রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

নলেন গুড়ের সন্দেশ, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে বিদেশে

মো.হাবিবুর রহমান, নড়াইল
প্রকাশিত: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৪৬ এএম

শেয়ার করুন:

নলেন গুড়ের সন্দেশ, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে বিদেশে

সুস্বাদু খাবার ‘নলেন গুড়ের সন্দেশে’র নাম শুনলেই মনে আসে সারাদেশে বিখ্যাত নড়াইলের নাম। এ জেলার ঐতিহ্যের ধারক খেজুর গাছের রস থেকে তৈরি নলেন গুড় দিয়ে তৈরি করা বিশেষ মিষ্টিকে বলা হয় ‘নলেন গুড়ের সন্দেশ’। নড়াইলে জেলার ঐতিহ্যবাহী এবং সবচেয়ে সুস্বাদু আর জনপ্রিয় খাবারের নামই হলো নলেন গুড়ের সন্দেশ।

'খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধো মন'...ভবা পাগলার গানে লুকিয়ে থাকা খেজুর গুড়ের আবেশ চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে শীতের প্রাক্কালে। হিমের পরশ বইতে শুরু করলেই সে গুড় শোভা পায় বঙ্গদেশের রসুইঘরে। খেজুরের রস দিয়ে তৈরি এই গুড় পরিচিতি পায় নতুন গুড় কিংবা নলেন গুড় হিসেবে।


বিজ্ঞাপন


thumbnail_IMG_20250112_210036

বাঙালির ইতিহাসে নলেন গুড়ের বন্দনা নতুন নয়। সেই দ্বাদশ শতাব্দীতে শ্রীধর দাস তার সংস্কৃত কাব্যগ্রন্থ ‘সদুক্তিকর্ণামৃত’-এ স্তুতি করেছিলেন নতুন গুড়ের। তাছাড়া নীহাররঞ্জন রায় ‘বাঙালির ইতিহাস, আদি পর্ব’ গ্রন্থেও উল্লেখ করেছেন হেমন্তের নতুন গুড় তথা নলেন গুড়ের কথা।

বলা যায়, খেজুর গাছ থেকে সংগৃহীত রস দিয়ে তৈরি নলেন গুড় শত শত বছর ধরে বহন করে চলেছে ইতিহাস। আর ইতিহাসের উত্তরাধিকারী রূপে নড়াইলের ‘কার্তিক কুন্ডু মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’ ৫৫ বছরের বেশি সময় ধরে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে নলেন গুড়ের প্যারা সন্দেশ, নলেন গুড়ের ক্ষীরের সন্দেশ, ক্ষীরের চমচম, কাঁচাগোল্লা, কালোজামসহ বিভিন্ন স্বাদের মিষ্টি। যেগুলোর স্বাদ আর গন্ধ দেশের মাটি অতিক্রম করে পা রেখেছে দূর পরবাসেও।

thumbnail_IMG_20250112_210056


বিজ্ঞাপন


নড়াইল সদরের রূপগঞ্জ বাজারের কার্তিক কুন্ডু মিষ্টান্ন ভাণ্ডার ছাড়াও ও পরিতোষ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, লক্ষীপাশা পুরাতন খেয়াঘাট সংলগ্ন সাহ সুইটস এবং লোহাগড়া বাজারের সুরেন্দ্র সুইটস জেলার বেশ কয়েকটি মিষ্টির দোকানে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে নলেন গুড়ের সন্দেশ।

জানা যায়, শীতের শুরুতেই কদর বেড়েছে ‘নলেন গুড়ের সন্দেশে’র। নড়াইলের ‘নলেন গুড়ের খাঁটি সন্দেশের জুড়ি নেই। এ সন্দেশের চাহিদা শুধু দেশে নয় বিদেশেও রয়েছে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এ খাবারের গুণের কথা পৌঁছে যাচ্ছে ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ফ্রান্স, ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, মালোয়শিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদি-আরব, দুবাইসহ মধ্য প্রাচ্যের প্রভৃতি দেশে। এ অঞ্চলের প্রবাসীদের কাছে সরবরাহ হয়ে থাকেন এ গুড়ের সন্দেশ। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশ ভারতে প্রচুর পরিমাণে সরবরাহ করা হচ্ছে।

thumbnail_IMG_20250112_204915

শীত মৌসুমের শুরুতে খেজুরগাছিদের কাছ থেকে দোকানদারেরা খাটি নলেন রস সংগ্রহ করে থাকেন। সেই রস থেকেই বিশেষ নলেন গুড় তৈরি হয়। আর এ গুড় থেকেই তৈরি হয় সন্দেশ। তাই একে বলা ‘নলেন গুড়ের সন্দেশ। প্রতি কেজি সন্দেশ ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গড়ে প্রতিদিন কোনো কোনো দোকানে ৩-৪ মণ সন্দেশ বিক্রি হয়ে থাকে। আর স্থানীয় বিয়ে, নববর্ষসহ বিভিন্ন উৎসবে এই মিষ্টির দেখা মিলবেই। এছাড়াও জেলার বাইরে থেকে আসা বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়রা এলেও একবার এ মিষ্টির স্বাদ যেন নিতেই হয়। বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান ছাড়াও, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ফলাফলের দিন ওইসব দোকানে রীতিমতো মিষ্টি কেনার হিড়িক পড়ে যায়। এছাড়া সন্দেশ খেতে চলে আসে ঢাকাসহ আশপাশের জেলার ভোজনবিলাসী মানুষজন। এ সন্দেশ বিদেশেও সমাদৃত হচ্ছে। প্রবাসীদের কাছে এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

thumbnail_IMG_20250112_205032

‘নলেন গুড়ের সন্দেশ’ কিনতে আসা ফয়সাল মোল্যা নামের এক ক্রেতা ঢাকা মেইলকে জানান, তার ভাইদের পরিবার থাকেন ফ্রান্সে। তাদের কাছে পাঠানোর জন্য এ মিষ্টি কিনতে এসেছেন। গুণগত মান ভালো হওয়ায় এ মিষ্টি খেয়ে তৃপ্তি পান তারা।

আরও পড়ুন

শীতে উত্তরাঞ্চলের জনপ্রিয় খাবার কুমড়া বড়ি, যায় দেশের বাইরেও

চট্টগ্রামে কর্মরত মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মো. শামীমুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে জানান, তিনি পেশায় একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার, থাকেন চট্টগামে। ছুটি কাটিয়ে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় কিনতে এসেছেন ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি ‘নলেন গুড়ের সন্দেশ’। বাসায় পরিবারের সদস্যদের জন্য কিনছেন এ ‘নলেন গুড়ের সন্দেশ’। মূলত ছোটবেলা থেকেই নড়াইলের রূপগঞ্জ বাজারের নলেন গুড়ের সন্দেশ খাচ্ছেন তিনি।

thumbnail_IMG_20250112_210020

এ প্রসঙ্গে সাহা সুইটসের স্বত্বাধিকারী অভিজিৎ সাহা ঢাকা মেইলকে বলেন, বংশ পরম্পরায় ৫০ বছরেরও অধিক বেশি সময় ধরে এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছি আমরা। ১৯৭১ সালে আমার ঠাকুর দাদা সচিন্দ্রনাথ সাহা নলেন গুড়ের সন্দেস তৈরি করে বিক্রি করতেন। বাজারে প্রচুর চাহিদা ও সুনাম থাকায় ঠাকুর দাদার মৃত্যুর পর দাদি নমিতা রাণী সাহা হাল ধরেন। নলেন গুড়ের সন্দেশ তৈরি ও বিক্রি আমাদেরও পৈত্রিক ঐতিহ্য বহন করে। অতুলনীয় স্বাদ ও গুণগত মানের কারণে এই মিষ্টি ধরে রেখেছে তার ঐতিহ্য। দীর্ঘ সময়েও ভাটা পড়েনি চাহিদায়। এখন এলাকার চাহিদা মিটিয়ে এই মিষ্টি যাচ্ছে বিদেশেও।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর