images

ইসলাম

অজুতে ঘাড় মাসেহ করা সুন্নত, নাকি বিদআত?

ধর্ম ডেস্ক

৩১ মে ২০২৩, ০৩:৪০ পিএম

নামাজের জন্য অজু করা শর্ত। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা নামাজে দাঁড়াতে চাও; তখন তোমাদের মুখমণ্ডল ধোও, আর উভয়হাত কনুই পর্যন্ত ধোও, মাথা মাসেহ কর এবং উভয় পা টাখনু পর্যন্ত ধোও।’ (সুরা মায়েদা: ৬)

আল্লাহর রাসুল (স.) বলেন, ‘তোমাদের কারো যদি অজু ভেঙে যায়, তাহলে পুনরায় অজু করার আগ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তার নামাজ কবুল করেন না।’ (বুখারি: ৬৯৫৪; মুসলিম: ২২৫)

হাদিসে আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘জান্নাতের চাবি হচ্ছে নামাজ, আর নামাজের চাবি হচ্ছে অজু।’ (তিরমিজি: ৪)

উল্লেখিত হাদিস ও কোরআনের আয়াতের মাধ্যমে প্রমাণিত হচ্ছে পবিত্রতা অর্জনের জন্য অজুর গুরুত্ব অপরিসীম। 

আমরা জানি যে, অজুর নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। সুন্নাহ পদ্ধতিতে অজু করার অনেক ফজিলত রয়েছে। কেয়ামতের ময়দানে অজুকারী ব্যক্তিদের অঙ্গগুলো নুরের আলোয় ঝলমল করতে থাকবে। হাশরে উপস্থিত সকলে অজুকারী ব্যক্তির দিকে বারবার তাকাতে থাকবে। হজরত নোয়াইম মুজমির (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু হুরায়রা (রা) এর সঙ্গে মসজিদের ছাদে উঠলাম। তিনি অজু করলেন। তারপর বললেন, আমি রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয়ই কেয়ামত দিবসে আমার উম্মতকে এমন অবস্থায় ডাকা হবে, অজুর প্রভাবে তাদের হাত-পা ও মুখমণ্ডল উজ্জ্বল থাকবে। অতত্রব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার ইচ্ছা রাখে, সে যেন তা করে নেয়।’ (বুখারি:১৩৬)

শিরোনামে উল্লেখিত অজুতে ঘাড় মাসেহ করা জরুরি নয়। কিন্তু যারা ঘাড় বা গর্দান মাসেহ করাকে বিদআত বলেন, তাদের কথাও ঠিক নয়। না জানার কারণে তারা এমনটি বলে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে অজুতে গর্দান বা ঘাড় মাসেহ করা মোস্তাহাব। গলা মাসেহ করা বিদআত। (হাশিয়াতুত তাহাবি আলা মারাকিয়িল ফালাহ, ১/১১৫, ১/১১২)

আরও পড়ুন: তায়াম্মুম করার নিয়ম কী, কখন করতে হবে?

এর দলিল হলো— আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- مَنْ تَوَضَّأَ وَمَسَحَ بِيَدَيْهِ عَلَى عُنُقِهِ وُقِيَ الْغُلَّ يَوْمَ الْقِيَامَة ‘যে ব্যক্তি অজু করে এবং উভয় হাত দিয়ে গর্দান বা ঘাড় মাসেহ করে, তাহলে তাকে কেয়ামতের দিন (আজাবের) বেড়ি থেকে বাঁচানো হবে।

ইমাম আবুল হাসান ফারেছ (রহ) বলেন- وَقَالَ هَذَا إنْ شَاءَ اللَّهُ حَدِيثٌ صَحِيحٌ ইনশাআল্লাহ হাদিসটি সহিহ। (তালখিসুল হাবির: ১/৯৩, দারুল কুতুব প্রকাশনী: ১/২৮৮,মুআসসা কুরতুবিয়্যাহ প্রকাশনী: ১/১৬৩)

হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন-বর্ণনাটি সম্পর্কে এ কথা বলা যায় যে, যদিও তা একজন তাবেয়ির কথা হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে তা রাসুলুল্লাহ (স.)-এর হাদিস গণ্য হবে। কেননা, তিনি ছাড়া অন্য কারো পক্ষে এমন সংবাদ দেওয়া সম্ভব নয়।’ (আত তালখিসুল হাবির: ১/৯২, হাদিস: ৯৭)

হজরত তালহা তিনি তার পিতা, তিনি তার দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, আমি নবীজি (স.)-কে দেখেছি, তিনি অজু করছেন। তখন তিনি এভাবে মাথা মাসেহ করেছেন। উভয় হাতকে জমা করে পাস কাটিয়ে তা দিয়ে গর্দান মাসেহ করতেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ১৫০)

আরও পড়ুন: ফরজ গোসলের পর নামাজের জন্য অজু করতে হবে কি?

ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি যখনি মাথা মাসেহ করতেন, তখন মাথা মাসেহের সাথে গর্দানও মাসেহ করতেন। (সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকি: ২৭৯)

অতএব, গর্দান মাসেহকে প্রমাণহীন, ভিত্তিহীন কিংবা বিদআত বলার কোনো সুযোগ নেই। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অজুসহ সকল বিষয়ে সুন্নতের অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।