রোববার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

টানা বৃষ্টিতে উৎকণ্ঠায় আলু চাষিরা

শুভ ঘোষ, মুন্সিগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:৫৫ এএম

শেয়ার করুন:

টানা বৃষ্টিতে উৎকণ্ঠায় মুন্সিগঞ্জের আলু চাষিরা

গত বুধবার দিনভর কয়েকদফা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির পর বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) ভোর থেকে মুন্সিগঞ্জে হচ্ছে ভারী বৃষ্টিপাত। এতে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে সময় কাটছে আলু চাষিদের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় এ বছর মোট ৩৪ হাজার ৩৪৬ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বছর এখন পর্যন্ত ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করেছে কৃষক আর বাকি জমিতে আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছে অনেকে।


বিজ্ঞাপন


এ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, আলু রোপণের আদর্শ সময় নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে টানা ২৫ দিন পর্যন্ত তবে সেই আদর্শ সময় পার হয়ে যাচ্ছে। কৃষক এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার প্রায় অর্ধেক জমিতে ইতোমধ্যে আলু রোপণ করেছে।

Alu-1

ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের সংবাদ শুনে অনেকে জমি তৈরি করার পরেও অপেক্ষায় ছিলেন বৃষ্টিপাত হয় কিনা সেই অপেক্ষায় আলু রোপণ করেননি।

কিছুদিন আগে হয়ে গেল ঘূর্নিঝড় মিধিলি। সে সময় কৃষকের অনেক জমিতে পানি জমে আলু বীজ নষ্ট হয়। পরে আবার কৃষক যখন তাদের জমিগুলো পুনরায় চাষাবাদ করে আলু আবাদ করেছেন এবং করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সে সময় এই বৃষ্টি যেন কৃষকের মরার উপরে খাড়ার ঘাঁ।


বিজ্ঞাপন


সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মুন্সিগঞ্জ সদর, টঙ্গিবাড়ী ও সিরাজদিখাঁন উপজেলার কৃষি জমিগুলোতে বুধবার থেকে বন্ধ রয়েছে কৃষকের আলু আবাদের কার্যক্রম। যে কৃষি বিলগুলোতে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করছিল সেই বিলগুলো এখন শ্রমিক শূন্য।

আরও পড়ুন: অসময়ে বৃষ্টি, কৃষকের মাথায় হাত

কৃষক নিজেই কোদাঁল নিয়ে জমিতে জমিতে ঘুরছেন আইল কেটে পানি নামানোর নালা তৈরি করার জন্য।

টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আউটশাহি এলাকার বিলে সন্ধ্যার আগে আলু জমির আইল কেটে নালা তৈরি করছিলেন কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক। তিনি বলেন, এ বছর ৭০ শতাংশ জমি আলু রোপণ করার জন্য প্রস্তুত করছি। এ পর্যন্ত ২১ শতাংশ জমিতে আলু রোপণ করছি। বাকি জমিগুলোও প্রস্তুত করে রাখছি। এতোদিনে আলু রোপণ করে ফেলতাম। কিন্তু কিছুদিন ধরে শুনতেছিলাম আবারও ঘুর্ণিঝড় হইব। তাই আলু রোপণ করিনাই। ঘূণিঝড় না হলেও যেভাবে বৃষ্টি শুরু হয়েছে তাতে মনে হয় এ বছর আর বাকি জমিতে আলু রোপণ করতে পারমুনা। যেটুকু লাগাইছি সেই জমিতে যাতে পানি না জমে তাই নালা কেটে দিচ্ছি।

Alu-3

তিনি আরও বলেন, এ বছর সার, আলু বীজ, জমির জমা সবকিছুর দাম বেশি। যে জমিগুলোতে আলু রোপণ করিনাই সেগুলোতেও সার ছিটিয়ে রাখছি। এখন আলু লাগাইতে না পারলে আমার সব লোকসান হইব। বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ করে এ বছর চলতি মৌসুমে আলুর রোপণ করছি।

সিরাজদিখান উপজেলার তেলির বিল গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম মিয়া বলেন, আমি এবার ৫ কানি (৭০০ শতাংশ) জমিতে আলু রোপণ করেছি। এখন যেভাবে বেশি বৃষ্টি শুরু হয়েছে আমার রোপণ করা বীজ আলু একেবারেই নষ্ট হয়ে যাবে। পুনরায় আলু রোপণ করতে হবে। এতে আমার লাখ লাখ টাকা লোকসান হবে।

গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের বাঘাইকান্দি গ্রামের কৃষক রহমান মাদবর বলেন, এ বছর মিধিলির আগে আড়াইকানি জমিতে আলু রোপণ করেছিলাম। কিন্তু মিধিলির সময় বৃষ্টির পানি জমে সব নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আবার নতুন করে লাগাইছি। আবারও যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে মনে হয় সব পচে আবার নষ্ট হবে। সরকারিভাবে যদি আর্থিক প্রণোদনা পাওয়া যায় কিংবা সার পাওয়া যায় তবে হয়তো এই লোকশান কাটিয়ে উঠতে পারব।

আরও পড়ুন: হাজীগঞ্জে ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতা, ২০ কোটি টাকার শীতকালীন সবজি নষ্ট

সরেজমিন ঘুরে আরও দেখাগেছে, ভোর রাতে বৃষ্টিতে সদ্যরোপণ করা হাজার হাজার হেক্টর আলু রোপণ করা জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে করে চরম আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে জেলার হাজারও আলু চাষিরা। ফলে চলতি অর্থবছরের আলু উৎপাদন লক্ষমাত্র অর্জিত না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে কৃষকদের মাঝে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা আরও জানান, ধার-দেনা, কর্জ করে আলু রোপণ করতে হয়। তবে বৃষ্টিতে সব শেষ করে দিচ্ছে। এর আগেও প্রাথম দফার বৃষ্টিতে জেলার অনেক কৃষক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এবার দ্বিতীয় দফার বৃষ্টিতে হাজার হাজার কৃষক সর্বস্বান্ত হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন অনেকে।

ক্ষতিগ্রস্ত আরেক কৃষক সৈয়দ ব্যাপারী বলেন, এবার ১২ কানি জমিতে আলু রোপণ করার উদ্দেশ্য। ইতোমধ্যে ৮ কানি জমিতে আলু রোপণ শেষ হয়েছিল। এখন বৃষ্টিতে সব আলুর জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে করে আমার প্রায় ১৫/২০ লাখ টাকার ক্ষতি হওয়া শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর আগের বৃষ্টিতেও আমার এক কানি জমির আলুর বৃষ্টির কারণে নষ্ট হয়েছে।

Alu-5_copy--

নুর হোসেন মিঝি নামের ক্ষতিগ্রস্ত আরেক আলু চাষি বলেন, প্রথম দফার বৃষ্টিতে জেলা অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেটা কাটিয়ে না উঠতেই এখন দ্বিতীয় দফার বৃষ্টিতে সর্বস্বান্ত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে কৃষকদের মাঝে। আমরা ধার-দেনা কর্জ করে প্রতিবছর আলু রোপণ করে থাকি। তবে এবার বৃষ্টিতে আমরা সর্বস্বান্ত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছি। বৃষ্টিতে যে ক্ষতি হয়েছে তা কোনোভাবেই পূরণ করা সম্ভব নয়। তবে আমরা চেষ্টা করছি যাতে জমিতে বৃষ্টির পানি আটকে না থাকে।

তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ডা. মো. আব্দুল আজিজ বলছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতার সুযোগ নেই। তবে দেওয়া হচ্ছে নিয়মিত পরামর্শ। গেল বুধবার পর্যন্ত চলতি মৌসুমে মুন্সিগঞ্জ জেলায় আলু আবাদ হয়েছে ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে।

আরও পড়ুন: জয়পুরহাটে আলু বীজ-সারের বাড়তি দাম, বিপাকে কৃষক

এবার জেলার মোট ৩৪ হাজার ৩৪৬ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন আলু। বাকি জমিগুলোতে চলছে আলু আবাদের প্রস্তুতি।

তিনি আরও বলেন, আলু চাষের উত্তম সময় নভেম্বর মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে এ বছর কিছুদিন আগে ঘূর্ণিঝড় মিধিলি আঘাত হানায় আলু আবাদ বিলম্বিত হয়েছে। এখন আবার বৃষ্টিপাত হচ্ছে, এতে আলু চাষ আরও বিলম্বিত হবে। ফলে আগামী মৌসুমে আলুর বাজারে কিছুটা ধস নামার শঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর