শীত মৌসুম শুরুতেই কক্সবাজারে পর্যটকের আগমন বৃদ্ধি পেয়েছে। নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি এই ৩ মাস কক্সবাজারে পর্যটনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়। এখন প্রতিদিন ৫০-৬০ হাজার পর্যটক ভ্রমণে আসছেন। তবে ডিসেম্বর মাসে গিয়ে প্রতিদিন পর্যটকের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যাবে। সবকিছু ঠিক থাকলে অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছর পর্যটক আগমন বেশি হবে এবং ব্যবসা বাণিজ্যও বেশ ভালো হতে পারে বলে মনে করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) বিকেলে সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট গিয়ে দেখা যায় হাজার হাজার পর্যটক সমুদ্রের লোনা জলে গোসল করছেন। শনিবার ছুটির দিন হওয়ায় পর্যটক ও স্থানীয়দের উপস্থিতি ছিল একটু বেশি। সমুদ্র সৈকতের নীল জলরাশি আর সোনালি বালুচরে প্রকৃতিপ্রেমীরা সময় কাটাচ্ছেন আনন্দে। শীতের আমেজ ও ছুটির মেলবন্ধন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে পরিণত করেছে পর্যটকদের মিলনমেলায়। শুক্রবার ও শনিবার সমুদ্র সৈকত থেকে শুরু করে ইনানী, হিমছড়ি, পাটুয়ারটেক, মহেশখালী আদিনাথ মন্দির, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, দরিয়ানগর, রামু বৌদ্ধ মন্দির ও টেকনাফসহ জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পটে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়।
বিজ্ঞাপন
![]()
দিনাজপুর থেকে আসা পর্যটক মোহাম্মদ ইকবাল আলী জানান, বিকেলের সমুদ্র সৈকত অনেক সুন্দর। রাতের সময় আরও মনোমুগ্ধকর। শীতের আবহ সমৃদ্ধ কক্সবাজারের পরিবেশ যে কারোই মন জুড়াবে।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক গিয়াস উদ্দিন বলেন, অনেকদিন পর কক্সবাজার এলাম। এবার ট্রেনে চড়ে আসার অভিজ্ঞতা অসাধারণ। শীতের হালকা আমেজে সৈকতে সময় কাটানো সত্যিই আনন্দদায়ক।
রাজশাহী থেকে আসা শাকিল ও মারিয়া দম্পতি জানান, সৈকত ছাড়া কক্সবাজারে দেখার মতো তেমন কিছু নেই। এখানে পর্যটন নির্ভর নতুন কিছু হওয়া উচিত। এছাড়া খাবারের দোকানগুলোতে অতিরিক্ত দাম আদায় করা হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
কক্সবাজার হোটেল অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ জানান, এখন গড়ে ৫০-৬০ হাজার পর্যটক আসছেন। এই সংখ্যা ডিসেম্বরে গিয়ে লাখ ছাড়িয়ে যাবে। আশা করা হচ্ছে এই বছর পর্যটকের সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা বাড়তে পারে।
![]()
কলিম উল্লাহ বলেন, একজন পর্যটক চাইলে সীমিত বাজেটের মধ্যে সর্বনিম্ন ৫ হাজার টাকা নিয়ে কক্সবাজার ঘুরে যেতে পারেন।
পর্যটন উদ্যোক্তা তোফায়েল আহমেদ জানান, এখন সড়ক, বিমান ও রেলপথে পর্যটকরা কক্সবাজারে আসতে পারছেন সহজেই। বিশেষ করে রেলের নতুন সংযোগ এবং রাত ১০টা পর্যন্ত বিমানের ওঠানামা পর্যটনকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছে।
কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, শীতের মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। দীর্ঘদিনের মন্দাভাব কাটিয়ে ব্যবসায়ীরা এখন আবার ভালো অবস্থানে ফিরছেন।
হোটেল দ্য কক্স টুডের জিএম আবু তালেব শাহ বলেন, বর্তমানে পর্যটকদের ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। হোটেলে বুকিং বেশ ভালো আছে । সাপ্তাহিক ছুটি ও অন্যান্য দিনগুলোতে আমাদের ব্যবসা মোটামুটি ভালো হচ্ছে। সামনে আরও ভালো সময় আসবে বলে আশা করা যায়।
![]()
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী জানান, সামনে ২/৩ মাস বেশ ভালো ব্যবসা বাণিজ্য হবে। আগত পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। পর্যটকদের পজিটিভ রিভিউ পেতে হোটেল ভাড়া, গাড়ি ভাড়া ও রেস্তোরাঁয় খাবারের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা জরুরি। এই জন্য জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে।
চৌধুরী আরও জানান, আমাদের দায়িত্ব শুধু পর্যটকদের আকৃষ্ট করা নয় বরং এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধরে রাখার উদ্যোগও নিতে হবে। পর্যটন স্পটগুলোর পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ট্যুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সৈকত ও অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রে বিশেষ নজরদারি বাড়ানো হয়। নিয়মিত টহলের পাশাপাশি সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
![]()
কক্সবাজার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ জানিয়েছেন, সৈকত ও আশপাশের পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় জেলা পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী কাজ করছেন। যানজট নিরসনে শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নয়নের চেষ্টা চলছে। এছাড়া ছিনতাই বন্ধ করতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানান, পর্যটক হয়রানি ঠেকাতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিশেষ টিম কাজ করছে। এছাড়া সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযোগ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে পর্যটকরা যে কোনো সমস্যার সমাধান পেতে পারেন।
তিনি আরও জানান, আবাসিক হোটেল ও খাবার রেস্তোরাঁয় অতিরিক্ত দাম আদায় করার অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে আগামী ১৭ ডিসেম্বর থেকে টানা সাতদিন কক্সবাজারে জমকালো আয়োজনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিচ কার্নিভাল। সাত দিনব্যাপী এ আয়োজনে থাকবে বর্ণিল আয়োজন।
প্রতিনিধি/এসএস

