আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় উড়োজাহাজ বা বিমান অপরিহার্য বাহন। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে দ্রুত যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিমান নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ। পূর্ব-প্রাচ্য সবখানেই বিমানের ব্যবহার বহুগুণ বেড়ে গেছে। নানান কারণে বিমানের ভাড়া অন্যান্য যানবাহনের চেয়ে বেশি। তবে দ্রুত যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিমান পরিষেবা এখন হাতের নাগালে। এর পরিধিও বিস্তৃত হচ্ছে। বিশ্বের অনেক দেশেই অত্যাধুনিক বাস ও বুলেট ট্রেনের প্রচলন শুরু হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোতে বিমান পরিবহন তুলনামূলকভাবে সহজ ও সুলভ হলেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো পিছিয়ে আছে। এর সবচেয়ে বড় কারণ বিমান পরিষেবার ওপর আরোপিত বিভিন্ন ধরনের শুল্ক। জ্বালানি তেলের অত্যাধিক দাম এর আরেক কারণ।
আরও পড়ুন: বিমানের টিকিট কাউন্টার কোথায়
বিজ্ঞাপন
একেক সময়ে বিমান টিকিটের দাম ভিন্ন রকম হয় কেন?
বিমানের টিকিটের দাম সবসময় নির্দিষ্ট থাকে এমন নয়। বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে উঠা-নামা করে টিকিটের মূল্য। যেমন চাহিদা বেশি থাকলে দাম বেড়ে যায় টিকিটের। আবার সার্বিক নানা পরিস্থিতির কারণেও বিমানের টিকিটের দাম বেড়ে যেতে পারে।
সারা বিশ্বেই কোনো ফ্লাইটের টিকিট মূল্য নির্ধারিত নয়। সাধারণত, যাত্রীর চাহিদা ও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় টিকিটের দাম উঠা-নামা করে।
বিজ্ঞাপন
এটা সব এয়ারলাইন্সের সাথে ঘটে। আপনি কোথা থেকে টিকিট কিনছেন বা মূল্য পরিশোধ করছেন এবং কোন মুদ্রায় টিকিট কাটছেন তার ওপর দাম নির্ধারিত হয়।
আরও পড়ুন: অভ্যন্তরীণ বিমানের টিকিট কাটতে কী লাগে?
সারা বিশ্বেই এয়ারলাইন্স কোম্পানিরগুলো চাহিদাকে প্রভাবিত করার জন্য মূল্য ওঠা-নামা করে। ধরুন আপনি প্রথমবার অনলাইন টিকিট কাটার জন্য সার্চ দিয়ে যে দাম দেখলেন কিছুক্ষণ পর আবার সার্চ দিলে আগের দাম দেখতে পাবেন না। দাম কিছুটা বাড়িয়ে দেওয়া হবে।
কী কারণে বিমান ভাড়া ওঠা-নামা করে?
একাধিক কারণে বৃদ্ধি পায় বিমানের টিকিটের দাম। কোন মৌসুম, সেই সময় কোনও লম্বা ছুটি বা কোনও উৎসব রয়েছে কিনা, টিকিটের চাহিদা কতটা রয়েছে, ওই রুটে অন্যান্য উড়ান সংস্থার বিমানে টিকিটের দাম কত, দূরত্ব কত ইত্যাদি বিচার করেই টিকিটের দামের ওঠানামা ধার্য করা হয়।
আরও পড়ুন: কোন সময় বিমানের টিকিট কাটলে সবচেয়ে কমে পাওয়া যায়?
মূলত মে থেকে জুন মাস এবং অক্টোবর থেকে জানুয়ারি মাসে বিমানের টিকিটের চাহিদা সবথেকে বেশি থাকে। ফলে এই সময়ে টিকিটের দামও বাড়তে থাকে।
কিছু সহজ কৌশল অবলম্বন করলে বিমান টিকিটে ডিল/ডিসকাউন্ট অর্থাৎ বেশ খানিকটা ছাড় পাওয়া যেতে পারে। জানুন সেই কৌশল।
তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার
তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে কম খরচে, ডিসকাউন্ট নিয়ে বিমানের টিকিট কাটা যায়। জানুন এমন কয়েকটি উপায়।
গুগল এক্সপ্লোর
সমস্ত ভ্রমণ-সম্পর্কিত প্রয়োজনের জন্য এক্সপ্লোর গুগলের অন্যতম একটি ভালো পরিষেবা৷ এই অ্যাপটির মাধ্যমে গুগল হোটেল, ফ্লাইট বুকিং, কোথায় গিয়ে কী করতে হবে বা এ রকম অনেক কিছু পরিকল্পনা করতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন: বিমানে শিশুদের ভাড়া কত?
এছাড়াও, এই টুলটি বিমান ভাড়ার স্তর বিন্যাসও দেখিয়ে দেয়। বিমান ভাড়ার বাড়া-কমার খবরও রাখে। ওয়েবসাইটটির মাধ্যমে তুলনামূলক ভাবে কম ভাড়ায় বিমান টিকিট বুক করতে সাহায্য করতে পারে।
ক্রোম প্লাগইন
গুগল ক্রোম কিছু ‘প্লাগ-ইন’ অফার (তৃতীয় পক্ষ) করে যা, বিমান ভাড়ার উপর নজর রাখতে সাহায্য করতে পারে। ফলে সহজেই দেখে নেওয়া যেতে পারে কখন কোন উড়ান অপেক্ষাকৃত সস্তায় পাওয়া যেতে পারে।
ইনকগনিটো মোড ব্যবহার
বেশির ভাগ এয়ারলাইন বা টিকিট বুকিং ওয়েবসাইটগুলো কুকি ব্যবহার করে যাত্রী বা ক্রেতার উপর নজরদারি চালায়। সুযোগ বুঝে দাম বাড়িয়ে দেয়। ধরা যাক কোনও ব্যক্তি ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার বিমান তালিকা ও ভাড়া দেখে রাখলেন। আধঘণ্টা পর তিনি যখন তা বুক করার জন্য ফের ওই ওয়েবসাইটে ঢুকবেন তখন দেখবেন দাম বেড়ে গিয়েছে। এ থেকে মুক্তি পেতে নিজেকে লুকিয়ে ফেলতে হবে। ব্যবহার করতে হবে ইনকগনিটো মোড অথবা মুছে ফেলতে হবে কুকি।
আরও পড়ুন: বিমানের টিকিট কীভাবে কাটবেন
দিনের বেলার ভ্রমণ করুন
অনেক সময়ই দেখা যায় যে দিনের বেলায় বিমান ভ্রমণে ফ্লাইটগুলোতে ভাড়া অপেক্ষাকৃত কম থাকে। সে ক্ষেত্রে সময় যদি তেমন সমস্যা না করে তা হলে তা বেছে নিলে খানিকটা সাশ্রয় হতে পারে। তবে এমন কোনও লিখিত নিয়ম নেই। ফলে বিমানের সময়সূচি এবং ভাড়া মিলিয়ে দেখে নেওয়াই ভালো।
সপ্তাহে এক দিন ভাড়া কম
কোনও বিমান ভাড়া দেখার ওয়েবসাইটে সাধারণত এক সপ্তাহের সর্বনিম্ন ভাড়া দেখানো হয়। ফলে ভ্রমণের দিন নিয়ে খুব বেশি খুঁতখুঁতে ভাব না থাকলে নির্দিষ্ট দিনের দুই এক দিন আগে বা পরের ফ্লাইটগুলো দেখা যেতে পারে। তাতে খরচ খানিকটা বাঁচতে পারে।
কার্ডে ভাড়া পরিশোধে ছাড়
বিভিন্ন ব্যাংকের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড বিমানের টিকিট কাটলে অনেক সময় ছাড় থাকে। এছাড়াও কিছু কিছু ব্যাংক ডেডিকেটেড ট্রাভেল কার্ড অফার করে যা। বিমানের টিকিট কাটার সময় অতিরিক্ত ছাড় দেয়।
এয়ারলাইন্স লয়ালটি পয়েন্ট
গ্রাহক ধরে রাখতে বেশিরভাগ এয়ারলাইনই লয়ালটি প্রোগ্রামের ব্যবস্থা রাখে। এর সঙ্গে টিকিট বুকিং ছাড়ও দেওয়া হয়। কিছু কিছু এয়ারলাইন লয়ালটি পয়েন্ট বা মাইল অফার করে। তাতে খরচ সাশ্রয় হতে পারে।
সোশ্যাল মিডিয়া
এয়ারলাইন্স এবং অন্যান্য অনলাইন টিকিট বুকিং প্ল্যাটফর্মগুলো সাধারণত সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে তাদের অফার সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। ফলে নজর রাখা সহজ।
এয়ারলাইন্স থেকে সরাসরি টিকিট কাটুন
অনেক সময় সরাসরি সংশ্লিষ্ট বিমান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের কাছ থেকে টিকিট কিনলে একটু কম খরচে পাওয়া যায়। তবে এটার জন্য আপনাকে অনেকগুলো এয়ারলাইন কোম্পানির ওয়েবসাইট খুঁজে দেখতে হবে এবং তাদের কাছে ই-মেইলও পাঠাতে হতে পারে।
কয়েক সপ্তাহ আগে টিকিট কিনুন
আপনি যদি আপনার ভ্রমণের তারিখ বিষয়ে নিশ্চিত থাকেন, তাহলে মাস খানেক আগেই ফ্লাইট এর টিকিট কিনে ফেলেন, তাহলে অনেক সস্তায় পেয়ে যাবেন। এরকম সময়ে কেবলমাত্র প্রাথমিক মূল্যে টিকিট বিক্রি করা হয়, এর পরে আস্তে আস্তে সিট ভরতে শুরু করলে বা ফ্লাইট এর সময় এগিয়ে আসতে শুরু করলে মূল্য বাড়তে থাকে।
এসব পদ্ধতি বা কৌশল অবলম্বন করে সস্তায় বিমানের টিকিট কাটতে পারেন।
এজেড