বগুড়ায় স্বাদের জন্য বিখ্যাত দই ছাড়াও আরও একটি খাবার আছে। যেটির নাম হলো আলু ঘাটি। তবে দই-এর বিষয়টি দেশজুড়ে খ্যাতি পেলেও আলু ঘাটির পরিচিতি তুলনামূলক কম। এটি শুধু বগুড়ায় নয় পাশের জেলা নওগাঁসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বা মেহমান আপ্যায়নেও রান্না হয়। বড় মাছ দিয়ে নতুন আলুর এই ঘাটি দেশের অন্য এলাকার মানুষের কাছে তেমন পরিচিত না হলেও নওগাঁ-বগুড়ার মানুষের কাছে ভীষণ পছন্দের খাবার। সাদা ভাত, পোলাও কিংবা বিরিয়ানীর সাথে পরিবেশন করা হয় সুস্বাদু এই খাবারটি। খাওয়া যায় রুটি-পরোটার সাথেও।
মূলত, শীতকালেই এই খাবারটির আদি ও আসল স্বাদ পাওয়া যায়। এই পদটি রান্নার প্রধান দুইটি জিনিস হলো— আলু এবং বড় মাছ। এই আলু আবার যেনতেন আলু না, শীতকালে বগুড়ার নতুন আলু উঠলে সেটা দিয়েই এই ঘাটি রান্না হয়। কারণ বিশেষ ধরনের এই আলু ছাড়া ঘাটির স্বাদ ঠিক জমে না। নওগাঁ-বগুড়া এলাকায় এই রান্নাটিতে ব্যবহার করা হয় সুঘ্রাণযুক্ত রাঁধুনী পাতা। এই পাতা ব্যবহারের ফলে খাবারের স্বাদ এবং গন্ধ পৌঁছে যায় অনন্য মাত্রায়। অনেক সময় ধনে পাতাও দেওয়া হয়। আরও থাকে লাল মরিচের (পাঁকা মরিচ) ব্যবহার।
বিজ্ঞাপন
এটি ডেক বা বড় পাত্রে রান্না করলেই বেশি সুস্বাদু হয়। তবে বাসা বাড়িতে হাঁড়ি কিংবা কড়াইতেও রান্না করা সম্ভব। তবে আর দেরি কেন চলুন জেনে নেওয়া যাক— মাছ দিয়ে রান্না বিখ্যাত এই আলু ঘাটির রেসিপি। অন্য মাছ দিয়েও রান্না করা যায়, তবে এখানে জানাবো রুই মাছ দিয়ে আলু ঘাটি রান্নার পদ্ধতি।
যা যা লাগবে:
• রুই মাছ মাথাসহ ৮ পিস।
• নতুন আলু এক কেজি।
• পেঁয়াজ কুচি এক কাপ।
• কাঁচা মরিচ ১০টি।
• শুকনা মরিচ ৫টি।
• আদা বাটা ২ চা চামচ।
• রসুন বাটা ২ চা চামচ।
• গোটা জিরা ২ চা চামচ।
• ভাজা জিরা গুঁড়া ২ চা চামচ।
• সাদা ও কালো এলাচ ৫টি করে।
• দারুচিনি দুই টুকরো।
• তেজপাতা ৩টি।
• লবণ স্বাদমতো।
• হলুদ গুঁড়া ১ চা চামচ।
• মরিচ গুঁড়া ১ চা চামচ।
• তেল ১ কাপ।
• ধনে পাতা কুচি পরিমাণ মতো। সম্ভব হলে রাঁধুনী পাতাও ব্যবহার করতে পারেন।
• টমেটো কুচি আধা কাপ।
রান্নার পদ্ধতি:
প্রথমে আলুগুলো সেদ্ধ করে নিয়ে ছিলে ভেঙ্গে নিবেন। অন্যদিকে কড়াইতে তেল দিয়ে প্রথমে গোটা জিরা, তেজপাতা এবং শুকনা মরিচ ফোঁড়ন দিতে হবে। এরপর পেঁয়াজ কুচি এবং কাঁচামরিচ দিয়ে ভাজতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হয়ে এলে এর মধ্যে মাছগুলো দিয়ে দিতে হবে এবং দুই পাশ হালকা করে একটু ভেজে নিতে হবে।
এরপর একে একে আদা বাটা, রসুন বাটা, হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, লবণ, টমেটো কুচি এবং গোটা মসলাগুলো দিয়ে দিতে হবে এবং সামান্য পানি দিয়ে কষাতে হবে। মাছ কষানো হয়ে গেলে এরমধ্যে সেদ্ধ করা আলুগুলো দিয়ে আবারও একটু কষিয়ে নিতে হবে।
আলু এবং মাছ কষানো হয়ে গেলে ভালোমতো নেড়ে মাছগুলো ভেঙ্গে দিয়ে ঘাটির জন্য পানি দিতে হবে। পানি দেওয়ার পরে বারবার নাড়তে হবে যেন লেগে না যায় এবং আলু-মাছ মিশে যায়। ঘাটি ঘন হয়ে আসলে নামানোর আগে ধনে পাতা কুচি এবং ভাজা জিরা গুঁড়া দিয়ে দিতে হবে।
এই তো তৈরি হয়ে গেল আলু ঘাটি। এবার পরিবেশনের পালা।
এএ