সবুজ পাতার আড়ালে প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে হলুদ রঙের অসংখ্য কমলা। পাতার ফাঁকে উঁকি দেওয়া কমলার এমন দৃশ্য চোখ জুড়ায়। ইউরোপ কিংবা কাশ্মীরের কমলার বাগানগুলোতে এমন চিত্র হরহামেশা দেখা গেলেও বাংলাদেশে তেমন এর দেখা মিলে না। তবে, বাংলাদেশে এমন চিত্র দেখা এখন সময়ের ব্যাপার। তাই তো অভাবনীয় এক কমলার বাগান করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বাঁশতৈল ইউনিয়নের পাঁচগাও গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে যুবক দেলোয়ার হোসেন দিলু।
বিজ্ঞাপন
তিনি তার নিজস্ব অল্প জমিতে মিশ্র ফলের বাগান শুরু করলেও এখন তা দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৬ একর জমিতে। নিজের ফলের বাগানের নাম দিয়েছেন দিলু অ্যাগ্রো ফার্ম। চায়না কমলা আবাদ করে বর্তমানে ব্যাপক সাফল্যের মুখ দেখেছেন এই দিলু। স্থানীয়সহ আশপাশের উপজেলা ও জেলার বিভিন্ন বিভিন্ন এলাকা থেকে এই কমলা গাছের বাগান দেখতে ভিড় করছেন লোকজন। বাগান দেখে উদ্যোক্তা হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করছেন অনেকে।
কমলা চাষি দেলোয়ার হোসেন দিলু বলেন, প্রথমে ব্যবসার পাশাপাশি অল্প পরিসরে বিভিন্ন ফলের বাগান শুরু করি। করোনার সময় আমার ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তারপর থেকে ফলের বাগানে আরও মনোযোগ দিতে থাকি। নিজ জমিতে শুরু করি ফলের বাগান। নিজের ফলের বাগানের নাম দেই দিলু অ্যাগ্রো ফার্ম। আমার বাগানটি আসলে মিশ্র ফল বাগান। বাগানে মূল চাষ ছিল চায়না কমলা চাষ। এখন সাড়ে ৬ একর জমিতে রয়েছে ফলের বাগান।
বিজ্ঞাপন
উদ্যোক্তা দিলু বলেন, এরমধ্যে এই ৬ একর জমির মধ্যে ২০১৯ সালে ডিসেম্বর মাসে অল্প পরিসরে চায়না কমলা গাছের চারা রোপণ করি। শুরুটা কিছু সমস্যা হলেও পরে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সঠিক পরিচর্যা করায় ২০২২ সালে গাছে চায়না কমলা আসতে শুরু করে। চায়না কমলা আবাদে বছরে সাড়ে ৩ লাখ টাকা থেকে ৪ লাখ টাকা আয় করতে পারছি। খরচ বাদে তিন বছরে আয় করছি সাড়ে ৯ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন
তিনি আরও বলেন, আমার বাগানে প্রতিনিয়ত ৪ জন শ্রমিক কাজ করছেন। তাদের জন প্রতি ৪৫০ টাকা দিতে হয়। এতে করে ফল বাগানের মাধ্যমে কিছু লোকের বেকারত্ব দূর হচ্ছে। এছাড়া দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই আসছেন আমার এই চায়না কমলার বাগান দেখতে। আমার বাগানের কমলা খুবই সুস্বাদু ও মিষ্টিতে ভরপুর। এ বছর ফলন ভালো হয়েছে। ১৪০টি কমলা গাছ থেকে প্রতিদিন ২০ থেকে ৪০ কেজি কমলা তুলতে পারছি। প্রতি কেজি কমলা ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কমলা বাগান দেখতে আসা গাজীপুরের কালিয়াকৈর চন্দ্রার এলাকার রিপন মাহমুদ বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকের মাধ্যমে দেলোয়ার ভাইয়ের বাগানের বিষয়টি জানাতে পারি। বাগানে এসে কমলার ফলন দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি। আমার বাড়ির পাশে কিছু খালি জমি পড়ে আছে। আমারও ইচ্ছে আছে- দেলোয়ার ভাইয়ের মতো আগামীতে এ রকম কমলা ফলের চাষ করা। ফলে আমাদের মতো তরুণ ও যুবকদের বেকারত্ব দূর হবে এবং এর পাশাপাশি এলাকার অনেকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মাহমুদা খাতুন বলেন, দেলোয়ার হোসেন দিলু বাগানে ১৪০টি চায়না কমলা গাছ রয়েছে। এই কমলা বাগানটি করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরামর্শগত সহায়তা প্রদান করেছি। এখানে যিনি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আছেন তিনি চাষি দেলোয়ারকে সবসময় সহযোগিতা করেছেন। তিন বছরে অনেক ভালো ফলন এসেছে। আশা করছি, সামনে আরও ফলন বাড়বে। যদি কেউ কমলাসহ অন্যান্য ফল বাগান করতে আগ্রহী হন তাদেরকেও কৃষি বিভাগ থেকে সবধরণের সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
কমলা চাষি ও উদ্যোক্তা যুবক দেলোয়ার হোসেন দিলু।
প্রতিনিধি/এসএস