সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

রতন টাটা: মধ্যবিত্তদের নিজের গাড়িতে চড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন

অটোমোবাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০১:১৩ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

টাটা গাড়ির কথা কেনা শুনেছেন। এই গাড়ির জনপ্রিয়তা ভারত ছাঁপিয়ে বাংলাদেশের সড়কেও দেখা যায়। এশিয়ার গণ্ডি পেরিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশের সড়ক কাঁপাচ্ছে টাটা গাড়ি। এই টাটা গাড়ির পেছনে লুকিয়ে আছে রতন টাটার নাম। যিনি এই প্রতিষ্ঠানের পুরোধা ছিলেন। রতন টাটাকে মনে রাখার মতো অনেকগুলো বিষয় থাকতে পারে, কিন্তু ভারতবর্ষের মানুষ তাকে মনে রাখবে উল্লেখযোগ্য একটি কারণে। সেটি হচ্ছে, তিনি মধ্যবিত্ত এমন নিম্নমধ্যবিত্তের বাসিন্দাদের নিজের গাড়িতে চড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন।   

আরও পড়ুন: টাটা ন্যানো গাড়ির কথা মনে আছে? এই গাড়ি ফিরছে ইলেকট্রিক রূপে


বিজ্ঞাপন


বিশ্বের সবথেকে সস্তা গাড়ি তৈরির কথা ভেবে ন্যানো তৈরির কথা ভেবেছিলেন রতন টাটা। বিশ্বের সবথেকে সস্তা গাড়ি হিসাবে টাটা ন্যানো বাজারেও এসেছিল। কিছুদিন ভালোই চলেছিল এই গাড়ি। বিশ্বের সবচেয়ে কম দামি প্রাইভেট কার ছিল এটাই। কিন্তু সেই প্রকল্প মুখ থুবড়ে পরে। প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেনি ন্যানো। সেটা অন্য কথা। কিন্তু রতন টাটার স্বপ্ন কিন্তু অনেক কোম্পানিকেই নতুন করে ভাবায়। কম দামে কী করে গাড়ি বাজারে আনতে হয় সেই পথও দেখায় রতন টাটা। 

ratan

সালটা ছিল ২০০৩। সে বছর জুনের মাঝামাঝি ভারতের মুম্বাইয়ের ফ্লোরা ফাউন্টেনের বম্বে হাউসের অফিস থেকে এক সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরছিলেন টাটা গ্রুপের তৎকালীন চেয়ারম্যান রতন টাটা। বৃষ্টির ফলে যানজটে থমকে গিয়েছে সামনের রাস্তা। রতন টাটা দেখেন রাস্তায় একটি টু-হুইলারে এক দম্পত্তি ও তাদের দুই শিশু সন্তান বৃষ্টিতে ভিজছে। চালক বাদে কারও মাথায় হেলমেট নেই। বৃষ্টিতে মুম্বাইয়ের রাস্তা ততদিনে খানাখন্দে ভরে গিয়েছে। 

আরও পড়ুন: টাটা নেক্সনের নতুন ৫ ভার্সনের গাড়ি এলো


বিজ্ঞাপন


দিনসাতেক পর পর পুণেতে টাটা মোটরর্সের প্ল্যান্টে গিয়ে রতন টাটা সংস্থার ইঞ্জিনিয়ারদের সেই দম্পতির কথা জানিয়ে বলেন, আমরা কি এমন কোনও চার চাকা বানাতে পারি যা এই ধরনের সাধারণ মধ্যবিত্ত কিনতে পারবেন। সে বছরই জেনেভায় কার ফেস্টিভ্যালে তিনি ন্যানো গাড়ির মডেল পেশ করে জানান, ভারতীয়রা মাত্র এক লাখ রুপিতে এই গাড়ি কিনতে পারবেন। 

ratan-p-ic

পুণের কারখানায় মডেল ন্যানো কার তৈরির পর বাজারেও এসে যায়। রতন টাটা ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর রবি কুমার চাইছিলেন, শুধু ন্যানোর জন্য আলাদা একটা প্ল্যান্ট গড়তে। সেই খবর জানাজানি হতে ঝাঁপিয়ে পড়েন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীরা। লড়াইয়ে জিতে যান বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। মার্কসবাদী মুখ্যমন্ত্রীর আগ্রহ মুগ্ধ করে রতন টাটাকে। অনেকবার বলেছেন সে কথা। পাহাড়ি রাজ্যে কারখানা গড়লে বাড়তি আর্থিক ছাড় পাওয়া যায় জেনেও রতন টাটা বাংলাকেই তাই বেছে নেন। বাড়তি কারণ ছিল অদূরে বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, যে দেশগুলো গাড়ি চড়ে, কিন্তু বানায় না।  কলকাতা বন্দরের সুবিধা থাকায় সাগরপথে বাণিজ্যের সুবিধার কথাও তার বিবেচনায় ছিল। টাটা মোটরস তাই বেছে নেয় সিঙ্গুরকে।

আরও পড়ুন: টাটার এই ইলেকট্রিক গাড়ি দ্রুত চার্জ হয়

কিন্তু সিঙ্গুরে আশিভাগ কারখানা হয়েও কেন ব্যর্থ হল ন্যানো প্রকল্প? সিঙ্গুর ব্যর্থ হওয়ার একাধিক কারণের একটি অবশ্যই রতন টাটার ভুল। এছাড়াও আছে একাধিক কারণ।  প্রথমত, গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ভারতবাসীর যে ভাবনা এবং বিবেচনা কাজ করে টাটাদের বিশেষজ্ঞরা সেগুলো বিবেচনায় রাখেননি। পুনের কারখানা থেকে বাজারে আসা ন্যানো গাড়িতে আগুন ধরে যাওয়ার একাধিক ঘটনা জানাজানি হতে সুরক্ষা নিয়ে মানুষ চিন্তিত ছিলেন। গাড়িটির সঙ্গে অটো রিকশার কোনও ফারাক ছিল না। ছোটখাট দুর্ঘটনাতেও চালক-আরোহীর মৃত্যুর বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটে। তাছাড়া ভারতবাসীর গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ্য উপভোগ, সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো ছাড়াও কাজ করে সামাজিক মর্যাদা। ন্যানো গাড়ি ভারতবাসীকে সেটা দিতে পারেনি। 

ratn-[pic

আসলে রতন টাটা দেশবাসীকে সস্তায় চার চাকার গাড়ি চড়াবেন বলে ন্যানোর নাম রেখেছিলেন ‘ইন্ডিয়ান পিপলস কার।’ ভারতীয় সমাজে মজ্জাগত একটি ভাবনা হল রেশন থেকে শুরু করে বাজারে যে পণ্যই জনগণের বা অর্ডিনারি পিপলের, সেগুলো তেমন ভরসাযোগ্য নয়। এই ভুল বুঝতে পেরে টাটারা গাড়ির নাম বদলে করে ইন্ডিয়ান স্মার্ট কার। কিন্তু নামে কী আর চরিত্র বদলায়? 

আরও পড়ুন: গ্যারেজে সুপারকার থাকলেও রতন টাটা চড়েন টাটা মোটরসের গাড়িতেই

ততদিনে ন্যানো গাড়ি নিয়ে মানুষের উৎসাহ উবে গিয়েছে। তাছাড়া টাটারা দু-চাকার গাড়ি বিক্রি করে না বলে গ্রাম-মফস্বলে তাদের কোনও বিপণন কেন্দ্র ছিল না। ফলে লাখ টাকার গাড়ি কিনতেও কয়েক হাজার টাকা খরচ করে মানুষকে শহরে ছুটতে হচ্ছিল। ন্যানো গাড়ি বাজারে না চলার সেটাও একটা কারণ। 

tata

রতন টাটা এক মহৎ উদ্দেশ্যে এই গাড়ির স্বপ্ন দেখলেও তা ব্যবসায়িক কৌশলের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। সে কারণে কোম্পানির পরিচালন বোর্ডেতাঁকে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। তবে ভবিষ্যৎ নিশ্চয়ই তাকে এই কারণে আরও বেশি করে মনে রাখবে যে তিনি সেই ধনপতি ব্যবসায়ী যিনি আম আদমিকে চার চাকা চড়ানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন।

এজেড

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন