ধর্ম ডেস্ক
২৭ এপ্রিল ২০২৩, ১১:১৭ পিএম
উটের গোশত খেলে অজু ভাঙে নাকি ভাঙে না—বিষয়টি মতভেদপূর্ণ। এ নিয়ে সাহাবায়ে কেরামের মধ্যেও মতপার্থক্য ছিল। ফলে ফুকাহায়ে কেরামের মধ্যেও মতপার্থক্য হয়ে গেছে। কিছু হাদিসে উটের গোশত খেলে অজু করার নির্দেশ এসেছে। আবার কিছু হাদিসে অজু না করার বর্ণনাও এসেছে। তবে, অধিকাংশ সাহাবি ও ফুকাহায়ে কেরামের মতে উটের মাংস খেলে অজু ভাঙে না।
এ বিষয়ে সহিহ মুসলিমের বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার ইমাম নববি (রহ) বলেন, ‘উটের গোস্ত খেলে অজু ভাঙার বিষয়ে ওলামাদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। অধিকাংশ আলেমের মতে এতে অজু ভঙ্গ হয় না। এ মতই পোষণ করেছেন ইসলামের চার খলিফা তথা আবু বকর (রা.), ওমর (রা.), উসমান (রা.) ও হজরত আলী (রা.)। এছাড়াও এ মতের পক্ষে রয়েছেন সাহাবি আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) উবাই ইবনে কাব (রা.), ইবনে আব্বাস (রা.), আবু তালহা (রা.), আমের বিন রাবিয়া (রা.), উমামা (রা.) এবং জমহুর তাবেয়িগণ এবং ইমাম মালেক (রহ.), ইমাম আবু হানিফা (রহ.), ইমাম শাফেয়ি (রহ) এবং তাঁর ছাত্রবৃন্দ।
অন্যদিকে, অজু ভেঙে যাওয়ার পক্ষে মত ব্যক্ত করেছেন ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.), ইসহাক বিন রাহাওয়াই (রহ.), ইয়াহইয়া বিন ইয়াহইয়া, আবু বকর বিন মুনজির, ইবনে খুজাইমা, ইমাম বায়হাকি প্রমুখ এবং মুহাদ্দিসগণ থেকেও আমভাবে বর্ণিত। একদল সাহাবা (রা.) থেকেও তা বর্ণিত।’ (শরহে সহিহ মুসলিম, ইমাম নববিকৃত-৪/৪৮-৪৯)
আরও পড়ুন: নবজাতকের মতো নিষ্পাপ হতে যেভাবে অজু করবেন
এ সংক্রান্ত কিছু হাদিস ও আছার
গজরদ আবু সাবরাহ (রহ) থেকে বর্ণিত। হজরত ওমর (রা.) উটের গোশত খেয়ে নামাজ পড়লেন, কিন্তু অজু করেননি। (মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক: ১৫৯৮, মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ৫১৭)
হজরত ইয়াহইয়া বিন কায়েস (রহ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনে ওমর (রা.)-কে দেখেছি, তিনি উটের গোশত খেলেন এবং উটের দুধ খেলেন, তারপর অজু করা ছাড়াই নামাজ পড়েছেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ৫১৫)
জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.), আবু বকর (রা.), ওমর (রা.), উসমান (রা.)-এর সাথে রুটি ও গোস্ত খেয়েছি। তাঁরা খাবার পরে নতুন অজু না করেই নামাজ পড়েছেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ৫২১)
জাবির ইবনু সামুরাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে জিজ্ঞেস করলো, আমরা কি বকরির গোশত খেলে অজু করব? তিনি বললেন, তুমি চাইলে করতে পার, না চাইলে করো না। সে আবার জিজ্ঞেস করল, উটের মাংস খাবার পর কি অজু করবো? তিনি বললেন, হ্যাঁ, উটের মাংস খাবার পর অজু কর। অতঃপর সে ব্যক্তি আবার জিজ্ঞেস করলো, বকরি থাকার স্থানে কি সালাত আদায় করতে পারি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, পার। তারপর সে ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, উটের বাথানে কি সালাত আদায় করবো? তিনি বললেন, না। (সহিহ মুসলিম ৩৬০; মেশকাতুল মাসাবিহ: ৩০৫)
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসুল (স.) হাড়ের মাংস খেলেন বা মাংস খেলেন তারপর নামাজ পড়লেন। কিন্তু তিনি অজু করলেন না এবং পানিও স্পর্শ করলেন না।’ (সহিহ মুসলিম: ৩৫৪)
ইকরাশ (রা.) বর্ণিত দীর্ঘ হাদিসের শেষের দিকে এসেছে- ‘..অতঃপর আমাদের পানি দেওয়া হলো। তখন রাসুল (স.) তাঁর উভয় হাত ধৌত করলেন এবং উভয় তালুর ভেজা অংশ দিয়ে চেহারা, বাহু এবং মাথা মাসেহ করলেন। সাথে সাথে বললেন, হে ইকরাশ! এটাই হলো আগুনে রান্না করা খাবার ভক্ষণের পরের অজু। (তিরমিজি: ১৮৪৮,আলমুজামুল কাবির লিততাবারানি: ১৫৪, শুআবুল ঈমান লিলবায়হাকি: ৫৪৫৮)
আরও পড়ুন: অজুর পর যে দোয়া পড়লে জান্নাতের ৮টি দরজাই খুলে যায়
যেসব হাদিসে উটের গোশত খেলে অজু ভেঙে যাওয়ার কথা এসেছে, এর জবাব দুটি।
১) এসব হাদিস ইসলামের প্রথম যুগের। পরবর্তীতে এ বিধান রহিত হয়ে গেছে। (শরহে মুসলিম, ইমাম নববিকৃত-৪/৪৩, ইলাউস সুনান-১/১৭২)
২) অজু করার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো—মুখ ও উভয় হাত ধৌত করা (অর্থাৎ অজু ভেঙে যাওয়ার কারণে পুনরায় অজু করা উদ্দেশ্য নয়)। (শরহে মুসলিম, ইমাম নববিকৃত-৪/৪৩, ইলাউস সুনান-১/১৭২)