মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

জয়পুরহাটে আলু বীজ-সারের বাড়তি দাম, বিপাকে কৃষক

জেলা প্রতিনিধি, জয়পুরহাট
প্রকাশিত: ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:২৩ এএম

শেয়ার করুন:

জয়পুরহাটে আলু বীজ-সারের বাড়তি দাম, বিপাকে কৃষক

উত্তরের জেলাগুলোতে শীত বইছে, আলু চাষের মৌসুমও শুরু হয়েছে। জয়পুরহাটের পাঁচটি উপজেলায় মাঠে মাঠে চলছে আলু রোপণের কাজ। অন্য বছরের চেয়ে এবছর আলু বীজ, সারসহ আলু চাষাবাদ খরচ বেশি অন্যদিকে আমন ধানের কাঙ্ক্ষিত ফলন না পাওয়ার হতাশা নিয়ে আলু রোপণ করছেন জয়পুরহাটের কৃষকরা।

বীজআলু কিনতে হচ্ছে ৪০ কেজির বস্তা ৩শ থেকে ৫শ টাকা বেশি দামে আবার  রাসায়নিক সার প্রতি বস্তা তিনশ থেকে চারশ টাকা বেশি মূল্যে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। বিক্রয় রশিদও দেওয়া হচ্ছে না কৃষকদের। ফলে আগের বছরগুলোর তুলনায় এ বছর কৃষকদের প্রতি বিঘায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হওয়ায় প্রাণচাঞ্চল্য দেখা যাচ্ছে না আলু চাষে।


বিজ্ঞাপন


জেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এবার জেলায় ৩৮ হাজার ৮১৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার ২২৫ হেক্টর জমিতে আলু রোপণ বেশি হচ্ছে। ইতোমধ্যে লক্ষ্য মাত্রার ৫৫ থেকে ৫৬ শতাংশ জমিতে আলু রোপণ সম্পূর্ণ হয়েছে। আগামী এক থেকে দেড় সপ্তাহের মধ্যে বাঁকী অংশ রোপণ সম্পূর্ণ হবে বলে তারা আশাবাদী।

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার নয়াপাড়া মাঠে গিয়ে কৃষকদের আলু রোপণের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। এ সময় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নভেম্বরের শুরু থেকে আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। এরপরই কৃষকরা আলু রোপণের প্রস্তুতি নেন। গত এক সপ্তাহ ধরে তারা আলু রোপণ করছেন। তবে সার ও বীজ নিয়ে তাদের অভিযোগ রয়েছে। গত বছর এক বিঘা জমিতে আলু রোপণ বাবদ খরচ হয়েছে ২৫ থেকে ২৬ হাজার টাকা। এবার সেই এক বিঘা জমি রোপণ করতে ৩৫ থেকে ৩৬ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। সার ও বীজ বেশি দামে ক্রয় করতে না হলে এবার তাদের অতিরিক্ত টাকা গুনতে হত না।

thumbnail_Joypurhat_Potato_Seeds_&_Fertlizer_pic_2

ক্ষেতলাল উপজেলার তালশন গ্রামের কৃষক নুরু মিয়া বলেন, প্রতিবছর ২০ থেকে ২২ বিঘা জমিতে আলু রোপণ করেন তিনি। এ বছর একটু কম। কেন কম তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবার খরচ বেশি। সব ধরনের সারে প্রতি বস্তায় দু’শ থেকে আড়াই’শ টাকা বেশি দামে ক্রয় করতে হচ্ছে। ক্যাশ ম্যামো দেওয়া হচ্ছে সরকার নিদ্ধারিত দামে। প্রতিবাদ করলে তারা সার দিতে চাচ্ছে না। আবার বীজের দামও বেশিু নিচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


সদর উপজেলার হিচমী গ্রামের কৃষক আনিছুর রহমান বলেন, বাজারে এবার খাবার আলুর দাম বেশি ছিল। অনেকেই বেশি দামে বীজআলু খাবার হিসেবে বিক্রি করেছে। ফলে বীজআলুর সংকট দেখা দেয়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীরা বীজআলুর দাম বেশি নিচ্ছেন। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো খাবার আলু বিভিন্ন হিমাগার থেকে বের করে সেই আলু নতুন নতুন কোম্পানির ছিল মারা বস্তা ও ট্যাগ লাগিয়ে বীজআলু হিসেবে বিক্রি করছেন। বোঝার কোনো উপায় নেই। এতে করে কৃষকরা এবার সর্বশান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রতি ৪০ কেজির বস্তাতে অতিরিক্ত ৩শ থেকে ৫শ টাকা পর্যন্ত বেশি দিতে হচ্ছে। খরচ বেশি পড়ছে তারপরও এবার আলুর চাষ করছেন তারা।

সার ডিলার তালুকদার রাইচ মিলের স্বত্ত্বাধিকার আব্দুল্লা তালুকদার বলেন, আমি সরকার নিদ্ধারিত মূল্যে অনুযায়ী সার বিক্রি করছি এবং মেমোও দিচ্ছি। তবে অনেকেই বেশি দামে সার বিক্রি করছে এটাও শুনেছি। কৃষকদের অভিযোগ মিথ্যা না। 

thumbnail_Joypurhat_Potato_Seeds_&_Fertlizer_pic_1

বিএডিসি’র ডিলার শাহিন ইসলাম বলেন, বীজআলু ও খাবার আলু সম্পূর্ণ আলাদা। বীজআলুর কোনও সঙ্কট নেই। সরকার নির্ধারিত দামেই বীজআলু বিক্রি করছি। প্রশাসনের লোকজন প্রতিনিয়ত আমাদের তদারকি করছেন। তবে অনেকেই আছেন, যাদের কোনো ডিলারশিপের প্রয়োজন হয় না। তারাই এসব কাজ করছেন। এমনকি খাবার আলু বীজআলু হিসেবে বিক্রি করছেন এমন অভিযোগও আমাদের কাছে আসছে। 

জয়পুরহাট কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা রতন কুমার রায় বলেন, দাম বেশি নেওয়ার অভিযোগে সার ও বীজআলু নিয়ে কৃষি বিপণন নিয়মিত বাজার তদারকি করছে। জরিমানার সাথে তাদের সতর্কও করা হয়েছে।

এবার আলু রোপণে খরচ বেশি হওয়ার কথা স্বীকার করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রাহেলা পারভিন বলেন, ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রার ৫৫ থেকে ৫৬ শতাংশ জমিতে আলু রোপণ সম্পন্ন হয়েছে। এবার বাজারে সার ও বীজআলুর কোনও সঙ্কট নেই। যদি কেউ বেশি দামে সার ও বীজ বিক্রি করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর