স্পোর্টস ডেস্ক
৩১ মে ২০২৫, ০৮:৩৮ পিএম
একটি সই, একটি পত্র, আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয়ে গেল ফারুক আহমেদের বিসিবি অধ্যায়। কিন্তু সত্যি কি এতটাই সরল ছিল এই বিদায়? নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে বহুদিনের জমে থাকা ষড়যন্ত্র, আস্থা-অনাস্থার মুখোশের আড়ালে রচিত এক ‘ক্রিকেটীয় ক্যু’?
বিসিবির ইতিহাসে এমন নাটকীয়তা খুব কমই দেখা গেছে। একদিকে আট পরিচালকের দেওয়া অনাস্থা পত্র। অন্যদিকে দেশের এক দৈনিক গণমাধ্যমে উঠে আসে বিসিবির অভ্যন্তরীণ নথি, যা সেই অভিযোগকে উল্টো দাঁড় করিয়ে দিয়েছে এক রকমের বোমার মতো চমকে।
অভিযোগ ছিল সরাসরি ও নির্দয় ফারুক আহমেদ নিজের খেয়ালে বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে বরখাস্ত করেছেন, বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই। অথচ দেশের এক দৈনিক গণমাধ্যমে উঠে আসে, অফিসিয়াল দলিল বলছে ভিন্ন কথা।
আরও পড়ুন- ৪৮ ঘণ্টার নাটকে বিসিবি সভাপতি বদল, মুখ খুললেন ক্রীড়া উপদেষ্টা
প্রতিবেদনটিতে জানায়, নথিতে স্পষ্টভাবে লেখা- ‘বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ চান্ডিকা হাথুরুসিংহের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বোর্ড তার বরখাস্তের নোটিশ অনুমোদন করেছে।’ অর্থাৎ, বরখাস্তের সিদ্ধান্ত ছিল বোর্ড-স্বীকৃত, ব্যক্তিগত নয়।
এ এক বিস্ফোরক মোড়। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে অনাস্থা পত্রের ভিত্তি কোথায়? কী উদ্দেশ্যে এমন অভিযোগ আনা হয়েছিল? আরও বেশি হতবাক করে দিয়েছে পুরো প্রক্রিয়ার দ্রুততা। অনাস্থা পত্র জমা পড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে আসে সিদ্ধান্তে। ফারুক আহমেদের কাউন্সিলর পদ বাতিল! কোথাও কোনো শুনানি, না কোনো আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ। যেন সব কিছু ছিল পূর্বপরিকল্পিত এক রুদ্ধশ্বাস স্ক্রিপ্টের অংশ!
বিসিবির অভ্যন্তরে দীর্ঘদিন ধরে চলা রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব যেন এবার প্রকাশ্যে এল। কেননা, এটি কেবল একজন সভাপতির অপসারণ নয় বরং বোর্ডের নীতি, স্বচ্ছতা এবং গণতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে এক ধরনের ‘সফট কু’! নতুন সভাপতি হিসেবে এসেছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। এক সময়ের মাঠ কাঁপানো ক্রিকেটার। দায়িত্ব নিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু এই উত্তপ্ত রাজনৈতিক আবহে তার সামনে পথ কতটা মসৃণ হবে?
আরও পড়ুন- ফারুকের বিদায়ের পর মুখ খুললেন হাথুরুসিংহে
এদিকে ক্রিকেটপাড়া হতবাক, বিস্মিত, কেউ কেউ উল্লসিত। তবে কেনো এত তাড়াহুড়ো? কেনো মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সরাতে হলো ফারুককে? শনিবার বিকেলে এই প্রশ্নের জবাব দিতে সামনে এলেন আসিফ মাহমুদ। বললেন, ‘এটা কোনো শাস্তি নয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ফারুক আহমেদের নেতৃত্বে আমরা আশানুরূপ উন্নয়ন দেখিনি। পাকিস্তান সিরিজ জয়ের পর থেকে পারফরম্যান্স শুধু নিচের দিকে গেছে। বিপিএলের অবস্থাও হতাশাজনক।’
তিনি যোগ করেন, ‘আমরা যাকে নিয়োগ দিয়েছিলাম, বিশ্বাস ছিল, তিনি পারফর্ম করবেন। কিন্তু না। পারফরম্যান্সই শেষ কথা। বাফুফে তার উদাহরণ। নতুন নেতৃত্ব, নতুন উদ্দীপনা- আর আজ ফুটবলে এসেছে নবজাগরণ। আমরা সেটাই চেয়েছি ক্রিকেটেও।’
আরও পড়ুন- পাকিস্তানে গেলেই দেশে চেয়ার হারিয়ে ফেলেন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টরা
বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের মেয়াদ ছিল আগামী আগস্ট পর্যন্ত। হাতে ছিল পুরো দুই মাস সময়। অথচ এর আগেই তাকে তড়িঘড়ি করে সরিয়ে ফেলা হলো। ক্রিকেটপমহলে একটাই গুঞ্জন, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কেনো এমন পদক্ষেপ? তবে বিস্ময়ের বিষয়, ঘটনার পর কেটে গেছে দুই দিন, কিন্তু সংশ্লিষ্ট কেউই দেননি এর সরাসরি কোনো ব্যাখ্যা।
আর ফারুক আহমেদ এখনো চুপ। সামনে মুখ খুলবেন, এবং তখন হয়তো বেরিয়ে আসবে সেই গোপন অধ্যায়, যা বিসিবির ইতিহাসকেই নতুনভাবে লিখবে! এই ঘটনাটা যেন একটা থ্রিলার, যেখানে ভিলেন কে, আর হিরো কে, সেটা বোঝাই যাচ্ছে না!