পিরোজপুরের নাজিরপুরের ফসলি জমি ও স্কুলের পাশেই অবৈধভাবে চলছে দু’টি ইটভাটা। উচ্চ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে গড়ে ওঠা এসব ইটভাটায় মানা হয়নি সরকারের নির্দেশনা, নেই পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রও। কৃষি অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ না করেই আওয়ামী লীগের শাসন আমলে ক্ষমতার তাপট দেখিয়ে চলছে ইটভাটা দু’টি। যত্রতত্র এই ইটভাটার কারণে বায়ু দুষণ ও পরিবেশ দুষণে বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। ফসলি জমি ও নদীর পাড়ের মাটি ব্যবহারে দিন দিন কমছে আবাদি জমি এবং বেড়েছে নদী ভাঙন, বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি। ক্ষমতার অপব্যবহার করে অন্যের জমি দখল করে চলছে এ ইটভাটা। অবৈধ এসব ইটভাটা বন্ধে প্রশাসনের নেই কোন কার্যকরী ভূমিকা। তবে প্রশাসন বলছেন একবার জরিমানা করেছি একটি ভাটায়। মৌখিকভাবে বন্ধের নির্দেশ ও দিয়েছি, জমি দখলের অভিযোগ মৌখিকভাবে পেয়েছি, আমরা দ্রুতই ইটভাটায় আবারও অভিযান পরিচালনা করব।
কোনো নিয়ম নীতি না মেনেই যত্রতত্র এ ইটভাটা তৈরির ফলে বেড়েছে অতিরিক্ত ধুলা-বালি, আর এরই কারণে বেড়েছে কাশি, শ্বাসকষ্টসহ নানারকম রোগ। আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ বৃদ্ধরা।
বিজ্ঞাপন
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান বলেন, ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় ১ কিলোমিটারের মধ্যে শিশু, বাচ্চা, বৃদ্ধদের শ্বাসকষ্ট হয়, লেবাররা প্রটেকশন না নিলে তাদের মারাত্মক ক্ষতি হয়।
স্থানীয়দের সরকারি কবুলিয়ত প্রাপ্ত সম্পত্তি দখল করে চলছে এ ইটভাটা। এসব অভিযোগ উঠেছে নাজিরপুরের ২ নম্বর মালিখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সাবেক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. রুহুল আমিন বাবলু দাড়িয়ার বিরুদ্ধে। চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে চলছে মেসার্স রনি ব্রিকস নামের একটি ভাটা। এসব ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় নষ্ট হচ্ছে হেক্টর ফসলি জমি। একই অভিযোগ উপজেলার বানিয়ারী গ্রামে অবস্থিত মেসার্স জয় ব্রিকসের বিরুদ্ধে। মেসার্স জয় ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মজিবর রহমান শামীম।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছর মেসার্স রনি ব্রিকসের কালো ধোয়ায় ৭ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে কৃষকের এবং ওই এলাকায় কোনো প্রকার ফল চাষ করা যাচ্ছে না। মেসার্স জয় ব্রিকসের কালো ধোয়ায় এবছর নষ্ট হচ্ছে রবি মৌসুমের ফসল সূর্যমুখী। ভাটা চালু হওয়ার পর থেকে প্রতি বছর নষ্ট হচ্ছে আশপাশের ধান।
বিজ্ঞাপন
মালীখালী গ্রামের বিধুর চৌধুরী বলেন, সরকারি কবুলিয়ত প্রাপ্ত জমি পেয়েও ভোগ করতে পারছেন না তিনি, ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে দখল করে নিয়েছে তাদের জমি।
সরেজমিনে, মেসার্স রনি ব্রিকস গেলে ইটভাটার মালিক পক্ষ দেখাতে পারেননি সঠিক কোনো কাগজপত্র। পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ২০২৩ সালেই হয়েছে মেয়াদ উত্তীর্ণ। জেলা প্রশাসক কর্তৃক লাইসেন্সের মেয়াদও উত্তীর্ণ হয়েছে ২০১৩ সালে।
ইটভাটার ম্যানেজার নুরুল আমীন বলেন, অরিজিনাল কাগজপত্র এখানে রাখি না, তবে আমাদের সবকিছু আপডেট আছে এমন দাবি করে বলেন, সাহেবের কাছে সব আছে, আমাদের এখানে নেই।
এ ব্যাপারে ইটভাটা দু’টির মালিকদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও ইটভাটা স্থাপন আইন ২০১৩ উপেক্ষা করে রীতিমতো চলছে কার্যক্রম। পরিবেশ বিধ্বংসী এমন কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে নেই পরিবেশ অধিদফতরের তেমন কোনো তৎপরতা।
নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক ইটভাটা দু’টি দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, সরকারি কবুলিয়ত প্রাপ্ত জায়গা আমার নামে রেকর্ড হলেও যেতে পারছি না দখলে। অন্য একজন বলেন, মাটি কেটে নিয়ে যায় বাধা দিলে আমার ছেলেকে মারধর করে, ভয়ে আমরা মুখ খুলতে পারি না। আওয়ামী লীগ দেশ ছেড়ে পালালেও তাদের ক্ষমতা বহাল তবিয়তে আছে এখনও, বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ ইটভাটা।
তারা আরও জানান, ভাটা আমাদের সর্বনাশ করেছে। ভাটার কারণে গাছে কোনো ফল ধরে না। ভাটার জ্বালানো কয়লার ঝাঁঝাল গন্ধে শ্বাস নিতে খুব কষ্টকর হয়ে পড়ে। বিশেষ করে বাচ্চাদের ঠান্ডাজনিত রোগ লেগেই থাকে। কিন্তু কাকে বলব ভোগান্তির কথা। আমরা ইটভাটা বন্ধের জোর দাবি জানাচ্ছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইসরাতুন্নেছা এশা অবিলম্বে এ ইটভাটা বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ইটভাটায় হেক্টর হেক্টর কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে, এতে কৃষকের সব ইনভেস্ট জলে যাচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফজলে রাব্বি বলেন, নাজিরপুরে দু’টি ইটভাটা রয়েছে। একটিতে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আমরা রনি ব্রিকসের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে, এবং অন্যের জায়গা দখল করছে। আমরা উক্ত ইট ভাটায় আবারও অভিযান পরিচালনা করব।
প্রতিনিধি/এসএস