মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চাল আত্মসাতের অভিযোগ

জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল
প্রকাশিত: ২৫ জুন ২০২৪, ১২:১৩ পিএম

শেয়ার করুন:

ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চাল আত্মসাতের অভিযোগ

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতি ইউনিয়নে মার্চ থেকে জুন এই ৪ মাস নদীতে জেলেদের জাটকা ইলিশ ধরা নিষেধাজ্ঞা থাকায় তালিকাভুক্ত জেলেদের ভিজিএফের চাল বরাদ্দ দেয় সরকার।

রোববার (২৩ জুন) ও সোমবার (২৪ জুন) সকালে ইউনিয়ন পরিষদে ইউপি সদস্য আবুল কালাম জেলেদের ভিজিএফ চাল বিতরণ করেন। এ সময় নিয়ামতি ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত তদারকি (ট্যাগ) কর্মকর্তা ও মাধ্যমিক একাডেমি শিক্ষা কর্মকর্তা এনামুল হক অনুপস্থিত ছিলেন।


বিজ্ঞাপন


অনুসন্ধানে জানা যায়, নিবন্ধনকৃত দরিদ্র জেলেদের জন্য প্রতি মাসে ৪০ কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। চলতি বছরে নিয়ামতি ইউনিয়নের ১৫০ জেলেকে ৪০ কেজি করে চাল বিতরণ করার কথা থাকলেও দুই ধাপে দুই মাসের চাল একত্রে জনপ্রতি ৮০ কেজি না দিয়ে তাদেরকে দেওয়া হয়েছে ৫০ কেজি করে।

ট্যাগ অফিসারের অনুপস্থিতিতে প্রকাশ্যে অন্তত জনপ্রতি ৩০ কেজি করে চাল কম দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

আরও পড়ুন

নোয়াখালীতে সড়কে চাঁদাবাজি, নগদ টাকাসহ গ্রেফতার ৩৪

বরাদ্দের বাকি চাল লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ও ইউপি সদস্য আবুল কালাম তালুকদারের বিরুদ্ধে। চাল বিতরণের প্রথম থেকেই এই অভিযোগ করে আসছিল স্থানীয় জেলেরা।


বিজ্ঞাপন


গত ৪ মাসে ১৫০ জন জেলেদের বরাদ্দের চাল মোট ২৪ টন হলেও সেখান থেকে জেলেদের চাল কম দিয়ে ৯ টন চাল আত্মসাৎ করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ও ইউপি সদস্য আবুল কালাম হাওলাদার।

এ ছাড়া গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদে ২৪ জুন তদারকি (ট্যাগ) অফিসারের অনুপস্থিতিতে ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় ২৬৬ জন দুস্থ নারীকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা। কিন্তু তা না করে অসৎ উদ্দেশে তাদের জনপ্রতি দেওয়া হয়েছে ২৭ থেকে ২৮ কেজি চাল। দুস্থ নারীদের জন্য ৭ টন ৯৮০ কেজি চাল থেকেও প্রায় ৬০০ কেজি চাল আত্মসাৎ করেছে ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য।

আরও পড়ুন

বাঁশের বেড়ায় অবরুদ্ধ পরিবার

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, চলতি বছরের ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই সমুদ্রে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকার জন্য নিয়ামতি ইউনিয়নের ১০ জন জেলেদের জন্য ৫৬ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হলেও ৫৬০ কেজি চাল এখন পর্যন্ত কোনো জেলে পায়নি। ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ভিজিএফ ১ হাজার ৪১২ জনের জন্য ১৪ টন ১২০ কেজি চাল নিয়ামতি ইউনিয়ন পরিষদে বরাদ্দ দেওয়া হলেও সেখানেও জনপ্রতি পরিমাপে কম দিয়ে ও অনেকের মাঝে চাল না দিয়ে প্রায় ২ টন চাল আত্মসাৎ করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির।

চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে বছরের পর বছর ধরে সরকারি বরাদ্দের চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও এখন পর্যন্ত ব্যবস্থা নেয়নি উপজেলা প্রশাসন।

Rice

নিয়ামতি ইউনিয়নের রূপারজোর গ্রামে জেলে পাড়ায় গেলে জেলেরা অভিযোগ করেন, আমাদের এই জেলা পাড়ায় ৫৭ জন জেলে পরিবার রয়েছে। আমরা ২৪ পরিবারের মধ্যে নিবন্ধনকৃত দরিদ্র ২৪ জেলে এই বছর চাল পেয়েছি। আমাদের চেয়ারম্যান ২ মাসে মোট এক কার্ডে ৮০ কেজি চাল না দিয়ে দিয়েছেন ৫০ কেজি। বাকি চাল চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য আত্মসাৎ করেছেন।

আরও পড়ুন

কারাগার থেকে বের হওয়ার ৪ দিনের মাথায় যুবলীগ নেতার দু’পায়ের রগ কর্তন

ইউপি সদস্য কালাম তালুকদারের কাছে জেলেদের চাল কম দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো অনিয়ম নাই, গতকাল ট্যাগ অফিসারের সামনে গত দুই মাসের চাল বিতরণ করা হয়েছে। ওয়ার্ডভিত্তিক মেম্বাররা চাল নিয়ে ২০ জনেরটা ভাগ করে দিয়েছেন ২৫ জনকে, এজন্যই ঝামেলা হয়েছে। ২০ জনের চাল ২৫ জনের মধ্যে ভাগ কেনো হলো জানতে চাইলে তিনি উত্তর দিতে পারেননি।

জেলেদের চাল ও অন্যান্য বরাদ্দের চাল বিতরণে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চেয়ে ফোন করা হলে চেয়ারম্যানের হুমায়ুন কবির বলেন, বরিশালে মিটিংয়ে রয়েছি। বাকেরগঞ্জ এসে সাক্ষাতে কথা বলব। এই বলে ফোন কেটে দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়ামতি ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত তদারকি (ট্যাগ) অফিসার উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমি শিক্ষা কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, ২৩ জুন দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ছিলাম, সেখানে ৩ নম্বর ওয়ার্ড ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জেলেদের চাল বিতরণ করা হয়েছে। জেলেদের সংখ্যা বেশি হাওয়ায় ভাগবাটোয়ারা করতে চেয়েছিলেন। আমি বলেছি, আমার সামনে এগুলো চলবে না। কোনো এক মেম্বার পরিষদের বাইরে নিয়ে অন্য কোথাও বসে ভাগবাটোয়ারা করেছেন, মনে হয় একজনের চাল দু’জনের মধ্যে বিতরণ করছেন, এ জন্য কম হতে পারে। সেটা আমার সামনে করেনি। আর সোমবার চাল দেওয়া হয়নি। আজকে আমি ছুটিতে রয়েছি। তবে আমাকে না জানিয়ে আমার অনুপস্থিতিতে চাল বিতরণের নিয়ম নেই।

আরও পড়ুন

ইউপি মেম্বারের বিরুদ্ধে ২ ব্রিজের লোহার মালামাল বিক্রির অভিযোগ

এ ছাড়া রোববার ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির পরিষদে উপস্থিত ছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু সময় উপস্থিত ছিলেন, এরপর চলে গেছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন বলেন, গত দু’দিনে আমার কাছে জেলেরা মোবাইল ফোনে অভিযোগ করেছেন। সোমবার আলতাফ সিকদার নামে একজন জেলে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ দাখিলের বিষয়ে মৌখিকভাবে শুনেছি, কিন্তু লিখিত অভিযোগটি হাতে পাইনি। লিখিত অভিযোগটি হাতে পেলে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, জেলে পরিবার প্রতি যা চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাই বিতরণ করতে হবে। সরকারি বরাদ্দের চাল কম দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর