images

ইসলাম

গোপনে নেক আমল করার ফজিলত

ধর্ম ডেস্ক

১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০১:৩৮ পিএম

গোপন নেক আমল মুমিনের সুন্দর একটি গুণ। একে বলা হয়- শক্ত ঈমানের দলিল। আখেরাতের পাথেয় হিসেবে গোপন নেক আমল বান্দার অন্যতম সঞ্চয়। আরবিতে বলা হয় الخبيئة الصالحة আল খাবিআতুস সালিহা। এটি এমন আমল, যা আমলকারী ও আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না।

মুনাফিক কখনো নেক আমল গোপন রাখতে পারে না। তারা কিছু আমল করলেও তা লোক দেখানোর জন্যই করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, অবশ্যই মুনাফেকরা প্রতারণা করেছে আল্লাহর সাথে, অথচ তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতারিত করে। বস্তুত তারা যখন নামাজে দাঁড়ায়, একান্ত অলসভাবে লোক দেখানোর জন্য। আর তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে। (সুরা নিসা: ১৪২)

আরও পড়ুন: আউয়াল ওয়াক্তে নামাজ পড়ার ফজিলত

কেয়ামতের কঠিন দিনে যে সাত প্রকার মানুষকে আল্লাহ আরশের ছায়ায় স্থান দেবেন—সেই সৌভাগ্যবানদের মধ্যে দুইপ্রকার হলো—যে এমনভাবে দান-সদকা করে যে তার ডান হাত কী দান করছে, তার বাম হাতও টের পায় না। অপরজন হলো—নির্জনে-নিভৃতে আল্লাহকে স্মরণ করে; আর তার চোখ দিয়ে অবিরত অশ্রু বয়ে যায়। (বুখারি, আস-সহিহ: ১৪২৩; মুসলিম: ১০৩১)

দুই আমলেরই অভিন্ন বৈশিষ্ট্য হলো, তাদের আমলে গোপনীয়তা লক্ষণীয়। ইমাম মালিক ইবনে আনাস (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মৃত্যু-যন্ত্রণা ও কেয়ামতের দুর্বিষহ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে চায়, সে যেন প্রকাশ্যে আমলের চেয়ে গোপনে অধিক আমল করে।’(তারতিবুল মাদারিক ওয়া তাক্বরিবুল মাসালিক)

সাহাবিদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য ছিল গোপনে নেক আমল করা। আবু বকর (রা.) চুপিসারে গিয়ে এক বৃদ্ধার খেদমত করে আসতেন এবং তাকে খাইয়ে দিতেন। এটি জেনে ফেলেন হজরত ওমর (রা.)। এবার তিনিও সেই বৃদ্ধার খেদমত করার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। আরেক নেককার বান্দা আলী বিন যাইনুল আবিদিন (রহ.) নিজ কাঁধে করে বস্তিবাসীদের নিকট খাবার পৌঁছাতেন অথচ তাদের তিনি নিজের পরিচয় দিতেন না। তিনি মারা যাওয়ার পর বস্তিবাসীর মধ্যে খাবারের জন্য হাহাকার শুরু হয়। তাঁর পিঠে দাগ দেখে তখন সবাই বুঝতে পারে যে, এতদিন সংগোপনে তিনিই খাবার পৌঁছে দিতেন। এমন উদাহরণ সাহাবি-তাবেয়িনদের মাঝে অসংখ্য।

আরও পড়ুন: ওমর (রা.) যেসব কারণে ইতিহাসে অনন্য

ইবনুল কায়্যিম (রহ) বলেন, পূর্বসূরি নেককারদের একটি স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ছিল যে, তারা অন্তত একটি বিশেষ নেক আমল এতটাই গোপন রাখতেন যে, তাদের স্ত্রী বা পরিবারের সদস্যরাও জানতেন না। এর কারণ হলো, অন্তত এই একটি আমল কবুল হওয়ার ব্যাপারে যাতে পুরোপুরি পরিতুষ্ট ও নিশ্চিন্ত থাকা যায়।

ইমাম মালেক (রহ)-এর ব্যাপারে আব্দুল্লাহ বিন মুবারক (রহ) বলতেন, তাঁর মতো এত উঁচু মর্যাদাসম্পন্ন অন্য কাউকে আমি দেখিনি। তিনি যে খুব বেশি নফল নামাজ পড়তেন, রোজা রাখতেন এমন নয়, তবে প্রচুর গোপন নেক আমল ছিল তাঁর।

গোপন নেক আমল কঠিন বিপদের সময় বান্দার পাথেয় হবে। হজরত জুবায়ের বিন আওয়াম (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, من استطاع منكم ان يكون له خبء من عمل صالح فليفعل ‘তোমাদের মধ্যে কেউ কিছু গোপন নেক আমল সঞ্চয় করে রাখতে পারলে সে যেন তা করে।’ (সহিহ আল জামে)

সালাফদের মতে, গুনাহকে যেভাবে গোপন রাখা হয়, সেভাবে নেক আমলগুলোকেও গোপন রাখা উচিত। বরং তা আরো বেশি গোপন রাখা উচিত। কারণ, গোপন নেক আমলের ওসিলায় ফেতনা ও পরীক্ষার সময় দীনের উপর অবিচল থাকা সহজ হয়।

গোপন নেক আমলের কিছু উদাহরণ
১) ঘরে একা থাকলে নফল নামাজ পড়া। বিশেষ করে তাহাজ্জুদ।

২) মনোযোগসহ কোরআন তেলাওয়াত করা

৩) নিজের গুনাহের কথা স্মরণ করে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে দোয়া করা। এসময় অন্য ভাইদের জন্যও দোয়া করা।

৪) সোমবার ও বৃহস্পতিবারে নফল রোজা রাখা। আরবি মাসের মাঝামাঝি তিন দিনও এর আওতাভুক্ত।

৫) নফল সদকা করা (এক্ষেত্রে আত্মীয়স্বজন ও দীনদার বন্ধুবান্ধবের মধ্যে যারা বাহ্যত সচ্ছল, কিন্তু প্রকৃতভাবে তারা অসচ্ছল, তাদেরকে প্রায়োরিটি দেওয়া)

৬) ঋণগ্রস্ত ভাইয়ের ঋণ গোপনে পরিশোধ করে দেওয়া।

৭) অন্যায়ভাবে যেসব ভাই বন্দি, তাদের মুক্তির চেষ্টা করা। এ কাজে অর্থ ব্যয় করা। তাদের পরিবারের পেছনে খরচ করা।

তবে, গোপন আমলে উৎসাহিত করার মানে এই নয় যে, প্রকাশ্যে নেক আমল করা যাবে না। অবশ্যই করা যাবে। তবে, গোপন আমল উত্তম এবং ওই আমলে ইখলাস বা একাগ্রতা থাকে বেশি। তাই ফরজ আমল প্রকাশ্যে আর নফল আমল গোপনে করা উত্তম। আর কিছু আমল একান্ত গোপন রাখতে পারলেই বাজিমাত। হতে পারে সেই আমলটির কারণে মহান প্রভু খুশি হয়ে যাবেন। আর তিনি খুশি হওয়া মানেই বান্দা সফল।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সহায় হোন এবং রিয়ামুক্ত ইবাদত করার ও প্রচুর পরিমাণে গোপন নেক আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।