বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

পাহাড়ে কফি চাষে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন ঙুইইন ম্রো

সুফল চাকমা, বান্দরবান
প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৫ এএম

শেয়ার করুন:

পাহাড়ে কফি চাষে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন ঙুইইন ম্রো

পাহাড়ে ফলদ বাগানের পাশাপাশি কফি চাষ করেছেন বান্দরবান চিম্বুক এলাকার বাসিন্দা ঙুইইন ম্রো। ভালো ফলন ও বাজারদর ভালো পাওয়ায় কফি চাষেই ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন তিনি।

একসময় আমাদের দেশে কফি পানের তেমন প্রচলন না থাকলেও বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এক মগ কফি শরীর-মনে চাঙ্গা ভাব এনে দেয়। দূর হয় ক্লান্তি। যান্ত্রিক জীবনে ক্লান্তি দূর করতে অধিকাংশ কর্মজীবীরা চুমুক তোলেন ধোঁয়া ওঠা কফির মগে।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন

জাহাঙ্গীরের বিদেশি ময়ূরের খামার, মাসে আয় অর্ধ লাখ টাকা

বিশ্বে ঠিক কত সালে এই কফি উদ্ভাবিত হয়েছিল তার তথ্য পাওয়া না গেলেও ইথিওপিয়া ও পরে ইয়েমেনে উৎপত্তি হয়েছিল বলে ধারাণা করা হয়। ১৫ শতকে  ইয়েমেনের সুফি-মঠে প্রার্থনার সময় ঘনত্বের জন্য ব্যবহার করা হলেও কফি ১৬ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বাণিজ্যিক ভূমধ্যসাগরীয়  বাণিজ্য পথের মাধ্যমে ইতালি, ১৭ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ভারতে পৌঁছে। কফিতে ক্যাফেইন থাকায় মানব দেহের ক্লান্তি দূর করতে সহায়ক বলে ধারণা করেন পুষ্টি বিদেরা। কফি একসময় শুধু শহরেই জনপ্রিয় ছিল সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে গ্রাম অঞ্চলেও সমান জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কফি, তাই চাহিদাও বেশি।

বিশ্বে নানা প্রজাতির কফি পাওয়া গেলেও বান্দরবানে অ্যারাবিকা, রোবাস্তার পাশাপাশি চাষ হচ্ছে  চন্দ্রগীরী। অ্যারাবিকা ও রোবাস্তার চেয়ে উচ্চ ফলনশীল হওয়ায় চন্দ্রগীরী কফি চাষে ঝুকছেন বান্দরবানের অনেক চাষি।

thumbnail_20241112_101854


বিজ্ঞাপন


জেলা শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রপৃষ্ট থেকে আড়াই হাজার ফুট উচ্চতায় চিম্বুক পাহাড়ে সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,  চিম্বুক পাহাড়ের রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা ইউনিয়নের  ৯ নম্বর ওয়ার্ড বাবু পাড়া এলাকার পাহাড়ে ১০ একর পাহাড়ি জমি জুড়ে আম, জাম্বুরা, ড্রাগন, লিচুর পাশাপাশি আবাদ করেছেন কফি। কফি গাছে ঝুলছে লাল সবুজের সারিসারি কাঁচা পাকা কফি চেরি। যা অজান্তেই চোখ জুড়িয়ে প্রশান্তির দোলা দেয় অবচেতন মনে।

কফি চাষি ঙুইইন ম্রো ঢাকা মেইলকে  জানান, ২০১৫ সালে তার এক আত্মীয়ের পরামর্শে  ১ হাজার চন্দ্রগীরী কফি গাছের চারা রোপণ করেন তিনি। বর্তমানে তার প্রায় ৪ হাজার চন্দ্রগীরী কফি গাছ রয়েছে। যার মধ্যে ১ হাজার গাছ থেকে বছরে প্রায় দেড় টন কফি  চেরি পাওয়া যাচ্ছে। চেরি হিসেবে যার বাজার মূল্য প্রায় ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। এই ১০ একর জমিতে চাষ করা ৪ হাজার গাছের সবগুলোতে একই সঙ্গে কফির ফলন পাওয়া গেলে বছরে অন্তত ১০ টন কফি চেরির উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল্য ১০ লাখ ২০ হাজার হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

আরও পড়ুন

সার-কীটনাশকহীন ১১ জাতের ধান চাষে সফল কৃষক মোহন

তিনি আরও বলেন, বর্ষা মৌসুমে চারা লাগানো হয়। লাগানোর পরবর্তী তিন বছর পর ফলন পাওয়া যায়। বছরে দুইবার ফলন দেয়। তবে অক্টোবর-নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে এই ফলন বেশি পাওয়া যায়। তার আবাদ করা চন্দ্রগীরী কফি গাছ লাগানোর ৩ বছর থেকে ফলন দেওয়া শুরু করেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন এই কফি গাছ পরিচর্যা করলে ৮০ বছর পর্যন্ত ভালো ফলন দেবে। এই জাতের গাছে রোগবালাই কম এবং তেমন পরিচর্যা করতেও হয় না। ফলে উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় লাভও বেশি হয়। তার বাগানের ৮০০ আম, ৪০০ ড্রাগন, ১০০ জাম্বুরা গাছ থেকে বছরে যেখানে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা পান, সেখানে অন্যান্য গাছে মাঝামাঝিতে লাগানো কফি গাছগুলোর একাংশ থেকে প্রাপ্ত চেরি থেকেই ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। সব মিলে এই কফি থেকেই ভবিষ্যতে তার ভাগ্য বদলাবে বলে প্রত্যাশা করছেন তিনি।

thumbnail_20241112_103534

কফি চাষ বিশেষজ্ঞ তৈদু রাম ত্রিপুরা ঢাকা মেইলকে জানান তিনি ১৫বছর ধরে কফি নিয়ে কাজ করছেন।  তিনি বিভিন্ন দেশে কফি চাষ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নিয়েচেন বর্তমানে তার সেই অভিজ্ঞতা চিম্বুক-রোয়াংছড়ি-রুমা এলাকার কফি চাষিদের সঙ্গে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। সারা বিশ্বের পাশাপাশি আমাদের দেশেও বেড়েছে কফির চাহিদা। উৎপাদিত কফি বিক্রিতে সিন্ডিকেট না থাকায় কৃষকেরা কফির ন্যায্য মূল্যে পেয়ে থাকেন। দেশে কফির চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ার কারণে ইথিওপিয়া-ব্রাজিলসহ বিভিন্ন দেশ থেকেও কফি আমদানি করা হয়। কফি ক্রয়-বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান নর্দান আ্যন্ড কফি রোস্ট কোম্পানির সঙ্গে স্থানীয় কফি চাষিদের সরাসরি যোগাযোগ থাকায় বান্দরবানে উৎপাদিত পাকা কফি ফল খোসাসহ প্রতি কেজি ১৭০ টাকা করে বিক্রয় করতে পারছেন। জেলার চিম্বুক এলাকা, রোয়াংছড়ি, রুমা ও লামা এলাকায় চন্দ্রাগীরি কফির চাষ হচ্ছে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন

পান চাষে ইউসুফের বাজিমাত, বছরে আয় ৬ লাখ

বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ এম এম শাহ নেওয়াজ ঢাকা মেইলকে জানান, ২০২০-২১ সাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নন বোর্ড ও তাদের সহায়তায় জেলাজুড়ে ২৫০ একর জমি জুড়ে অ্যারাবিকা ও রোবাস্তা জাতের কফির আবাদ শুরু হয়। সেই থেকে ক্রমান্বয়ে সাড়ে ৭ হাজার চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং বর্তমানে তাদের পরামর্শে ১ হাজার ৮৫০ একর জমিতে এই দুই জাতের কফির আবাদ হচ্ছে। যা থেকে একর প্রতি ৭০০ কেজি শুকনো কফির বিন পাওয়া যাচ্ছে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর