আসাদুজ্জামান লিমন
০১ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:১১ পিএম
ঈদের খুশি বাড়াতে বেশিরভাগ মানুষ নতুন জামা-কাপড় কেনেন। ঈদের কেনাকাটায় সম্প্রতি যোগ হয়েছে স্মাটফোনও। অনেকেই এখন নতুন ফোন কিনবেন বলে ঠিক করেছেন। তাদের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিতে পারে টেকনো স্পার্ক ২০ প্রো প্লাস মডেলের ফোনটি। কেননা, এই ফোনে রয়েছে ৮ জিবি র্যাম, ২৫৬ জিবি স্টোরেজ, ১০৮ মেগাপিক্সেলের মেইন ক্যামেরা এবং ৩২ মেগাপিক্সেলের সেলফি ক্যমেরা। এছাড়াও এই ফোনে দেওয়া হয়েছে ১২০ হার্জের কার্ভড অ্যামোলিড ডিসপ্লে। যা এই ফোনটিকে করেছে প্রিমিয়াম।
প্রিমিয়াম ডিজাইন
টেকনো স্পার্ক সিরিজের যতগুলো ফোন এই পর্যন্ত বাজারে এনেছে তার মধ্যে স্পার্ক ২০ প্রো প্লাস অনন্য। এই ফোনে দেওয়া হয়েছে ১২০ হার্জের কার্ভড অ্যামোলিড ডিসপ্লে। ফোনটি যেমন আয়তনে হালকা তেমনি ওজনেও। এর কার্ভড ডিসপ্লে হাতের মুঠোয় প্রিমিয়াম ফিল দেয়। ব্যাকপ্যানেলের বৃত্তাকার ক্যামেরা মডিউল দেখতে বেশ আকর্ষণীয়।
বক্সে যা থাকে
যারা টেকনো স্পার্ক ২০ প্রো প্লাস মডেলের ফোনটি কিনবেন তারা সৃদৃশ্য বক্সে যাবতীয় এক্সেসরিজসহ ফোনটি পাবেন। বক্সটি হাতে নেওয়ার পর বেশ ওজনদার মনে হয়। ফোনটির বক্সটি স্বচ্ছ পলিথিনে র্যাপ করা। বাক্সটি সুরক্ষিত রাখতে চেষ্টার কমতি করেনি টেকনো। বেশ কসরত করে এই কাঠ বোর্ডের বাক্স খোলার পর ভেতরে হলুদ আরেকটা বক্স চোখে পড়ে। যার মধ্যেই থাকে ফোনটি। সেখানেও আরেকটা ধাপের নিরাপত্তা। হলুদ বক্সের ভেতরে পলিথিন প্যাকে মোড়ানো থাকে হ্যান্ডসেটটি। যা কেটে, ছিড়ে ফোনটি উন্মোচন করতে হয়। এরপরও হাতে মেলে টেকনো স্পার্ক ২০ প্রো প্লাস মডেল।
ফোনের বক্সে পাবেন ৩৩ ওয়াটের ফাস্ট চার্জিং অ্যাডাপ্টর, ইউএসবি টাইপ সি চার্জিং পোর্ট। সঙ্গে একটি মনোলোভো হেডফোনও আছে। যা এখনকার দিনে ফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের দেয় না। এছাড়াও আছে সিম কার্ড ট্রে হোল্ডার ইজেক্টর পিন, ডাস্ট অ্যাবজর্ভার, ওয়ারেন্টি কার্ড এবং ম্যানুয়াল।
এই ফোন যারা কিনবেন তাদের আলাদা করে ব্যাককভার এবং স্ক্রিন প্রটেক্টর কিনতে হবে না। এই বক্সের ভেতরেই সব কিছু দেওয়া আছে। শুধুমাত্র দোকান থেকে কিনে এনে প্রথমবার কিছু সময় চার্জ দিয়ে চালু করবেন।
টেকনোর নতুন ফোনের কনফিগারেশন
টেকনো তাদের স্পার্ক সিরিজের নয়া ফোন ২০ প্রো প্লাস ব্র্যান্ডিং করছে ১২০ হার্জের কার্ভড অ্যামোলিড ডিসপ্লে, ১০৮ মেগাপিক্সেলের আল্ট্রা সেনসিং মেইন ক্যামেরা এবং ৩২ মেগাপিক্সেলের গ্লো সেলফি ক্যামেরা ফোন হিসেবে। এই ব্র্যান্ডিং যথোপযোগী। এর সঙ্গে ফোনটির প্রসেসরের কথা বলতেই হয়। এই ফোনে দেওয়া হয়েছে মিডিয়াটেক (এমটিকে) জি৯৯ আল্টিমেট প্রসেসর। যা মূলত গেমিং সিরিজের। মাল্টিটাস্কিংয়ের জন্য আদর্শ।
আরও পড়ুন: সুপারকার ব্লন্ডি: গাড়ির রিভিউ করে কোটি টাকা আয়
নতুন ডিজাইনের এই টেকনো ফোনে পাবেন ৬.৭৮ ইঞ্চির ফুল এইচডি প্লাস অ্যামোলিড ডিসপ্লে। যার রিফ্রেশ রেট ১২০ হার্জ। এই ডিসপ্লে কার্ভড। এতে অ্যামোলিড প্যানেল ব্যবহৃত হয়েছে। যা সাধারণত প্রিমিয়াম, ফ্ল্যাগশিপ ফোনে ব্যবহৃত হয়।
এই ফোনের মূল ক্যামেরা ১০৯ মেগাপিক্সেলের। সঙ্গে আছে আরও দুইটি লেন্স বা সেন্সর। যা ওয়াইড অ্যাঙ্গেল এবং ম্যাক্রো ক্যামেরা হিসেবে কাজ করবে।
রিয়ার ক্যামেরার অ্যাপারচার এফ/১.৮ (ওয়াইড)। সঙ্গে আছে ২ মেগাপিক্সেলের এফ/২.৪ অ্যাপাচারসমৃদ্ধ ম্যাক্রো ক্যামেরা।
সেলফি তোলার জন্য দেওয়া হয়েছে এফ/২.২ ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্সসহ ফ্রন্ট শুটার। যা দিয়ে দিনে, রাতে কিংবা অল্প আলোতে ভালোমানের সেলফি ও ভিডিও ধারণ করা সম্ভব।
ফোনটির মেইন ক্যামেরা দিয়ে ১৪৪০ পি@৩০এফএস রেটে এবং ১০৮০পি @৩০এফপিএস রেটে ভিডিও ধারণ করা সম্ভব। এছাড়াও এই ক্যামেরা কোয়াড এলইডি ফ্ল্যাশ এবং এইচডিআর সাপোর্ট করে।
সেলফি ক্যামেরায় ১০৮০পি @৩০এফপিএস রেটে ভিডিও ধারণ করা যাবে।
ফোনটির ওজন ১৭৯ গ্রাম। পুরুত্ব ১৬৪.৭x৭৫x৭.৬ মিলিমিটার।
ফোনটির সামনের অংশ গ্লাসে ডিজাইন করা। এই গ্লাস প্রটেকশনের জন্য গরিলা গ্লাস ৫ দেওয়া হয়েছে। এর ব্যাক পার্ট প্লাস্টিকের। পুরো ফ্রেমটিও প্লাস্টিকের। ফোনটি ডুয়েল সিম সাপোর্ট করে। সিম ট্রে দেওয়া হয়েছে ফোনের একদম নিচের অংশে। যা একটু ব্যতিক্রম বটে।
এই ফোন আইপি৫৩ রেটিংপ্রাপ্ত। অর্থাৎ হ্যান্ডসেটটি ডাস্ট ও স্প্ল্যাশ রেসিসট্যান্ট।
ফোনটি পরিচালনার জন্য রয়েছে অ্যানড্রয়েড ১৪ অপারেটিং সিস্টেম। সঙ্গে আছে টেকনোর কাস্টমাইজড অপারেটিং সিস্টেম হাই এস ১৩.৬। যা হালনাগাদকৃত।
ভালোমানের গেমস খেলা এবং দুর্দান্ত ভিডিও এক্সপেরিয়েন্স দেওয়ার জন্য টেকনো এই ফোনে মালি-জি৫৭ এমসি২ মডেলের গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট (জিপিইউ) দিয়েছে।
এই ফোনটি দুইটি স্টোরিও স্পিকার রয়েছে। যার একটি নিচের অংশে। অপরটি উপরের অংশে। যদিও এতে ৩.৫ মিলিমিটার অডিও জ্যাক দেওয়া হয়নি। টাইপ সি পোর্টের মাধ্যমে যাবতীয় এক্সটার্নাল হেডফোন, মাইক্রোফোন, কি-বোর্ড কিংবা মাউস সংযুক্ত করা যাবে।
কানেক্টিভিটির জন্য পাবেন টুজি, থ্রিজি এবং ফোরজি। এই ফোনে ৫জি কানেকশন থাকলে আরও ভালো হতো। যদিও বাংলাদেশে এখনো ৫জি চালুই হয়নি। তাই মন খারাপ করার কিছুই নেই।
এছাড়াও আছে ব্লটুথ ৫.২, জিপিএস, গ্লোনাস, এফএম রেডিও-এর মতো আরও কিছু দরকারি ফিচার। নিরাপত্তার জন্য দেওয়া হয়েছে আন্ডার ডিসপ্লে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর। যা এই ফোনটিকে দিয়েছে প্রিমিয়াম টাচ।
সেন্সর হিসেবে আছে অ্যাক্সেলেরোমিটার, প্রক্সিমিটি সেন্সর, কম্পাস।
ব্যাকআপের জন্য দেওয়া হয়েছে ৫০০০ এমএএইচ ব্যাটারি। যা এক থেকে দেড় দিন চলার জন্য যথেষ্ট। এই ব্যাটারি চার্জ করার জন্য টেকনো ৩৩ ওয়াটের ফাস্ট চার্জিং অ্যাডাপ্টর দিয়েছে।
টেকনোর নতুন ফোনের পারফরমেন্স
টেকনো স্পার্ক ২০ প্রো প্লাস কোম্পানির ফ্ল্যাগশিপ ফোন হতে পারে। তবে বাজারের অন্যসব ফোনের সঙ্গে তুলনা করলে এই মডেলকে মিডরেঞ্জ কিংবা আপার মিডরেঞ্জের ফোন বলা যায়। ফোনটিতে ৮ জিবি র্যাম দেওয়া হলেও চাইলে ২৫৬ জিবি স্টোরেজ থেকে আরও ৮ জিবি ভার্চুয়াল র্যাম হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
এই ফোন আপনাকে মৃসৃণ ব্যবহারের অভিজ্ঞতা দেবে। কোনো রকম ল্যাগ ছাড়াই। হাতের মুঠোয় নিয়ে প্রিমিয়াম ফিল পাবেন। ক্যামেরার কনফিগারেশন এই ফোনকে প্রতিযোগিতায় অনেকটাই এগিয়ে রাখবে। কেননা, এর ১০৮ মেগাপিক্সেলের মূল ক্যামেরা এবং সঙ্গে থাকা অন্যান্য সেন্সর, লেন্সের মাধ্যমে দুর্দান্ত ফটোগ্রাফি অভিজ্ঞতা দেবে। অল্প অলোতেও ঝকঝকে ছবি পাবেন নিশ্চিত।
এই ফোনের ক্যামেরায় ম্যাক্রো, টাইমল্যাপ্স, স্লো মোশন এবং ডুয়েল ভিডিও অপশন পাবেন। এছাড়াও আপনি অটো মোডে সব সময় এআই-কে সঙ্গী হিসেবে পাবেন। তাই বারবার মোড পরিবর্তন করার ঝামেলাই নেই। ক্যামেরায় থাকা এআই বুঝে নেবে কখন কোন মোড প্রয়োজন। তখন সেই মোডে ছবি তুলে নেবে।
বাংলাদেশের বাজারে বেশ কয়েকটি রঙে এই ফোন কেনা যাবে ২৬ হাজার ৯৯৯ টাকায়।
এজেড