images

ইসলাম

রমজানে দোয়া কবুলের বিশেষ তিনটি সময়

ধর্ম ডেস্ক

২৩ মার্চ ২০২৩, ১২:৪৫ পিএম

মাহে রমজান মুমিনের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ উপহার। এই মাসকে বলা হয় দোয়া কবুলের মাস। রোজাদারের দোয়া আল্লাহ ফিরিয়ে দিতে চান না। মহানবী (স.) বলেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া অগ্রাহ্য করা হয় না (বরং কবুল করা হয়); পিতার দোয়া, রোজাদারের দোয়া এবং মুসাফিরের দোয়া।’ (বায়হাকি: ৩/৩৪৫; সিলসিলাতুস সহিহা, আলবানি: ১৭৯৭ )

এ মাসে বিশেষ তিনটি সময়ের কথা এসেছে হাদিসে, যখন বান্দার প্রতি আল্লাহর করুণার ধারা বর্ষিত হয়। অথচ না জেনেই অনেকে সময়গুলো অবহেলায় কাটিয়ে দেন। নিচে সময়গুলো উল্লেখ করা হলো।

১) ফজরের পর
রমজানে ফজরের পর বেশিরভাগ মানুষ ঘুমিয়ে থাকেন। অথচ সময়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহানবী (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করে, তারপর সূর্য ওঠা পর্যন্ত বসে বসে আল্লাহর জিকির করে, এরপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করে, তার জন্য একটি হজ ও একটি ওমরার সওয়াব রয়েছে।’ (সুনানে তিরমিজি: ৫৮৬)

ইমাম নববি (রহ.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই দিনে আল্লাহকে স্মরণ করার সবচেয়ে উত্তম সময় ফজরের পর’ (আল আজকার, পৃষ্ঠা-১৫৫)। বিজ্ঞ আলেমরা বলেন, ফজরের পর আল্লাহ জীবিকা বণ্টন করেন। তাই এসময়ে ঘুমানো অপছন্দনীয়। বিশেষত রমজান মাসে, যখন আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহের দুয়ার উন্মুক্ত করে দেন এবং প্রতিটি নেক কাজের প্রতিদান বৃদ্ধি করে দেন।

আরও পড়ুন: সকালে ১০০ বার সুবহানাল্লাহ ও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়ার ফজিলত

২) ইফতারের পূর্বমুহূর্ত
পবিত্র রমজানে দোয়া করার জন্য ইফতারের আগমুহূর্ত খুবই মূল্যবান সময়। পূর্ববর্তী আলেমরা ইফতারের আগের সময়টুকু দোয়া ও আল্লাহর জিকিরে মগ্ন থাকতেন। কেননা মহানবী (স.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না—ন্যায়পরায়ণ শাসক, রোজাদার যখন সে ইফতার করে এবং অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৭৫২)

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের সমাজের বেশির ভাগ মানুষ এ সময়ে ইফতার প্রস্তুত করার কাজে ব্যস্ত থাকেন। বিশেষ করে নারীরা আজান পর্যন্ত কাজে লেগে থাকেন, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

আরও পড়ুন: রমজানে নারীরা যেসব আমলে মনোযোগী হবেন

৩) রাতের শেষ তৃতীয়াংশ
রাতের শেষ সময়ে ইবাদত-বন্দেগী-দোয়া আল্লাহর কাছে পছন্দনীয়। আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য শেষ রাতের দোয়া-প্রার্থনার বিকল্প নেই। পবিত্র কোরআনে এসময়ের দোয়া ও প্রার্থনার প্রশংসা করে বলা হয়েছে, ‘তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, অনুগত, ব্যয়কারী এবং শেষ রাতে ক্ষমাপ্রার্থনাকারী।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৭)

নবীজি (স.) বলেন, ‘রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে আমাদের প্রতিপালক পৃথিবীর আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন—কে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব, কে আমার কাছে চাইবে আমি তাকে দান করব, কে আমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করব।’ (সহিহ বুখারি: ১১৪৫)

তাই রোজাদার মুসলমানের উচিত, সেহেরির আগে বা পরে তাহাজ্জুদ আদায়ে সচেষ্ট হওয়া এবং এ সময় আল্লাহর দরবারে ক্ষমা ও কল্যাণ প্রার্থনা করা।

তবে, এমন নয় যে, শুধু এই তিন সময়েই দোয়া-দরুদ কিংবা ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে। বরং জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর ইবাদত ও জিকিরে সজীব করতে সচেষ্ট হন একজন মুমিন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সুতরাং তারা যা বলে, সে বিষয়ে আপনি ধৈর্যধারণ করুন এবং সূর্যোদয়ের আগে ও সূর্যাস্তের আগে আপনার প্রতিপালকের প্রশংসা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন, রাতে পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন এবং দিনের প্রান্তগুলোতেও- যাতে আপনি সন্তুষ্ট হতে পারেন।’ (সুরা ত্বহা: ১৩০)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পবিত্র রমজানের প্রত্যেকটি মুহূর্তের মূল্য বোঝার এবং সে অনুযায়ী যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন।