাশয়ে দেশী প্রজাতির মাছ বিশেষ করে কই, পুটি, টেংরা, মাগুর, শিং, টাকি, চিংড়ি ব্যাপকভাবে বংশ বিস্তার করে। প্রকাশ্যেই নিষিদ্ধ জাল, ভেড় জাল, প্লাস্টিকের ফাঁদ ব্যবহারের ফলে নির্বিচারে ধ্বংস হচ্ছে দেশীয় বিলুপ্ত প্রায় মাছ। পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে হাওড়াঞ্চলের জলজ প্রাণী, উদ্ভিদসহ হাওরের পরিবেশ।
 
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, দুই যুগ আগেও হাকালুকি হাওরে ১১০ প্রজাতির মাছ ছিল। এখন ৫০ প্রজাতির নিচে নেমে গেছে। হাওর থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে মরায়েক, গাঙ মাগুর, রিটা, বাঘা আইড়, চিতল ও রানিমাছসহ কয়েক প্রজাতি সুস্বাদু মাছ। এ ছাড়া হাওরে মাখনা, পদ্ম, শিঙারা, শাপলা, বনতুলসী, হেলেঞ্চা, বল্লুয়া, চাল্লিয়াসহ শতাধিক প্রজাতির উদ্ভিদ ছিল। এসব উদ্ভিদ এখন বিলুপ্তপ্রায়।

>> আরও পড়ুন: কক্সবাজারে হোটেল ভাড়ায় ৭০, খাবারে ৫০ শতাংশ ছাড়


বিজ্ঞাপন


স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতিদিন নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করা হচ্ছে। বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দলবদ্ধভাবে জেলেরা বড় নৌকা নিয়ে মাছ শিকার করেন। আগে বেড়জালের দৈর্ঘ্য ১ থেকে দেড় হাজার ফুট ছিল। এখন জেলেদের ব্যবহৃত জালের দৈর্ঘ্য ৩ থেকে ৪ হাজার ফুট। যার কারণে বড় মাছের সঙ্গে পোনামাছও ধরা পড়ে এসব জালে। এসব জালে হাওরের উদ্ভিদগুলো পরিপূর্ণ হওয়ার আগেই নষ্ট হয়ে যায়।

নিষিদ্ধজাল ব্যবহার ও বিক্রয়কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার কথা থাকলেও অদৃশ্য কারণে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ হচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন, হাওর রক্ষা সংগ্রাম কমিটি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক রাজন আহমদ।

তিনি বলেন, ‘এই জাল বিক্রি এবং ব্যবহার দুটিই নিষিদ্ধ। কিন্তু উৎপাদন বন্ধ হচ্ছে না। ফলে জেলেরা এই জাল অবাধে ব্যবহার করে ছোট-বড় এবং মা মাছসহ সবধরনের মাছ শিকার করছেন। এতে অনেক ধরনের মাছ বিলুপ্তসহ উৎপাদন কমে যাচ্ছে। অনেক জলজ উদ্ভিদও বিলুপ্ত হচ্ছে কিন্তু কোনো অভিযান হচ্ছে না।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মৌলভীবাজারের সমন্বয়ক আসম সালেহ সোহেল বলেন, ‘বেশি লাভের আশায় নিষিদ্ধজালের মাধ্যমে ডিমওয়ালা মা মাছসহ পোনামাছ শিকারে দেশীয় প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব প্রায় বিলীনের পথে। পাশাপাশি জলজ প্রাণী মারা যাওয়াতে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে।’

>> আরও পড়ুন: দোলে কমলা দোলে আশু স্যারের বাগানে


বিজ্ঞাপন


তিনি আরও বলেন, ‘নিষিদ্ধজাল উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ না করে জলাশয়ে অভিযান চালালে দরিদ্র মৎস্যজীবীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। উৎপাদনকারী ও বিক্রেতা সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন। বাজারে নিষিদ্ধজাল বিক্রি বন্ধ হলে তারাও তা কিনবেন না।’ এ বিষয়ে তিনি কঠোর হওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিষিদ্ধজাল গোপনে বিক্রি করছে। তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। পাশাপাশি নিষিদ্ধজাল ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। তাতে নিষিদ্ধজালের ব্যবহার কমে যাবে।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, প্রতি সপ্তাহে হাকালুকি হাওরের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা অংশে অভিযান চালানো হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বড়লেখা অংশে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ও বেড়জাল জব্দ করে পোড়ানো হয়েছে।

প্রতিনিধি/এএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর