বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

নদী ভাঙন: এখনও দুর্ভোগ কাটেনি উপকূলবাসীর

গাজী ফারহাদ, সাতক্ষীরা
প্রকাশিত: ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩০ এএম

শেয়ার করুন:

loading/img

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার খোলপেটুয়া নদীর ভেঙে যাওয়া বাঁধটি দীর্ঘ ৪ দিন পর শুক্রবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে জিও টিউবের মাধ্যমে রিংবাঁধ দিয়ে পানি আটকাতে সক্ষম হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফলে লোকালয়ে নদীর জেয়ারের পানি প্রবেশ বন্ধ হওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। তবে ৫দিন আগে ভেঙে যাওয়া অংশ দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে ১১টি গ্রাম প্লাবিত হয়। পানিবন্দি হয়ে পড়ে ২০ হাজার পরিবার। সকাল থেকে নদীর ভাঙন এলাকা দিয়ে দুর্গত এলাকার পানি ভাটিতে নদীতে নামতে থাকে। তবে এখনও বসত বাড়িতে, উঠানে, আঙিনায়, মাঠে-ঘাটে পানি জমে থাকায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। এখনও কৃষকের স্বপনে বোনা পাকা ধান ও মাছের ঘের তলিয়ে থাকায় সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে উপকুলবাসী।

thumbnail_1000206344


বিজ্ঞাপন


গত ৩১ মার্চ সকালে ঈদ নামাজের পরপরই সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর আওতাধীন ৭/২ পোল্ডারের আনুলিয়া ইউনিয়নের বিছট এলাকায় খোলপেটুয়া নদীর তীব্র জোয়ারের প্রবল স্রোতে দুইশত মিটার বেড়িবাঁধ নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে আনুলিয়া, বিছট, নয়াখালী, বল্লবপুর, বাসুদেবপুর, চেচুয়া, কাকবাসিয়া, পারবিছটসহ পাশ্ববর্তী ১১ গ্রাম প্লাবিত হয়। ফলে পানিবন্দী হয়ে পড়ে প্রায় ২০ হাজার পরিবার। এতে উপকূলবাসীর ঈদ আনন্দ ম্লান হয়ে যায়। এলকাবাসী মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে স্বেচ্ছা শ্রমে বাঁধ নির্মাণে ঝাপিয়ে পড়ে। কিন্তু তীব্র জোয়ারে বাঁধটি সংষ্কার করতে ব্যার্থ হয় তারা। ঘটনার দুই দিন পর বাঁধ মেরামতে নামে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তারা খোলপেটুয়া নদীতে বল গ্রেডারের মাধ্যমে জিও টিউবের মধ্যে পাইপ দিয়ে বালি ভরে বিকল্প একটি রিংবাঁধ তৈরি শুরু করে। সেনাবাহিনীও মাঝে মধ্যে কাজে অংশ নেন। এর ফলে দীর্ঘ ৫ দিনের মাথায় শুক্রবার দুপুরে ৩২০ মিটার রিংবাঁধ দিয়ে লোকালয়ে পানি আটকাতে সক্ষম হয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফলে দুপুর থেকে লোকালয়ে পানি প্রবেশ বন্ধ হয়ে যায়। এতে স্বস্তি ফেরে এলাকাবাসীর মধ্যে।

thumbnail_1000206345

আরও পড়ুন

তিন দিনেও সম্ভব হয়নি বেড়িবাঁধ সংস্কার, প্লাবিত ঈদ আনন্দ

আনুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুস জানান, খোলপেটুয়া নদীর বিছটের ২০০ মিটার ভেঙে যাওয়া বাঁধ দীর্ঘ ৫ দিনের মাথায় পানি উন্নয়ন বোর্ড, এলাকাবাসী, সেনাবাহিনীসহ সবার প্রচেষ্টায় বিকল্পভাবে জিওটিউবের মাধ্যমে ও রিংব্যাগ ফেলে রিংবাঁধটি শক্রবার দুপুর ১টার দিকে মেরামত করতে সক্ষম হওয়া গেছে। এতে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।


বিজ্ঞাপন


thumbnail_1000207307

তিনি আরও জানান, ৩১ মার্চ বাঁধ ভেঙে ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। ৬ হাজার বিঘা মৎস্য ঘের প্লাবিত হয়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। আর কৃষকের ১২০০ বিঘা জমির পাকাধান ও সবজিখেত পানিতে তলিয়ে তা নষ্ট হয়ে গেছে। এলাকায় খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকে বেড়িবাঁধের ওপরে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন জাপন করছে। তবে সকাল থেকে নদীর ভাঙন এলাকা দিয়ে দুর্গত এলাকার পানি ভাটিতে নদীতে তীব্র বেগে নামতে থাকে। দুপুরে রিংবাঁধটি সম্মন্ন হলেও এখনও বসত বাড়ির আঙিনায়, মাঠে-ঘাটে পানি জমে থাকায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। এখনও কৃষকের বোনা স্বপনে পাকা ধান, বিভিন্ন শাক-সবজি ও মাছের ঘের তলিয়ে থাকায় সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে উপকুলবাসী।

thumbnail_1000207303

এদিকে এখন বসত বাড়িতে পানি থৈ থৈ করায় অনেকে বাড়ি ঘরে রান্না করতে না পেরে বেড়িবাঁধে অবস্থান নিয়েছে। বাঁধভাঙা দুযোর্গে এলাকায় তীব্র খাবার পানি সংকট দেখা দিয়েছে।

thumbnail_1000207306

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সাখায়াত হোসেন জানান, দীর্ঘ চারদিন প্রচেষ্টার পর অবশেষে ভাঙন কবলিত এলাকায় শুক্রবার দুপুরে ৩২০ মিটার এলাকাজুড়ে রিংবাঁধ দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ আটকাতে সক্ষম হওয়া গেছে। এতে নদী ভাঙন দুর্যোগের হাত থেকে রেহায় পেয়েছে উপকূলবাসী। বাঁধের ওপরে সেকেন্ড লেয়ার ও থার্ড লেয়ারের কাজ শেষ হতে আর দু’দিন সময় লেগে যাবে। এরপর সেখানে মাটি ফেলার কাজ করে বাঁধটি স্থায়ী রূপ দেওয়া হবে। আর পরবর্তীতে দুর্গতদের সুরক্ষায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে কাজ করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে হয়ত আরও দু’বছর সময় লাগতে পারে।

thumbnail_1000207304

এদিকে টেকসই বেড়িবাঁধের দাবিতে বেলা সাড়ে ১০টার সময় ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে কয়েক শতাধিক এলাকাবাসী দুর্নীতিমুক্ত টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে বিভিন্ন প্লাকার্ড হাতে নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।

thumbnail_1000207305

এদিকে মৎস্য বিভাগ ও কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, গত ৩১ মার্চ খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে জোয়ারের লোনা জলে ভেসে গেছে প্রায় ৫০ কোটি টাকার ঘের মাছ। আর ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আর ১০ কোটি। তবে এ অবস্থায় এলাকার জানমাল রক্ষায় খুব দ্রুত টেকসই নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন উপকূলবাসী।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর