images

ইসলাম

আল্লাহর রাগের চেয়ে রহমত বেশি

ধর্ম ডেস্ক

০৫ মার্চ ২০২৩, ০৩:৩৬ পিএম

আল্লাহ তাআলার রাগ বা গোস্বার চেয়ে রহমতের প্রশস্ততা বেশি। সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হাদিসে কুদসিতে এসেছে— سَبَقَتْ رَحْمَتِي غَضَبِي অর্থাৎ ‘আমার রহমত আমার গোস্বাকে অতিক্রম করেছে’। তাই যতই সমস্যা আসুক বা পাপ-পঙ্কিলতার কারণে জীবনকে অন্ধকার মনে হোক, আল্লাহর রহমতের আশা ছেড়ে দেওয়া যাবে না। বরং আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া গুনাহের কাজ।

হজরত ইয়াকুব (আ.) যখন ছেলে ইউসুফকে হারানোর পর আরেক ছেলে বিনিয়ামিনকেও হারিয়েছিলেন, তখন অন্য সন্তানদের তিনি নিরাশ না হয়ে দুজনকে অনুসন্ধান করতে আদেশ দেন। এসময় ইয়াকুব (আ.) আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়াকে কুফুরি হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এ ঘটনার বর্ণনা এসেছে পবিত্র কোরআনে। (ইয়াকুব আ. তার ছেলেদের উদ্দেশ্যে বলেন)— ‘হে আমার পুত্রগণ! তোমরা যাও, ইউসুফ ও তার সহোদরের অনুসন্ধান করো এবং আল্লাহর করুণা হতে তোমরা নিরাশ হয়ো না, কারণ কাফের ছাড়া কেউই আল্লাহর করুণা থেকে নিরাশ হয় না।’ (সৃরা ইউসুফ: ৮৭)

আরও পড়ুন: আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া ‘গুনাহের কাজ’

মানুষের জীবনে সমস্যা থাকবেই। বিপদ-আপদ দিয়ে আল্লাহ বান্দাকে পরীক্ষা করেন। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব সামান্য ভয় ও ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফসলের কিছুটা ক্ষতি দিয়ে।’ (সুরা বাকারা: ১৫৫)

কিন্তু বিপদ কিছুটা দীর্ঘস্থায়ী হলে শয়তান তাকে হতাশায় নিমজ্জিত করে এবং আল্লাহর রহমতের কথা ভুলিয়ে দিতে চায়। আল্লাহর সীমাহীন অনুগ্রহ এবং দয়াকে আড়াল করে দিতে চায়। অথচ পবিত্র কোরআনের ভাষ্যমতে, ‘মুমিন কখনও হতাশ হতে পারে না।’ ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।’ (সুরা জুমার: ৫৩)

অনেকে কারো দোষ দেখলেই বলে ওঠে যে, তাকে ক্ষমা করা হবে না। এমন কথা বলার আগে তার ভাবা উচিত যে, মহান রবের দয়া অফুরান। তিনি যে কাউকে ক্ষমা করতে পারেন, আবার যে কোনো ইবাদতগুজার ব্যক্তিকেও জাহান্নামে নিক্ষেপ করতে পারেন। 

এ প্রসঙ্গে জুনদুব (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে—‘এক ব্যক্তি বলল, আল্লাহর কসম! অমুককে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ তাআলা বললেন, কে আমার নামে শপথ করে বলে যে, আমি অমুককে ক্ষমা করব না? বরং আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি এবং তোমার আমলকে নষ্ট করে দিয়েছি। (সহিহ মুসলিম: ৬৫৭৫-১৩৭/২৬২১)

আবু হুরায়রা (রা.) এক বর্ণনায় উল্লেখে করেন, কথাটি যিনি বলেছেন, তিনি ছিলেন একজন ইবাদতগুজার ব্যক্তি। তিনি এমন একটি কথা বলেছেন, যা তার দুনিয়া ও পরকাল উভয়টিকে ধ্বংস করে দিয়েছে।’ (মুসলিম)

আরও পড়ুন: ‘আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবে না’ বলার ভয়াবহ পরিণতি

উল্লেখিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) মুসলিম উম্মাহকে সতর্ক করেছেন এই মর্মে যে, আল্লাহ কোনো অপরাধীকে ক্ষমা করবেন কি করবেন না—এ বিষয়ে শপথ করে বলার অধিকার কারো নেই। এমন করলে নিজেরই দুনিয়া-আখেরাত ধ্বংস হয়ে যাবে।
দয়াবান আল্লাহ তো বান্দাকে ক্ষমা করার সুযোগ খোঁজেন। বনি ইসরাইলের এক লোক ১০০ জনকে হত্যা করেও ক্ষমা পেয়েছিলেন। সহিহ বুখারির ৩৪৭০ ও মুসলিম শরিফের ২৭৬৬ নম্বর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে ঘটনাটি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হতাশা ছেড়ে ক্ষমাশীল প্রভুর রহমতের প্রত্যাশা নিয়ে ‘নেক আমল’ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।