শুক্রবার জুমার নামাজ শেষ হতে না হতেই মেহমানখানায় একে একে ভিড় জমাতে থাকেন শহরের দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ। মাদুর পেতে সেখানে সারিবদ্ধভাবে বসে পড়েন তারা। তাদের কাছে খাবার ও পানি নিয়ে পৌঁছে দেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। মেহমানদের মতোই আপ্যায়ন করা হয় তাদের। সবাই পেটপুরে খাবার খেতে পারেন।
প্রায় দেড় বছর ধরে চলছে মেহমানদারি। যাদের খোঁজ কেউ রাখেন না, তাদের এক বেলা পেটপুরে খাওয়াতেই এই আয়োজন একদল যুবকের। অসহায় মানুষদের আপ্যায়নে সপ্তাহের শুক্রবারকে বেছে নিয়েছেন তারা। ব্যতিক্রমী এই আয়োজন চোখে পড়ে নড়াইল পৌর শহরের পুরাতন বাস টার্মিনাল সংলগ্ন হাসিব প্লাজার সামনে। হাসিব প্লাজার কয়েকটি দোকানের মালিক ও তাদের বন্ধুরা মিলে করেন এই আয়োজন।
বিজ্ঞাপন
![]()
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, হাসিব প্লাজার নিচে সরদার ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের সামনে সকাল থেকে মেহমানদের আপ্যায়নের ব্যস্ততা চলছে। বাজার করে আনার পর সেগুলো ধুয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছেন কয়েকজন। তারপর তিনটি বড় বড় হাঁড়িতে শুরু হয় রান্নার কাজ। প্রতি শুক্রবারে এখানে এসে বিনা পারিশ্রমিকে রান্না করে দেন তারা।
আয়োজকরা বলেন, গত ৭১ সপ্তাহ ধরে মেহমানদারি করছেন তারা। তাদের অতিথির শহরের ভিক্ষুকসহ বিভিন্ন পেশার দরিদ্র মানুষ। প্রথম দিকে মেহমানের সংখ্যা ছিল ২০-৩০ জন। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০০ থেকে ২৫০ জন। মেহমানখানায় প্রতি শুক্রবার ভিন্ন ভিন্ন খাবারের আয়োজন করা হয়। পোলাও, বিরিয়ানি ও সাদা ভাতের সঙ্গে মাংস। আবার কোনোদিন রান্না হয় খিচুড়ি-মাংস।
![]()
বিজ্ঞাপন
লাইলি বেগম নামের এক ভিক্ষুক নারী বলেন, আমাদের ভালো ভালো খাবার খেতে দেয়। যত্নে কোনো ত্রুটি করে না। দোয়া করি, আল্লাহ যেন তাদের খাওয়ানোর তৌফিক দান করে, আমরা খেতে পারি।
ভ্যানচালক রকি মোল্যা বলেন, এখানে গোশত, বিরিয়ানি, পোলাও খেতে দেয়। আমাদের মতো গরিব মানুষেরা সচরাচর এত ভালো খাবার খেতে পায় না। তাই প্রতি শুক্রবারে এখানে খেতে আসি।
শহরে ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করে কোনোমতে চলে শেখ শাকিবুর রহমানের সংসার। চোখে দেখতে পান না, কানেও কম শোনেন। বাড়িতে ভালো খাবার জোটে না। তাই ছোট দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে একবেলা ভালো খেতে এখানে এসেছেন। তিনি বলেন, এখানে আসি খাবারের জন্য, তৃপ্তি নিয়ে খেতে পারি।
![]()
আয়োজকদের একজন ব্যবসায়ী নাজমুল ইসলাম জুয়েল। তার দোকানের সামনেই মেহমানদারির আয়োজন করা হয়। তিনি বলেন, আমাদের চারপাশে অনেক গরিব, অসহায় ও এতিম মানুষ আমরা দেখতে পাই। যাদের দুই ঈদ ছাড়া মাংস খাওয়া জোটে না। তাদের কেউ দাওয়াত করে খাওয়ায় না। এই চিন্তাভাবনা করে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নিই মানুষকে সপ্তাহে একবেলা খাওয়ানোর। নিজেরা অর্থ দিয়ে একটা ফান্ড তৈরি করে প্রায় এক বছর ধরে এই কার্যক্রম চালাচ্ছি।
প্রতিনিধি/এসএস

