আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। এ ঈদকে সামনে রেখে চুয়াডাঙ্গায় জমে উঠেছে ছোট-বড় ১১টি পশুরহাট। শেষ মুহূর্তে পশুহাটগুলোতে বাড়ছে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। তবে এবছর কোরবানির পশুর দাম নিয়ে অসন্তুষ্ট ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ে। এ জেলায় এ বছর ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮৫৬ টি কোরবানির পশুর চাহিদার বিপরীতে পশু প্রস্তুত রয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৮০৭ টি। যা দিয়ে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও ৫২ হাজার ৯৫১ টি কোরবানিযোগ্য পশু উদ্বৃত্ত থাকবে।
চুয়াডাঙ্গায় এবছর সরাসরি খামার ও পশু হাটগুলোতে ১ হাজার কোটি টাকার অধিক বাণিজ্য হবে জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। তবে খাবার, ওষুধ ও পরিচর্যা খরচের বিপরীতে কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় হতাশ খামারিরা। আর ভিন্ন কথা বলছেন সাধারণ ক্রেতারা। তাদের দাবি, অন্যবারের তুলনায় এবার কোরবানির পশুর দাম বেশি হাঁকা হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
![]()
এবছর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে হাটগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেলেও বিক্রি সেভাবে হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন গরুর খামারি ও ব্যবসায়ীরা। দাম বেশি হওয়ায় মধ্যবিত্তরা এবার ঝুঁকছেন ছোট বা মাঝারি সাইজের পশু ক্রয়ের দিকে। যে কারণে এবারের কোরবানিতে বড় সাইজের গরুর চাহিদা একটু কম। তবে মাঝারি সাইজের গরু ও ছাগলের চাহিদা তুলনামূলক বেশি। পশুখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় পশু পালনে খরচ অনেক বেড়েছে। তাই কোরবানির পশুর দাম একটু বেশি বলে জানান বিক্রেতারা।
বিজ্ঞাপন
হাসমত আলী নামে এক গরু বিক্রেতা বলেন, গরুর দাম শুরুতে যা ছিল এখন শেষে এসে আরও কমে গেছে। সাড়ে তিন মণ ওজনের একটি গরুর দাম চেয়েছি ১ লাখ টাকা। আর আট মণ ওজনের একটি ষাঁড়ের দাম চেয়েছি ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। অনেকে দেখে গেছেন, দাম শুনার পর চলেও গেছেন।
জামাল হোসেন নামে এক বিক্রেতা বলেন, বাড়িতেই আমার গরুর যে দাম বলেছিল হাটে আনার পর সে গরুর দাম ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা কম বলছে।
![]()
কিতাব আলী নামে আরও এক বিক্রেতা বলেন, আমার গরুর ওজন হবে ১০ মণের বেশি। ক্রেতারা দাম বলছেন ২ লাখ ৩০ থেকে ৪০ হাজারের মধ্যে। এই দামে গরু বিক্রি করলে খরচটাও তোলা সম্ভব হবে না। দাম আরও বাড়বে এই আশায় রোদ গরমের মধ্যে ধৈর্য ধরে দাঁড়িয়ে আছি।
এদিকে, ক্রেতারা আক্ষেপ করে বলেন, পশুর যে দাম সে তুলনায় মাংস পাওয়া যাচ্ছে না। বাড়ি থেকে যে বাজেট হিসাব করে এসেছি, তার চেয়ে অনেক বেশি দাম হয়ে যাচ্ছে। যার কারণে পছন্দ অনুযায়ী পশু কেনা যাচ্ছে না।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এ.এইচ.এম. শামিমুজ্জামান জানান, চুয়াডাঙ্গায় ছোট বড় প্রায় ১১ হাজার খামারে এবার যা পশু লালন-পালন করেছেন। এর বাইরেও ব্যক্তি পর্যায়ে অনেকে পশু প্রস্তুত করেছেন। তাতে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ৫৩ হাজার কোরবানিযোগ্য পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। এসব পশু ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা হবে। এবছর পশুখাদ্যের দাম বৃদ্ধিপাওয়ায় উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। আমরা ক্রেতাদেরকে আহ্বান জানাচ্ছি একটু বাড়তি দাম দিয়ে যেন তারা পশুগুলো ক্রয় করে। তাতে খামারিরা লাভবান হতে পারবে, এবং পশু পালনে আগ্রহী হবে। এছাড়া সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ার কারণে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে অবৈধভাবে কোনো পশু যেন আসতে না পারে, সে লক্ষ্যে আমরা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। জেলার পশুহাট গলোতে আমাদের ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম থাকছে। তারা ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কে সাহায্য সহযোগিতা করছে।
![]()
চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) নাজিম উদ্দিন আল আজাদ জানান, পশুহাটগুলোর নিরাপত্তার জন্য পুলিশের মোবাইল টিমের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও আমাদের গোয়েন্দা বিভাগ কাজ করছে। গরুর হাটে জাল নোট ও অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের ঠেকানোর জন্য পুলিশের কড়া নজরদারি রয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অজ্ঞান পার্টির সক্রিয় কয়েকজন সদস্যকে অজ্ঞান করার কেমিকেলসহ আটক করা হয়েছে।
প্রতিনিধি/টিবি

