পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার ৩ নম্বর দেউলবাড়ী দোবড়া। রাস্তা ঘাটহীন বিচ্ছিন্ন একটি অবহেলিত ইউনিয়ন। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে এই ইউনিয়নের অবস্থান। যেখানে গ্রাম থেকে বের হওয়ার নেই কোনো রাস্তা। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট বড় অসংখ্য খাল।
তাই এ জনপদের শিক্ষার্থী ও জনসাধারণের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নৌকা। স্কুলগামী কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে বছরের বারমাসই বৈঠা বেয়ে নৌকায় স্কুলে যাতায়াত করে। খালের পাড় ধরে বয়ে গেছে সরু মেঠো পথ। বর্ষা মৌসুমে এসব মেঠো পথ পানির নিচে নিমজ্জিত থাকে। যা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। শীত মৌসুমের শেষদিকে এ মেঠোপথ দিয়ে চলাচল করা গেলেও বাঁকে বাঁকে রয়েছে অগণিত বাঁশের সাঁকো। বিল অঞ্চলের মানুষের ধারণা জন্মেছে বিলে রাস্তা পাবে কোথায়। খালই তাদের রাস্তা। নৌকাই তাদের গাড়ি।
বিজ্ঞাপন
এ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে রয়েছে সোনাপুর উচ্চ বিদ্যালয়, বিলডুমরিয়া গ্রামে রয়েছে, ডুমরিয়া নেছারিয়া বালিকা আলিম মাদরাসা ও ডুমরিয়া নেছারিয়া বালক আলিম মাদরাসা, এছাড়া আরও রয়েছে কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার জন্য নেই কোনো উপযুক্ত রাস্তা। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকার জনসাধারণকে। শীতে নদী, খাল কচুরিপানায় এমনভাবে আটকে থাকে যাতে নৌকা কিংবা ট্রলারযোগেও শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাবার কোনো উপায় থাকে না। অথচ এ বিল অঞ্চলে রয়েছে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী যা আগামী দিনের দেশের ভবিষ্যৎ। যোগাযোগের অভাবে শুরুতেই ঝড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে এসব কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। দেশ এগিয়ে গেলে ও যাতায়াত সমস্যার কারণে এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণ করার যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি।
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, আমাদের স্কুলে আসতে খুবই কষ্ট হয়। নৌকায় চড়ে স্কুলে আসি। কখনও কখনও বইখাতা ভিজে যায়। তাছাড়া নদীতে পড়ে যাওয়ার ভয়ও থাকে।
বিজ্ঞাপন
ইউনিয়নটির বিলডুমরিয়া গ্রামের আবদুল কাদের শেখ জানান, আমাগো বিলে জন্ম, বার মাস নৌকা ব্যবহার করতে হয়। আমাগো নৌকা ছাড়া উপায় নেই, নৌকাই আমাগো রাস্তা।
এ ব্যাপারে বিলডুমরিয়া গ্রামের অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক আয়ুব আলী তালুকদার জানান, শৈশব থেকে দেখে আসা যাতায়াতের কষ্ট যেন শেষ হয়নি আজও। আমাদের জীবন অনেক কষ্টের। বাজার-সদাই থেকে শুরু করে চিকিৎসা, শিক্ষা সবকিছুর জন্যেই আমাগো পাড়ি দিতে হয় অথৈ জল। আর এতে আমাদের একমাত্র বাহন হলো ডিঙি নৌকা। এক কথায় আমাদের জীবন নির্ভর করে ছোট্ট ডিঙির নৌকার ওপর।
সোনাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সরোয়ার হোসেন বলেন, উপজেলার প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকা দেউলবাড়ী দোবড়া ইউনিয়নের আওতাধীন বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখানে শিক্ষার্থীদের নৌকা ট্রলার ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের কোনো মাধ্যমে নেই। যদি সরকার রাস্তা নির্মাণে উদ্যোগী হয় তাহলে কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ সার্বিক উন্নয়নের পথ তৈরি হবে বলে আমার বিশ্বাস।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরূপ রতন সিংহ বলেন, আমাদের যদি সরকারিভাবে প্রকল্প নেওয়ার সুযোগ থাকে তাহলে অবশ্যই বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করব।
প্রতিনিধি/এসএস