রোববার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

'পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি নারীরা কোথাও নিরাপদ নয়'

জেলা প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি
প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর ২০২৩, ১০:০৪ এএম

শেয়ার করুন:

loading/img

খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলাতে ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতা বিরোধী প্রতিরোধ সমাবেশ করেছে তিন নারী সংঘটনহিল উইমেন্স ফেডারেশন, নারী আত্মরক্ষা কমিটি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ।

বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) বিকেল ৪টায় মানিকছড়ি গিরি মৈত্রী সরকারি ডিগ্রি কলেজ গেইটের সামনে ধর্মঘরে মাঠে অনুষ্ঠিত হয় ।


বিজ্ঞাপন


মানিকছড়ি গিরি মৈত্রী সরকারি ডিগ্রি কলেজ গেইটের থেকে মিছিল শুরু করে উপজেলা পোস্ট অফিস সড়ক প্রদক্ষিণ করে ধর্মঘরে এসে শেষে হয়। পরে সমাবেশ শুরু হয়।

মানিকছড়ি, গুইমারা, মাটিরাঙ্গা, রামগড়, লক্ষীছড়ি ৫ উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েক হাজার নারী-পুরুষরা সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন।

রাস্তাঘাট, ক্ষেত-খামার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-কর্মস্থল ও যানবাহনসহ সর্বত্র নারীর সম্ভ্রম ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষে বিশাল এই প্রতিবাদ সমাবেশে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতি চাকমার সভাপতিত্বে নারী আত্মরক্ষা কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য রিপনা চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) মানিকছড়ি ইউনিটের সমন্বয়ক ক্যহ্লাচিং মারমা, লক্ষীছড়ি ইউনিটের সংগঠক আপ্রুসি মারমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম কেন্দ্রীয় তথ্য প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রজেন্টু চাকমা, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ খাগড়াছড়ি জেলা কমিটি তথ্য প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক বাহাদুর ত্রিপুরা।

Khagrachari_Hill-2


বিজ্ঞাপন


সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন মারমা ওয়েলস ফেয়ার অ্যাসোশিয়েসনের প্রতিনিধি এচিং মারমা, সাবেক মহিলা মেম্বার ম্রাচিং মারমা ও সাবেক মেম্বার সদুঅং মারমা। এতে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশ শুরু করার আগে ৪৭ সদস্য বিশিষ্ট মানিকছড়ি উপজেলা নারী আত্মরক্ষা কমিটি ঘোষণা করা হয়। এসময় কমিটির সদস্যরা সংগঠনের আনুষ্ঠানিক সূচনা তুলে ধরতে আত্মরক্ষার সংক্ষিপ্ত কসরত প্রদর্শন করে। নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক মিলি মারমার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মাধ্যমে সমাবেশ আরম্ভ করা হয়।

সমাবেশে ইউপিডিএফের সংগঠক ক্যহ্লাচিং বলেন, এই মানিকছড়িতে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রতিনিয়ত ভূমি বেদখল অব্যাহত রয়েছে ও নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এখানে ধর্ষণ হলে পুলিশ-প্রশাসন অপরাধীর পক্ষালম্বন করে। পার্বত্য চট্টগ্রামে আমাদের জাতিগত নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য মুছে ফেলার জন্য সেটলার, মুখোশ-দালাল দিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত করে আমরা আন্দোলন চালিয়ে নেব। পার্বত্য চট্টগ্রামে যাতে আর কোনো দিন ভূমি হারাতে না হয়, তার জন্য সবাইকে সতর্ক ও সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানান।

সমাবেশে নীতি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি নারীরা কোথাও নিরাপদ নয়। আত্মরক্ষা প্রকৃতির প্রথম আইন। আত্মরক্ষা করতে গিয়ে যদি আক্রমণকারী মারাও যায়, সেটি কোনো অপরাধ হিসেবে পরিগণিত হবে না।

Khagrachari_Hill-1

ব্যক্তরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশব্যাপী বৃহৎ বাঙালি জাতির পাশাপাশি আমরা পাহাড়ি সংখ্যালঘুরা আজ নিরাপত্তাহীন। আজকে সারাদেশব্যাপীতে যে যৌন সহিংসতা তা বিরাট আকার ধারণ করেছে। ১৯৮০ সালে সমতল থেকে পার্বত্য এলাকায় নিয়ে আসা বহিরাগত সেটলাররা প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো জায়গায় ভূমি বেদখল করে চলেছে। আমাদের পাহাড়ি নারীদের সম্ভ্রমহানি করছে, ধর্ষণ করছে, কিন্তু তার সঠিক বিচার হচ্ছে না।

সমাবেশে শেষে ধর্ষক, দালাল-প্রতিক্রিয়াশীলদের প্রতীকী হিসেবে কুশপুত্তলিকায় জুতা-স্যান্ডেল দিয়ে পেটানো হয়, ক্ষুব্ধ নারী ও যুবকরা লাথি মেরে ঘৃণা প্রকাশ করে। এসময় প্রতিবাদী শ্লোগান ধ্বনিত হয়, ক্ষুব্ধ নারী ও ছাত্র-যুব-জনতা ধর্ষণ ও দালালি-প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা ও ক্ষোভ প্রকাশের অংশ হিসেবে কুশপুত্তলিকা দাহ করে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন