রোববার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

দত্তক দেওয়া শিশুকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিলো পুলিশ

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৬ জুলাই ২০২৩, ১০:৫৬ এএম

শেয়ার করুন:

loading/img

দুই বান্ধবী নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের নূর বানু ও বগুড়ার নন্দীগ্রামের নাসিমা আক্তার। দু’জনই গাজীপুরের একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। নাসিমার কোনো সন্তান নেই, যে কারণে নিজের ৪০ দিনের শিশু পুত্র মাহিমকে বান্ধবীর কোলে তুলে দিয়েছিল নূর বানু। কিন্তু ১৪ মাস পর বাধ সাধেন তার স্বামী। অবশেষে বুধবার (৫ জুলাই) রাতে সেই শিশুকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছে পুলিশ।

জানা গেছে, বান্ধবী নূর বানুর কাছ থেকে ৪০ দিনের শিশুকে মৌখিক দত্তক নিয়ে নিজ বাড়িতে আসেন নাসিমা। ১৪ মাস পর সেই সন্তানকে ফিরে পেতে বুধবার (৫ জুলাই) সন্ধ্যায় নন্দীগ্রাম থানায় লিখিত অভিযোগ করেন নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের দক্ষিণ চাঁদখানা সারোভাসা গ্রামের মোফাজ্জল হোসেনের স্ত্রী নূর বানু। পরে রাত ৮টার দিকে নন্দীগ্রাম উপজেলার বুড়ইল ইউনিয়নের সরিষাবাদ বাংলাবাজার গ্রামে শিশুটির পালক মা নাসিমার কাছে যান থানার উপ-পরিদর্শক মেহেদী হাসান ও নারী শিশু হেল্প ডেক্স অফিসার ফরিদা পারভীন। শিশুসহ তার পালক মা নাসিমাকে থানায় আনা হয়। পরে রাত ৯টার দিকে দুই পরিবারের সম্মতিক্রমে শিশুটিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। এসময় দুই বান্ধবী কান্নায় ভেঙে পরে। এমন সময় শিশুটি কেঁদে উঠলে থানায় উপস্থিত সবাই আবেগাপ্লুত হন।


বিজ্ঞাপন


শিশুটির মা নূর বানু জানায়, তিনি গাজীপুরে গার্মেন্টেসে কাজ করেন এবং তার স্বামী রিকশা চালায়। অভাবের সংসারে তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। গার্মেন্টেসে কাজ করার সুবাদে তার সঙ্গে নন্দীগ্রামের নাসিমার বান্ধবী সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নাসিমার কোনো সন্তান নেই। নূর বানুর সংসারে আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তাকে বিভিন্ন সময় আর্থিক সহযোগিতা করতো নাসিমা। নূর বানুর তৃতীয় সন্তান মাহিম গর্ভকালেও সহযোগিতা করে বান্ধবী। ওই শিশু জন্মের সময় ক্লিনিক ও ওষুধের সম্পূর্ণ খরচ বহন করে নাসিমা। শিশু মাহিম জন্মের ৪০ দিন পর অসুস্থ হলেও নূর বানু দম্পতি চিকিৎসা করাতে পারছিল না। গার্মেন্টসে চাকরির পাশাপাশি টাকার অভাবে নবজাতকের দেখভাল করা অসম্ভব হয়ে ওঠে। নবজাতককে নিয়ে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে নিজ বাড়িতে চলে যায় নূর বানু। সেখানেও আর্থিক সমস্যায় শিশুর চিকিৎসা করাতে ব্যর্থ হয় ওই দম্পতি। পরে চিকিৎসার স্বার্থে এবং শিশুর জীবন বাঁচানোর জন্য বাধ্য হয়ে পরিবারের সম্মতিক্রমে ওই শিশুকে বান্ধবী নাসিমার নিকট মৌখিকভাবে দত্তক দেয় নূর বানু। কিন্তু ১৪ মাস পর বাধ সাধলেন স্বামী মোফাজ্জল। না বুঝে অভাবের সংসারে ভুল করে শিশু মাহিমকে মৌখিকভাবে দত্তক দিয়ে নুর বানু দম্পত্তি অনুতপ্ত হয় এবং মানসিকভাবে ভেঙে পরে।

নন্দীগ্রাম থানার উপ-পরিদর্শক বিকাশ চক্রবর্ত্তী জানান, এটি মামলা হওয়ার মতো ঘটনা নয়, বিষয়টি মানবিক ছিল। দুই বান্ধবীর মানবিক বন্ধন। শিশুর প্রতি মাতৃ স্নেহের দুই বান্ধবীর ভালোবাসা দেখে থানায় উপস্থিত সকলেই আবেগাপ্লুত হন। শিশু মাহিমকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার সময় দুই বান্ধবী নিজেদের জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলে শিশুটিও কেঁদে ওঠে।

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন