শরীয়তপুরে পারিবারিক কলহের জেরে তিন শিশুসন্তানকে নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন সালমা বেগম (৩০) নামের এক মা।
এ ঘটনায় দুই শিশুসন্তানকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও নিখোঁজ রয়েছেন সালমা বেগম ও তার আরেক শিশু।
বিজ্ঞাপন
রোববার (৫ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার জপসা ইউনিয়নের ভোজেশ্বর লঞ্চ ঘাট এলাকায় কীর্তিনাশা নদীত এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ১০ বছর আগে ভোজেশ্বর ইউনিয়নের পাঁচক এলাকার লোকমান ছৈয়ালের মেয়ে সালমা বেগমের সঙ্গে বিয়ে হয় জপসা ইউনিয়নের মাইজপাড়া এলাকার শাজাহান মাদবরের ছেলে আজবাহার মাদবরের। বিয়ের পর থেকেই সালমা বেগমের শাশুড়ি মিলি বেগম ও ননদ কলির সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না। এই নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। গতকাল শনিবার রাতে এসব বিষয় নিয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হলে সকালে তিন সন্তান সাহাবীর, আনিকা ও জাফরকে নিয়ে কীর্তিনাশা নদীতে ঝাঁপ দেন সালমা। পরে স্থানীয়রা বিষয়টি দেখতে পেয়ে নদী থেকে আনিকা ও জাফরকে উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যান।
সালমা বেগমের বাবা লোকমান ছৈয়াল ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার মেয়ে কি ওদের জালাইতো? কেনবা আমার মেয়ে আর নাতিকে মেরে ফেললো। ওদের জন্যই আমার মেয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছে। আমি এর বিচার চাই। আমার মেয়ে আর নাতিকে ওরা মেরে ফেলেছে।
এ বিষয়ে অভিযোগ অস্বীকার করে সালমা বেগমের স্বামী আজবাহার মাদবর ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার স্ত্রীর সঙ্গে কারও ঝগড়াঝাটি ছিল না। কিসের জন্য এমনটা যে করল সালমা আমার বাচ্চাদের নিয়ে তা আমিও জানি না। কয়েক দিন ধরে ওর মাথায় সমস্যা হয়েছে। তাই ভেবেছিলাম ফকির-কবিরাজ দেখাব। কিন্তু বুঝতেই পারতেছি না এই ঘটনা কেমনে কি কীভাবে হয়ে গেল।
বিজ্ঞাপন
শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নড়িয়া সার্কেল) আহসান হাবীব ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা সাড়ে ১১টার দিকে খবর পাই। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি সালমা নামের এক গৃহবধূ পারিবারিক কলহের জেরে তিন শিশুসন্তান নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছেন। দুই শিশুকে স্থানীয়রা উদ্ধার করতে পারলেও মা ও আরেক সন্তান নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলেরা কাজ করছে।
ফায়ার সার্ভিসের নরিয়ার লিডার রওশন ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে খবর পাই যে। ভোজেশ্বর বাজার লঞ্চঘাট এলাকায় এক গৃহবধূ তার তিন সন্তানকে নিয়ে পানিতে ঝাঁপ দিয়েছেন। অতঃপর আমরা আসি এবং আমাদের এইখানে ডুবুরি দলের লোক না থাকায় মাদারীপুর ফায়ার স্টেশন থেকে ডুবুরি দলের লোক আনি এবং তারা সকাল থেকে এখন পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এবং রাত্রি হওয়া না পর্যন্ত আমরাই এই উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাব।
রওশন আরো বলেন, দুই শিশুর পরনে প্যাম্পার্স থাকার কারণে তাদেরকে স্থানীয় লোকজন দেখে ফেলে। এবং তাদেরকে উদ্ধার করে। কিন্তু মা ও আরেক সন্তান তলিয়ে যায়। তাদেরকে এখনও পাওয়া যায়নি। তবে মৃত ব্যক্তির লাশ পানিতে তলিয়ে বেশি দূর যায় না। আশা করি আমরা তাদেরকে খুঁজে পাব।
প্রতিনিধি/এসএস