সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

মসুর ডাল চাষে কৃষকের ১২ আনাই লাভ

কাজী তানভীর মাহমুদ, রাজবাড়ী
প্রকাশিত: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:২৪ পিএম

শেয়ার করুন:

মসুর ডাল চাষে কৃষকের ১২ আনাই লাভ

৬৫ বছর বয়সী কৃষক গফুর কাজী। রাজবাড়ী জেলার শহীদওহাবপুর গ্রামের প্রান্তিক পর্যায়ে একজন আদর্শ কৃষক। চলতি মৌসুমে নিজের ৫ বিঘা জমিতে করেছেন উচ্চফলনশীল বারি মসুর-৮ এর আবাদ।

গফুর কাজীর মত জেলার প্রায় ৭ হাজার কৃষক অনান্য ফসলের সঙ্গে মসুর ডালের আবাদ করেছেন।


বিজ্ঞাপন


রাজবাড়ী জেলার মাটি অধিক উর্বর হওয়ায় গত বছরের তুলনায় এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। অল্প পরিশ্রমে কম সেচ, সার লাগায় ধান, গম, পাটের চেয়ে বারি মসুর- ৮ আবাদে মিলছে অধিক সুফল। খরচের তুলনায় ৩ গুণ লাভে পরিবারের আর্থিক উন্নয়ন হচ্ছে প্রান্তিক পর্যায়ের চাষিদের।

রাজবাড়ী কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে রাজবাড়ী জেলার ৩ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত বারি মসুর- ৮ আবাদ হয়েছে। বিঘা প্রতি ৮ থেকে ১২ মণ মসুর ডাল উৎপাদের আশা করছে কৃষি বিভাগ।

গত বছর রাজবাড়ী জেলায় ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে মসুর ডাল উৎপাদন হয়েছিলো ৪ হাজার ৫৫০ মেট্রিক টণ। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪৫ কোটি টাকা।

সরেজমিনে শহীদওহাবপুর ইউনিয়নের ফসলী মাঠে দেখা যায়, মসুর ডালের ক্ষেতে পরিচর্যার কাজ করছেন কয়েকজন কৃষক।


বিজ্ঞাপন


এ সময় কৃষক গফুর কাজী বলেন, আগে দেশি জাত চাষ করতাম। বিঘায় ফলন হতো ৩ থেকে ৪ মণ। এ বছর ৫ বিঘা জমিতে বারি মুসুর-৮ চাষ করেছি। বারি জাতের ফলন বিঘায় ৮ থেকে ১০ মণ। আমাদের যে টাকা উৎপাদনে খরচ হয় তার ৩ গুণ আয় হয়। বাজারে মসুরের চাহিদা অনেক বেশি। তাছাড়া দামও তুলনামূলক ভালো। এজন্য মুসুর চাষে চাষিদের আগ্রহ একটু বেশিই দেখা যায়। এ বছর আবহাওয়া মোটামুটি ভালো থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। সেই সঙ্গে দামও ভালো পাবো বলে আশা করি।

কৃষাণী মমতাজ বেগম বলেন, পুরুষের পাশাপাশি আমরা নারীরাও মসুর ডালের খেতে সার প্রয়োগ, সেচ, আগাছা পরিষ্কারসহ নানাবিধ কাজ করি। মসুর ডাল উৎপাদন করে পরিবারের খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করি। এতে সংসারে আগের চেয়ে স্বচ্ছলতা বেড়েছে।

আরেক চাষি রফিক খান পাটোয়ারী বলেন, আমি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে কৃষি কাজ করি। আগে দেশি জাতের মসুর আবাদ করে ভালো ফসল হতো না। এখন বারি জাতের মসুর ৮ আবাদ করে ফলন বিঘায় ৮ থেকে ১০ মণ। আমাদের যে টাকা উৎপাদনে খরচ হয় তার ৩ গুণ আয় হয়। মসুর আবাদে আমরা কৃষকেরা অধিক লাভবান।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন পরিচালক (ডাল) ড. মো. ছালেহ উদ্দিন বলেন, মসুর ডালে উচ্চমাত্রার এটা দ্রবণীয় ফাইবার থাকে যা রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এটি শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে দিয়ে ধমনীকে পরিষ্কার রাখে। মসুর ডাল খারাপ কোলেস্টেরলকে কমিয়ে বাড়িয়ে দেয় ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ। মসুর ডালে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ রয়েছে।

মাদারীপুর আঞ্চলিক ডাল গবেষণা কেন্দ্র বারি প্রকল্প পরিচালক ও পিএসও ড. সেলিম আহম্মেদ বলেন, আধুনিক জাতের বারি মসুর ৮ চাষ এবং কৃষককে নিয়মিত পরামর্শ ও প্রযুক্তির ব্যবহারবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এ কারণেই মসুর ডালের আবাদ বেড়েছে। প্রকৃতি অনুকূলে থাকায় ও কৃষি বিভাগের পরামর্শে সঠিক পরিচর্যার কারণে ফলন ভালো হয়েছে। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন কৃষি উদ্যোক্তা, সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে কর্মসংস্থানের, যা গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, রাজবাড়ী জেলায় চলতি মৌসুমে ৩ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে বারি মসুর-৮ ডাল। যার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন।

প্রতিনিধি/টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর