বরগুনার বেতাগীতে চিকিৎসক শূন্যতায় বন্ধ করা হয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আন্তঃবিভাগ। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক শূন্য হওয়ায় গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে সেবা কার্যক্রম সীমিত করার পর কোনোমতে জরুরি বিভাগের কার্যক্রম চললেও বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ৩ দিন ধরে আন্তঃবিভাগের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে রোগীরা।
জানা গেছে, চিকিৎসক সংকটে পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে সেবা কার্যক্রম সীমিত করে উপজেলাস্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের দেয়ালের গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সাটিয়ে দেওয়া হয়েছে এই গণবিজ্ঞপ্তি। এতে উল্লেখ করা হয়েছে-‘ অনিবার্যকারণবশত ডাক্তার না থাকার কারণে আন্তঃবিভাগে ভর্তিসহ সব কার্যক্রম বন্ধ আছে। জরুরি বিভাগে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এবং বহির্বিভাগে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সেবা কার্যক্রম চালু থাকবে। আশা করি এ অবস্থা সাময়িক, অবস্থার উত্তরণ হলেই পুরোদমে সেবা চালু হবে।’ তাছাড়া অন্য আরেকটি গণবিজ্ঞপ্তিতে ‘চিকিৎসক না থাকার কারণে পুলিশ কেস (মারামারি) রোগীদের বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মেডিকেল সার্টিফিকেট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সুতরাং অনুগ্রহপূর্বক অন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে পুলিশ কেস এন্ট্রি করুণ এবং প্রয়োজনে ভর্তি থাকুন। এরকমেরই অনুরোধে করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৮ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসক বলতে বর্তমানে কর্মরত রয়েছে মাত্র ১ জন ডেন্টাল সার্জন। এখানে গাইনি ও প্রসূতি, শিশু, চর্ম ও যৌনসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ১০টি পদ খালি। শূন্য রয়েছে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ও প্যাথলজি বিশেষজ্ঞের পদ। নেই ডেন্টালের চিকিৎসা সরঞ্জাম। স্বাস্থ্য সহকারী ও সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শকসহ ১৪ জন মাঠকর্মীরও পদও শূন্য।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে আরও জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে ২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ঢাকা থেকে মেডিকেল অফিসার ডা. তারিনা খান, ওই বছরের ১৮ ডিসেম্বর প্যাথলোজিস্ট হিসাবে স্বাস্থ্য অধিদফতর ঢাকা থেকে ডা. মানা শায়ন্তা ঘোষকে পদায়ন করা হয়। বছরের ২৭ ফ্রেরুয়ারি বরিশাল শের-ই- বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে আরএমও ডা. মনিরুজ্জামান ও সহকারী সার্জন ডা. রাবীন্দ্র নাথ সরকারসহ বিভিন্ন সময় বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়।
বিজ্ঞাপন
তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ডা. আইরিন আলম, ডা. মাহফুজা আক্তার ও মো. আবু সালেহ ইদ্রিসকে নতুন করে ৬ ফ্রেরুয়ারি পদায়ন করা হয়েছে। বদলির আদেশে ৩ কর্মদিবসের মধ্যে তাদের যোগদানের কথা বলা হয়েছে। মানা শায়ন্তা যোগদানের পর ওই দিন ছাড়া আর কর্মস্থলে ফেরেনি। আর এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বাকিরা তো হাসপাতালেই আসেননি।
শনিবার (৮ মার্চ) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আন্তঃবিভাগের সেবা কার্যক্রম বন্ধ, রোগী না থাকায় পড়ে রয়েছে শূন্যে বেড। জরুরি বিভাগে বাহির থেকে উদ্ধার করা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের চিকিৎসক ও একজন বিডিএস দিয়ে কোনোমতে স্বাস্থ্যসেবা চলছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের অভাবে মেডিকেল অফিসারের পরিবর্তে রোগীদের সামলাচ্ছেন একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার। তিনি বলেন, চিকিৎসক না থাকায় প্রতিদিন ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত থাকি। এতে খুব কষ্ট হয়।
সুশাসনের জন্য নাগরিক বেতাগী উপজেলা কমিটির সভাপতি সাইদুল ইসলাম মন্টু বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আন্তঃবিভাগের সেবা কার্যক্রম বন্ধ বন্ধ হওয়ায় অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে যেতে হয় বিভাগীয় শহর বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এতে রোগীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আর এত অর্থ খরচ করে উপজেলার গরিব ও অসহায় রোগীদের কোনোভাবেই চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। তাই তারা চিকিৎসার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
উপজেলার করুনা গ্রামের আতাহার হোসেন বলেন, সম্প্রতি আমার স্ত্রীকে এই হাসপাতালে নিয়েছিলাম। কিন্তু প্রয়োজনীয় চিকিৎসকের অভাবে তাকে চিকিৎসা করাতে পারিনি। অবশেষে বরিশালে গিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে হয়েছে, যা ব্যয়সাধ্য ছিল।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়্যিদ মুহাম্মদ আমরুল্লাহ বলেন, পদায়নকৃত চিকিৎসকরা যোগদান করলে আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে আন্তঃবিভাগ চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চিকিৎসকের অভাবে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে এর আগ থেকেই হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম সীমিত করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট চলছে। প্রতিমাসেই শূন্যপদের চাহিদা পূরণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদা পত্র পাঠানো হয়।
প্রতিনিধি/এসএস