ধর্ম ডেস্ক
২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০৪:২৭ পিএম
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব হলেও তাদের মধ্যে উত্তম-অধম, জ্ঞানী-মূর্খের পার্থক্য নিরূপণ করেছে ইসলাম। সত্য দ্বীনকে যারা প্রত্যাখ্যান করে তারা মূলত চোখ থাকলেও অন্ধ। ইসলাম বলছে, যার মধ্যে আল্লাহর ভয় বেশি তিনিই প্রকৃত অর্থে জ্ঞানী। আর মহান আল্লাহর ভয় যার মধ্যে নেই এবং আল্লাহর অবাধ্যতায় জীবন পার করে সে নিতান্তই মূর্খ।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তোমার ওপর যা অবতীর্ণ হয়েছে, যে ব্যক্তি তা সত্য বলে বিশ্বাস করে, তার সঙ্গে অন্ধ ব্যক্তির কি তুলনা চলে? শুধু বিবেকশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিরাই উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সুরা রাদ: ১৯)
এই আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহর মনোনীত সত্য দ্বীনকে যারা মনেপ্রাণে গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছে তারাই প্রকৃত বুদ্ধিমান। বুদ্ধিমান বলেই তারা বাস্তব সত্য উপলব্ধি করতে পেরেছে। কিন্তু যারা সত্য দ্বীনকে প্রত্যাখ্যান করে, তাদের চোখ থাকলেও তারা আসলে অন্ধের মতো। তাদের বিবেকবুদ্ধি কুসংস্কার, গোঁয়ার্তুমি ও অজ্ঞতার আবরণে ঢাকা পড়ে গেছে।
আল্লাহ তাআলা প্রকৃত জ্ঞানীর পরিচয় তুলে ধরে বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে বেশি সম্মানী, যে আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় করে।’ (সুরা হুজরাত: ১৩)
আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘..বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, পরম ক্ষমাশীল। (সুরা ফাতির: ২৮)
অতএব, জ্ঞানীর পরিচয় জানার মানদণ্ড হলো তাকওয়া বা আল্লাহর ভয়। শিক্ষিত হোক বা অশিক্ষিত, আল্লাহভীতি থাকলেই বুঝতে হবে তিনি জ্ঞানী, না থাকলে সে জ্ঞানী নয়।
জ্ঞানীরা সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় আল্লাহর কাছেই ধরনা দেয়। তাদের আশা-ভরসার মূলে একমাত্র আল্লাহ তাআলা। বড় বড় কিতাব বা গ্রন্থাগার চষে বেড়ালেও আল্লাহভীতি না থাকলে তারা মূর্খ।
আরও পড়ুন: মুসলিম হয়েও জান্নাতে যাবে না যারা
ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ যথাযর্থই বলেছেন, ‘বড় বড় জ্ঞানী-গুণী, পণ্ডিত-মহাপণ্ডিত ও বিশেষজ্ঞ যা-ই হোন না কেন, কোরআনের জ্ঞান না থাকলে আমি তাকে একজন নিরেট মূর্খ বলেই আখ্যায়িত করব।’
যারা তাকওয়াবান তারা নিরক্ষর হলেও কিছু যায় আসে না। কারণ, প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে সত্য সম্পর্কে জ্ঞান ও তদানুযায়ী কাজ। এর ওপরই মানুষের চূড়ান্ত সফলতা নিহিত। তাকওয়ার ফজিলত বর্ণনায় পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘..যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তার সমস্যার সমাধান সহজ করে দেবেন।’ (সুরা তালাক: ৪)
এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে, তার গুনাহ মুছে ফেলা হবে এবং তাকে পুরস্কৃত করা হবে।’ (সুরা তালাক: ৫)
শুধু আখেরাতে নয় পৃথিবীতেও নানা পুরস্কার দেওয়া হয় মুত্তাকিদের। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা ঈমান এনেছে এবং আল্লাহভীরু হয়েছে, তাদের জন্য জাগতিক জীবনে রয়েছে সুসংবাদ।’ (সুরা ইউনুস: ৬৩-৬৪)
আরও পড়ুন: কোনো হিসাব ছাড়াই জান্নাতে যাবেন যারা
আল্লাহভীরুদের জন্য সবচেয়ে বড় পুরস্কার হলো আল্লাহর ভালোবাসা। ইরশাদ হয়েছে—‘নিশ্চয়ই আল্লাহ খোদাভীরুদের ভালোবাসেন।’ (সুরা হুদ: ১১৩)
এসব বিষয় অনুধাবন করতে পারেন একমাত্র জ্ঞানীরা। তাই তারা মহান প্রভুকে ভয় করেন। সেজদায় লুটিয়ে পড়েন। আল্লাহর ভয়ে কাঁদেন। তাদের প্রশংসায় আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই এর পূর্বে যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তাদের কাছে যখন এটা পাঠ করা হয়, তখন তারা সেজদাবনত হয়ে লুটিয়ে পড়ে।
আর তারা বলে, ‘পবিত্র মহান আমাদের রব! আমাদের রবের ওয়াদা অবশ্যই কার্যকর হয়ে থাকে’। ‘আর তারা কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে।’ (সূরা বানী ইসরাঈল: ১০৭-১০৯)
অতএব, যার মধ্যে তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় বেশি, তিনিই সর্বাধিক জ্ঞানী। আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রত্যেকের অন্তরে তাকওয়া দান করুন। আমিন।