প্রায় একই সময়ের মধ্যে পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় দেশের ৩ জেলায় অন্তত পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসময় আহত হয়েছেন নারীসহ আরও ছয়জন। আহতরা সবাই নারী বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালে এ ঘটনা ঘটে বলে ঢাকা মেইলের বিভিন্ন জেলার সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে জানা গেছে।
নাটোর জেলা সংবাদদাতা জানান, জেলার বড়াইগ্রামে ধানের জমিতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে বেলাল মিয়াজি (৪৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় সেলিম হোসেন (২৮) নামে আরও একজন কৃষক গুরুতর আহত হয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার জোয়াড়ি ইউনিয়নের ভবানীপুর আটঘরিয়া বিলে এই ঘটনা ঘটে।
জোয়াড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান চাঁদ মাহমুদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত বেলাল মিয়াজি উপজেলার জোয়াড়ি ইউনিয়নের ভবানীপুর আটঘরিয়া এলাকার হাজী আবুল হোসেনের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে ধানের জমিতে কাজ করছিলেন ওই কৃষক। এ সময় হালকা বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই বেলালের মৃত্যু হয়। এসময় পাশের জমিতে থাকা কৃষক সেলিম দগ্ধ হন। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে বনপাড়ার একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন।
বিজ্ঞাপন
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সিদ্দিক জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
এদিকে শেরপুরের নকলায় পৃথক স্থানে বজ্রপাতে দুইজন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালে উপজেলার উরফা ইউনিয়নের হাসনখিলা এলাকা ও উপজেলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের রেহারচর এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, হাসনখিলা এলাকার মন্নেস আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম অপি (৩০) ও রেহারচর এলাকার মৃত. সিদ্দিক সরকারের ছেলে নাজমুল হক (৪৫)।
উরফা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নূরে আলম তালুকদার ভুট্টো জানান, কৃষক রফিকুল ইসলাম অপি তার ভাইদের নিয়ে আমন ধান রোপনের জন্য সকালে বাড়ির পাশের বীজতলা থেকে ধানের চারা তুলতে যায়। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাতে আহত হন তিনি। পরে তাকে সেখান থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক অপিকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে মাছ ধরতে গিয়ে পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় জেলায় আরও একজন নিহত হয়েছেন।
নিহতের ভাই মোজাম্মেল হক কালা মিয়া জানান, সকালে বৃষ্টির সময় নদীতে মাছ ধরার জন্য নাজমুল হক বাড়ি থেকে বের হন। অনেক সময় অতিবাহিত হলেও সে আর বাড়ি ফিরেনি। পরে তার বড় মোজাম্মেল হক ওই গ্রামের সাবেক মেম্বার সফর উদ্দিনের পুকুর পাড় থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেন।
নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুশফিকুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বৃষ্টির সময় মাছ ধরতে গিয়ে যাওয়ার পথেই বজ্রপাতে মারা গেছেন রেহারচরের নাজমুল। অপরদিকে হাসনখিলায় বৃষ্টির মধ্যে আমন ধানের চারা তুলতে গিয়ে অপু নামের আরেক কৃষক বজ্রপাতে মারা গেছেন।
কুষ্টিয়া সংবাদদাতা জানান, বজ্রপাতে জেলায় দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার দিকে কুষ্টিয়ার মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলায় বজ্রপাতে দুজন নিহত এ ঘটনা ঘটে। এ সময় আরও পাঁচ নারী আহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন মিরপুর উপজেলার ছাতিয়ান ইউনিয়নের আটিগ্রাম এলাকার জাবেদ আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৪৫) ও ভেড়ামারা উপজেলার বাহিরচর ইউনিয়নের মসলেমপুর গ্রামের ফজলু মাতবরের ছেলে আশরাফুল (৪০)। আহতদের মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে জাহাঙ্গীর আলম বাড়ির পাশে নিজের জমিতে মেয়ে জুলিয়াকে (১৫) নিয়ে কাজ করছিলেন। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাতে তারা দুজনই আহত হন। স্থানীয়রা দুজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে মিরপুর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক মেডিকেল অফিসার ড. ইমরান আহমেদ জাহাঙ্গীরকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় মেয়ে জুলিয়াকে মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। প্রায় একই সময় ভেড়ামারা উপজেলার বাহিরচর ইউনিয়নের মসলেমপুরে জিকে ক্যানেলে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে আশরাফুল ইসলাম (৪০) ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
ভেড়ামারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মজিবর রহমান বজ্রপাতে একজন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে মঙ্গলবার সকালে মিরপুর উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নে বজ্রপাতে শিলা (১৮), মেঘলা খাতুন (৫০), রুমি (২৩) ও বন্যা (২৫) নামের ৪ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রতিনিধি/এএ
