তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক
১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:১৯ এএম
বর্তমান ডিজিটাল যুগে ছবি আর ভিডিও মানুষের বিশ্বাসের বড় ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবি মুহূর্তের মধ্যেই জনমত গড়ে দিতে পারে। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতির ফলে এখন এমন সব ছবি তৈরি হচ্ছে, যা দেখলে আসল আর ভুয়া আলাদা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। অনেক সময় মানুষ এসব এআই দিয়ে তৈরি ছবিকে বাস্তব ঘটনা ভেবে বিশ্বাস করছে। এর ফলে তৈরি হচ্ছে বিভ্রান্তি, ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে তা সংঘাতের দিকেও গড়াচ্ছে। তাই কোনও ছবি এআই দিয়ে তৈরি কি না, তা শনাক্ত করতে পারা এখন সবার জন্যই জরুরি।
এআই ছবির কারণে কেন বাড়ছে বিভ্রান্তি
এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখন খুব সহজেই বাস্তবসম্মত ছবি বানানো সম্ভব। কোনও ঘটনা ঘটেনি, তবু এমন ছবি তৈরি করা যায় যা দেখে মনে হয় সেটি বাস্তব দৃশ্য। সামাজিক মাধ্যমে এসব ছবি যাচাই ছাড়াই ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে মানুষ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছে, ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এবং কখনও কখনও পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। এই কারণেই ছবি দেখেই বিশ্বাস করার প্রবণতা এখন বড় ঝুঁকির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

১. ছবির সূক্ষ্ম অংশে নজর দিন
এআই দিয়ে তৈরি ছবিতে অনেক সময় সূক্ষ্ম অসংগতি থেকে যায়। মানুষের মুখের গঠন, চোখের দৃষ্টি, আঙুলের সংখ্যা বা হাতের ভাঁজে অস্বাভাবিকতা দেখা যেতে পারে। কখনও দাঁত বা কান স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেঁকে থাকতে পারে। এসব ছোটখাটো ভুল খেয়াল করলে অনেক সময় বোঝা যায় ছবিটি কৃত্রিমভাবে তৈরি।
২. আলো ও ছায়ার অস্বাভাবিকতা বুঝে নিন
আসল ছবিতে আলো ও ছায়ার একটি স্বাভাবিক নিয়ম থাকে। কিন্তু এআই দিয়ে তৈরি ছবিতে অনেক সময় আলো এক দিক থেকে পড়লেও ছায়া অন্যভাবে দেখা যায়। মুখের এক অংশে আলো বেশি, অন্য অংশে অস্বাভাবিক অন্ধকার বা ব্যাকগ্রাউন্ডের সঙ্গে আলোছায়ার মিল না থাকলে সেটি সন্দেহজনক হতে পারে।

৩. ব্যাকগ্রাউন্ড ও লেখা পরীক্ষা করুন
এআই ছবি তৈরির সময় ব্যাকগ্রাউন্ডে প্রায়ই গলদ থেকে যায়। দূরের মানুষ বা বস্তু ঝাপসা বা অদ্ভুত আকৃতির হতে পারে। দেয়াল, রাস্তার সাইনবোর্ড বা কোনও লেখায় বানান ভুল, অদ্ভুত ফন্ট বা অস্পষ্ট অক্ষর দেখা গেলে সেটিও এআই ছবির ইঙ্গিত হতে পারে। বাস্তব ছবিতে সাধারণত এমন ভুল কম হয়।
৪. ছবির উৎস ও প্রেক্ষাপট যাচাই করুন
কোনও ছবি দেখেই বিশ্বাস না করে সেটির উৎস যাচাই করা জরুরি। ছবিটি কে পোস্ট করেছে, আগে কোথাও প্রকাশিত হয়েছিল কি না, নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যমে সেই ঘটনার উল্লেখ আছে কি না, এসব বিষয় মিলিয়ে দেখা উচিত। অনেক সময় পুরোনো ছবি বা এআই দিয়ে তৈরি ছবি নতুন ঘটনার সঙ্গে জুড়ে দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়।

৫. রিভার্স ইমেজ সার্চের ব্যবহার
একই ছবি আগে কোথাও ব্যবহার হয়েছে কি না, তা জানতে রিভার্স ইমেজ সার্চ কার্যকর পদ্ধতি। এতে বোঝা যায় ছবিটি নতুন নাকি আগে থেকেই ইন্টারনেটে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে এআই দিয়ে তৈরি ছবি বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ঘুরে ফিরে ব্যবহার হয়, যা খুঁজে বের করা সম্ভব।
৬. এআই শনাক্তকারী টুলের সাহায্য নিন
বর্তমানে কিছু অনলাইন টুল রয়েছে, যেগুলো ছবি বিশ্লেষণ করে জানাতে পারে সেটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা কতটা। যদিও এগুলো শতভাগ নির্ভুল নয়, তবু প্রাথমিক যাচাইয়ের ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। বিশেষ করে সংবেদনশীল বা বিতর্কিত ছবি হলে এসব টুল ব্যবহার করা নিরাপদ।
আরও পড়ুন: ফোনের প্যাটার্ন-পিন ভুলে গেছেন? কয়েক মিনিটেই আনলক করার সহজ উপায়
এআই প্রযুক্তি যেমন আমাদের জীবন সহজ করছে, তেমনি ভুল তথ্য ও বিভ্রান্তির ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিচ্ছে। ছবি দেখেই বিশ্বাস করার অভ্যাস এখন বদলানো জরুরি। একটু সচেতনতা, সামান্য যাচাই এবং সন্দেহের চোখে দেখার মানসিকতাই পারে বড় ধরনের বিভ্রান্তি বা সংঘাত এড়িয়ে যেতে। তাই কোনও ছবি দেখলে আগে ভাবুন, যাচাই করুন, তারপর বিশ্বাস করুন—এটাই এখন সময়ের দাবি।
এজেড