ধর্ম ডেস্ক
২৭ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:০৯ পিএম
বৃষ্টি আল্লাহ তাআলার নেয়ামত। আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণের সঙ্গে আল্লাহ অনেক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকেন। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের রিজিকের ব্যবস্থা হয়ে থাকে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘তিনিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, অতঃপর আমি এর মাধ্যমে সর্বপ্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি। অতঃপর আমি এ থেকে সবুজ ফসল নির্গত করেছি, যা থেকে যুগ্ম বীজ উৎপন্ন করি। খেজুরের কাঁদি থেকে গুচ্ছ বের করি, যা নুয়ে থাকে এবং আঙ্গুরের বাগান, জয়তুন, আনার পরস্পর সাদৃশ্যযুক্ত ও সাদৃশ্যহীন। বিভিন্ন গাছের ফলের প্রতি লক্ষ্য করো, যখন সেগুলো ফলন্ত হয় এবং তার পরিপক্কতার প্রতি লক্ষ্য করো। নিশ্চয় এগুলোতে ঈমানদারদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা আনআম: ৯৯)
বৃষ্টির মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বান্দার অনেক উপকার করেন। যেমন—চোখ, কান ও চামড়ার উপকার। পেটের উপকার। বৃষ্টির পানি পান করলে দেহের বিষাক্ত উপাদান বের হয়ে যায়। উন্নতি ঘটে হজম ক্ষমতার। বৃষ্টির পানিতে ভিজলেও উপকার রয়েছে। বৃষ্টির পানি গায়ে লাগানো সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (স.) বৃষ্টির পানি গায়ে লাগাতেন। (সহিহ মুসলিম: ১৯৫৬) বৃষ্টির পানিতে হালকা অ্যালকাইন ও বেশ কিছু অণুজীব থাকে। যেগুলো বিপাকের মাধ্যমে ভিটামিন বি-১২ তৈরি করে। ফলে ভিটামিন বি এর অভাব দূর হয়।
বৃষ্টিতে ভেজার ফলে শরীরে এন্ডোরফিন ও সেরাটোনিন হরমোন ক্ষরণ হয়। এতে দূর হয় মানসিক অবসাদ। এছাড়া বৃষ্টির সময় পরিবেশে যে ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে তাকে বলা হয় পেট্রিকোর। এটি মানুষকে আরও চনমনে করে তুলতে সহায়তা করে। মিনিট পাঁচেক ঝুম বৃষ্টিতে ভিজলে কমে যায় স্ট্রেস লেভেল। সে সঙ্গে দূর হয়ে যায় ক্লান্তিও। মন প্রফুল্ল হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর তা (বায়ু) মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে। অতঃপর তিনি মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তাকে (মেঘমালাকে) স্তরে স্তরে রাখেন। এরপর তুমি দেখতে পাও যে, তার মধ্য হতে বৃষ্টিধারা নির্গত হয়। তিনি তার বান্দাদের মধ্যে যাদের ইচ্ছা তা (বৃষ্টি) পৌঁছান; তখন তারা আনন্দিত হয়।’ (সুরা রুম: ৩৮)
শুধু মানুষ নয়, সৃষ্টিকূলেরও নানা উপকার সাধন হয় বৃষ্টির মাধ্যমে। আল্লাহ তাআলা বৃষ্টিপাত বন্ধ করে দিলে চারণভূমি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। খাদ্যসংকটে মানুষ ও প্রাণীকুল মারা যাবে। এজন্য কল্যাণকর বৃষ্টির জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করা সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (স.) এই দোয়া পাঠ করতেন— اللَّهُمَّ صَيِّبًا نَافِعًا ‘হে আল্লাহ কল্যাণকর বৃষ্টি দাও।’ (বুখারি: ৬৯১)
ইসলামি শরিয়তে বৃষ্টির জন্য বিশেষ নিয়মে প্রার্থনারও নিয়ম রয়েছে। যাকে বলা হয় সালাতুল ইসতিসকা বা বৃষ্টি প্রার্থনার নামাজ। তা কীভাবে আদায় করতে হবে তা-ও মহানবী (স.) উম্মতকে শিখিয়ে দিয়েছেন।
তবে অতিবৃষ্টি ক্ষতিকর। তাই রাসুলুল্লাহ (স.) ক্ষতিকর বৃষ্টি থেকে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন— اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا، وَلاَ عَلَيْنَا ‘হে আল্লাহ আমাদের আশপাশে (জনবসতির বাইরে) বৃষ্টি দাও, আমাদের উপর নয়।’ (বুখারি: ৯৩৩)
হাদিস থেকে জানা যায়, কঠিন ঝড়ো-হাওয়া ও কঠিন বৃষ্টির সময় রাসুলুল্লাহ (স.) আল্লাহর ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকতেন। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বলেন, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হলে এবং ঝড়ো হাওয়া প্রবাহিত হলে প্রিয়নবী (স.) ঘাবড়ে যেতেন এই কারণে যে এটি আল্লাহর আজাব কি না। (সহিহ মুসলিম: ১৯৫৭)
অতএব এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে রহমতের বৃষ্টি বান্দার জন্য আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত। বৃষ্টির সময়টিতে বান্দার দোয়াও কবুল করা হয়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘দুই সময়ের দোয় প্রত্যাখ্যাত হয় না কিংবা কম প্রত্যাখ্যাত হয়। (এক) আজানের সময়। (দুই) বৃষ্টির সময়।’ (সহিহুল জামে: ৩০৭৮)
উল্লেখ্য, বৃষ্টি-বাদল সংক্রান্ত কিছু কুসংস্কার রয়েছে আমাদের সমাজে। এ থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী হওয়া জরুরি। প্রিয়নবী (স.) হাদিসে কুদসিতে বলেন, ‘যে বলে, আল্লাহর করুণা ও রহমতে আমরা বৃষ্টি লাভ করেছি, সে হলো আমার প্রতি বিশ্বাসী এবং নক্ষত্রের (শক্তির) প্রতি অবিশ্বাসী। আর যে বলেছে, অমুক অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে আমাদের উপর বৃষ্টিপাত হয়েছে, সে আমার প্রতি অবিশ্বাসী এবং নক্ষত্রের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী।’ (সহিহ মুসলিম: ৮৪৬)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মহান রবের নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করার তাওফিক দান করুন। কুসংস্কার ও অনৈসলামিক বিশ্বাস থেকে আমাদের হেফাজত করুন। আমিন।