মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

কিশোরগঞ্জে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে, হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৭ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৪০ এএম

শেয়ার করুন:

loading/img

কিশোরগঞ্জে কোনভাবেই যেনো কমছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। প্রতিদিনই হু হু করে বাড়ছে এর সংখ্যা। আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে পাঁচশতকের ঘর। জুন-জুলাই মাস জুড়ে ঢাকাসহ কয়েকটি অঞ্চলে মহামারি থাকলেও কিশোরগঞ্জ ছিল নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু গত জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা।


বিজ্ঞাপন


গত ২৪ ঘন্টায় জেলায় নতুন করে  শনাক্ত হয়েছে ৩৯ জন ডেঙ্গু রোগী। জেলার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালগুলোতেই কেবল ভর্তি আছে ১২০ জন রোগী। যা ২৪ ঘন্টায় জেলাতে এ বছরের রেকর্ড পরিমাণ সংখ্যা। ভর্তিকৃতদের মধ্যে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজএবং হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি ৮২ জন রোগী ভর্তী আছে। ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ২৫ জন, জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬ জন বাজিতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ২ জন ও কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৪ জন রোগী ও তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ ১ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে।

তবে সরকারি হাসপাতালগুলো থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৮ জন রোগী। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও ৫৩১ জন রোগী আক্রান্ত হয়েছে ডেঙ্গু রোগে।

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে স্বরজমীনে পরিদর্শন করলে রোগী, স্বজন, হাসপাতাল কতৃপক্ষ জানায়, আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগীই রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্ন অঞ্চল থেকে আক্রান্ত হয়ে এসেছে। তারা বলছেন কিশোরগঞ্জ জেলাতে এখনও পর্যন্ত এডিস মশার বংশবিস্তার তুলনামূলক কম। তবে জেলার করিমগঞ্জ, কটিয়াদি ও পৌরসদরে এডিস মশার আংশিক প্রদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। কতৃপক্ষ যদি এখনি এর কার্যত পদক্ষেপ না নেয় তবে এডিসের বিচরণ বাড়বে খুব দ্রুত বলে মনে করছেন তারা।


বিজ্ঞাপন


এদিকে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির কারণে জেলার শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে দুটি বিশেষায়ীত ডেঙ্গু ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। যার ফলে এখনো পর্যন্ত রোগীদের ভীর সরকারি হাসপাতালগুলোতেই। তবে প্রতিদিন রোগী বৃদ্ধির কারণে ওয়ার্ডগুলোর বেড সংকুলান হচ্চে না। ফলে এখন রোগীদের অবস্থান নিতে হচ্ছে হাসপাতালগুলোর বারান্দায়।

হাসপাতাল ঘুরে জানা যায়, বেশিরভাগ রোগীরাই বলছে তাদের  ভোগান্তির একটি বড় বিষয় পরিক্ষা-নিরিক্ষা। সরকারি হাসপাতালগুলোতে করাতে পারছেন না ডেঙ্গু শনাক্তের প্রয়োজনীয় সকল পরিক্ষাদি। দুপুর ১টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়, হাসপাতালের প্যাথলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট। সেইসঙ্গে যারা হাসপাতালে পরিক্ষা করাচ্ছে তারাও রিপোর্ট পাচ্ছে একদিন পর। ফলে একরকম বাধ্য হয়েই রোগীদের যেতে হচ্ছে বেসরকারি ডায়াগণস্টিকগুলোতে।

জেলা সদরের ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ডেঙ্গু শনাক্তের এনএস-1 পরিক্ষাটি শুধু করতে পারছে রোগীরা। করা যাচ্ছে না ডেঙ্গু রোগীর আরেকটি প্রয়োজনীয় পরিক্ষা সিভিসি প্লাটিলেট কাউন্ট । এ ব্যাপারে হাসপাতাল কতৃপক্ষ বলছে তাদের প্রয়োজনীয় লোকবল ও সিভিসি প্লাটিলেট কাউন্ট পরিক্ষার রিএজেন্ট নেই দীর্ঘদিন যাবৎ। ফলে তারা পরিক্ষাটি করতে পারছে না।

এদিকে রোগিরা যখন পরিক্ষা-নিরিক্ষার জন্য প্রাইভেট ডায়াগনষ্টিকের স্বরনাপন্ন হচ্ছে তখন তাদের গুনতে হচ্ছে বেশি টাকা। ডায়াগনষ্টিকগুলোও তাদের খেয়াল খুশিমত পরিক্ষার মূল্য বসাচ্ছে। ফলে রোগীরা পড়ছে ভোগান্তিতে।

এ ব্যাপারে ঢাকা মেইল যোগাযোগ করে জেলার স্বাস্থা বিভাগের প্রধান সিভিল সার্জন ডা: সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, পর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থাই ছিল। তবে হঠাৎ রোগীর চাপ পড়ায় কিছু জিনিস ও লোকবলের আংশিক স্বল্পতা তৈরি হলেও তা এখন কাটিয়ে উঠেছে জেলার সবগুলো স্বাস্থ্যসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এসময় তিনি জনগনকে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হবার প্রতি জোর দেন তিনি।

এদিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় পৌরসভার কার্যক্রম চলছে ধীরগতিতে। কার্যকরী পদক্ষেপগুলো এখনো দৃশ্যমান হয়ে উঠেনি বলে মনে করছেন পৌরবাসী। আরও জোড়ালো কার্যক্রম গ্রহণের দাবি পৌরবাসীর।

পৌর মেয়র মাহমুদ পারভেজ ঢাকা মেইলকে জানান, পৌরসভার পক্ষ থেকে এলাকাগুলোতে মশক নিদন স্প্রে ছিটানোসহ সচেতনমুলক নানা কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। যার অনেকগুলোই ইতোমধ্যেই বাস্তাবায়ন করা হয়েছে। যেহেতু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে নতুন কার্যক্রমের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, কিশোরগঞ্জে এডিস মশার প্রদুর্ভাব তেমন নেই, যারা আক্রান্ত তাদের বেশিরভাগই রাজধানী কিংবা অন্য অঞ্চল থেকে এসেছে। তবে কিশোরগঞ্জে যেনো এডিস মশা বংশ বিস্তার না করতে পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি আমাদের আছে।

প্রতিনিধি/ এজে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন