স্পোর্টস ডেস্ক
২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৩৯ এএম
আমেরিকার মাইনর লিগ ক্রিকেটে (এমআইএলসি) আটলান্টা ফায়ারকে প্রথম শিরোপা জেতাতে নেতৃত্ব দিয়ে যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছেন সাকিব আল হাসান। সাধারণত শান্ত, মনোযোগী ও সিরিয়াস মেজাজের সাকিবকে সেখানে দেখা গেছে একেবারে ভিন্নভাবে। হাসিখুশি, প্রাণবন্ত, ঠিক যেন শৈশবের সেই ছেলেটি ফিরে এসেছে ক্রিকেট মাঠে। এমনটায় জানায় ক্রিকবাজের এক প্রতিবেদনে।
ফায়ারের প্রধান কোচ মন্টি দেসাই বলেছেন, “তোমার ভেতরের শিশুটি বেরিয়ে এসেছে।” দলের সতীর্থরাও জানিয়েছেন, সাকিব ছিলেন দলের সবার সঙ্গে মিশে যাওয়া, সদা হাস্যোজ্জ্বল একজন মানুষ। “ও সবসময় মজা করত, হাসত। একদম আমাদের মতোই ছিল,” ক্রিকবাজকে বললেন ব্যাটসম্যান সাগর প্যাটেল।
বাংলাদেশে থাকলে যার চারপাশে থাকে মিডিয়ার ভিড়, রাজনৈতিক চাপ ও অবিরাম আলোচনা। আমেরিকায় সেই সাকিব ছিলেন একদম মুক্ত। সেখানে শুধু ব্যাট, বল আর সতীর্থদের সঙ্গে হাসিখুশি সময় কাটানো। দলের তারকা হয়েও সাকিব কোনো আলাদা সুবিধা নেননি। সবাই যেমন দুই-তারকা হোটেলে থেকেছেন, তিনিও থেকেছেন। সবাই যেমন সাধারণ খাবার খেয়েছেন, সেও তাই। এমনকি মাঠেও নিজের আরামদায়ক জায়গায় না থেকে সবচেয়ে কঠিন ফিল্ডিং পজিশনগুলোতে দায়িত্ব নিয়েছেন।
৩৭ বছর বয়সে চোখের সমস্যায় ভুগলেও তাঁর পরিশ্রমে কোনো ঘাটতি ছিল না। ম্যাচে কম ব্যাট করার সুযোগ পেলেও নেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনুশীলন করেছেন। দলের তরুণ ক্রিকেটাররা জানিয়েছেন, সাকিব সবসময় পাশে থেকেছেন, মজা করেছেন, এমনকি ব্যাটের গ্রিপ নিয়ে কথা শুনে বলেছিলেন- “ভালো লাগে? পরের সপ্তাহে বলো, তোমাদের জন্য এনে দেব।”
২০২৪ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় তিনি নিরপেক্ষ ছিলেন, তাতেই সমালোচনার ঝড় ওঠে। কেউ বলল তিনি ভীতু, কেউ বলল জনগণের শত্রু। কানাডায় খেলার সময়ও কিছু দর্শক তাকে গালাগাল করেছিল, যা পরে ভাইরাল হয়।
ক্রিকবাজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গে সাকিব বলেন, “আমার মনে হয় জুলাইয়ের সময়টায় কিছু ঘটনা আমার বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে। হয়তো দেশের মানুষ আমার থেকে ভিন্ন কিছু আশা করছিলো, আর আমি ঐ পরিস্থিতিতে ছিলাম না তা করার জন্য। দেশ থেকে এত দূরে থাকায় দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কেও পুরোপুরি জানা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলো না।”
তিনি আরও বলেন, “ঐ একটামাত্র সময়ই তারা আমার বিরোধীতা করে, আমিও তাদের দৃষ্টিকোণ হিসেব করলে বুঝি বিষয়টা, সম্মানও করি তাদের রাগ। কিন্তু আমার অনুশোচনা নেই তা নিয়ে। আমার মনে হয় মানুষও আমার সিচুয়েশন আস্তে আস্তে বুঝতে শুরু করেছে।”
সাকিব আরও জানান, এখনো অবসর নেননি কোনো ফরম্যাট থেকে। বলেছেন, “আমি কোনো ফরম্যাট থেকেই অবসর নিইনি। সুযোগ পেলে অবশ্যই বাংলাদেশে আবার খেলতে চাই। বিদায়টা হোক ঢাকার মাঠে, আমার ভক্তদের সামনে।”
রাজনীতির ঝড়, বিতর্ক সবকিছু সত্ত্বেও সাকিব এখনো নিজের মতেই চলেন। সম্প্রতি শেখ হাসিনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্ট দিয়েছিলেন, যা অনেকে রাজনৈতিক প্রতিবাদ হিসেবেই দেখেছে। সরকারবিরোধীরা আবার তাতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, “মানুষের নিজের মতামত থাকতে পারে, আমি যাদের কাছের মানুষ তাদের ভাবনাকেই গুরুত্ব দিই। আমি আমার কাজ ও নীতিতে অটল।”