images

ইসলাম

মা বাবার হক আদায় হয়—এমন দোয়া আছে কি?

ধর্ম ডেস্ক

০৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:৫১ এএম

মা-বাবাকে সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে আসীন করেছে ইসলাম। শিরকের পর বড় অপরাধ মা-বাবার অবাধ্য হওয়া। তাই আল্লাহ তাআলা নিজের অধিকারের সঙ্গে সঙ্গেই উল্লেখ করেছেন মা-বাবার অধিকারের কথা। মা-বাবার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমার রব আদেশ দিয়েছেন, তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। আর তাদের সঙ্গে সম্মানজনক কথা বলো।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ২৩)

পবিত্র কোরআনের অনেক আয়াতে মা-বাবার সম্মান ও অধিকারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য- কিছু মানুষ মা-বাবার অধিকারের বিষয়টিকে আজ গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলেছে। তারা মনে করে, কিছু টাকা পয়সা দিলেই মা-বাবার হক আদায় হয়ে যায় কিংবা তাদের জন্য কিছু ফজিলতপূর্ণ দোয়া পড়লেই দায়িত্ব শেষ। তেমনই একটি দোয়ার বর্ণনা শোনা যায়। বর্ণনাটি হলো— হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন রাসুলে কারিম (স.) মদিনা শরিফের মসজিদে বসে বলেছেন, যে ব্যক্তি নিয়মিত নিম্নলিখিত দোয়া পাঠ করবে, রাব্বুল আলামিন তাকে মাতা-পিতার হক আদায়ের সমপরিমাণ নেকি দান করিবেন। 
الْحَمْدُ لِلهِ رَبِّ السَّموَاتِ وَرَبِّ الْعَالَمِينَ، وَلَهُ الْكِبْرِيَاءُ فِي السَّموَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ، الْحَمْدُ لِلهِ رَبِّ السَّموَاتِ وَرَبِّ الْأَرْضِ ورَبِّ الْعَالَمِينَ، وَهُوَ الْعَظَمَةُ فِي السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ، لِلَّهِ الْحَمْدُ رَبِّ السَّموَاتِ وَرَبِّ الْأَرْضِ ورَبِّ الْعَالَمِينَ، وَلَهُ النُّورُ فِي السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ 

আসলে এটি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর হাদিস হিসেবে প্রমাণিত নয়। এর নির্ভরযোগ্য কোনো সনদ নেই। যে সনদে এটি বর্ণিত হয়েছে তাতে বিশ্র ইবনুল হুসাইন নামে একজন বর্ণনাকারী রয়েছেন, যার ব্যাপারে ইমামদের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। ইবনে হিব্বান (রহ) বলেছেন, ‘বিশ্র ইবনুল হুসাইন জুবায়ের (ইবনে আদী) থেকে একটি জাল পুস্তিকা বর্ণনা করে, যাতে একশত পঞ্চাশটির মতো জাল বর্ণনা রয়েছে।’ সুয়ুতী (রহ) ‘জাইলুল লাআলিতে দায়লামির সূত্রে বিশ্র ইবনুল হুসাইন থেকে এর কাছাকাছি একটি বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। ইবনে ইরাক (রহ) ‘তানজিহুশ শরিআহয় উক্ত বর্ণনাটি উল্লেখ করার পর বলেন, وَفِيه بشر بن الْحُسَيْن এ বর্ণনায় বিশ্র ইবনুল হুসাইন রয়েছে। (দ্র. তানজিহুশ শরিআহ, ইবনে ইরাক: ২/৩২৯; জাইলুল লাআলিল মাসনুআহ, সুয়ুতী, পৃ-৬০৫, বর্ণনা: ৭৩৮)

আরও পড়ুন: যেসব গুনাহের কারণে আল্লাহ রাগ করেন

যাই হোক, বর্ণনাটির সূত্র নির্ভরযোগ্য নয়; সুতরাং তা হাদিস হিসেবে বর্ণনা করা বৈধ নয়। ইসলামি শরিয়তে মা-বাবার হক বিষয়টি অনেক গভীর ও ব্যাপক। কেবলমাত্র একটি দোয়ার মাধ্যমে তা আদায় হবার নয়। মা-বাবার হক পরিপূর্ণ আদায় করা কোনো সন্তানের পক্ষে সম্ভবই নয়। শুধু বাবার হকও আদায় করা সন্তানের পক্ষে অসম্ভব। নবীজি (স.) একটি সুন্দর উদাহরণ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে ‘কোনো সন্তানের পক্ষে বাবার প্রতিদান দেওয়া (বা হক আদায় করা) সম্ভব নয়; হ্যাঁ, যদি তাঁকে গোলাম অবস্থায় পায় আর খরিদ করে আজাদ করে দেয়! (সহিহ মুসলিম: ১৫১০)

বাবার বিষয়েই যদি এভাবে বলা হয়, তাহলে মায়ের বিষয়ে নবীজি কী বলতেন। কারণ, ইসলামে মায়ের হক বাবার চেয়ে অনেক বেশি। একবার ইবনে উমর (রা.)-কে এক ব্যক্তি বলল, ‘আমার মাকে আমি খোরাসান থেকে মক্কা পর্যন্ত কাঁধে বহন করে এনেছি এবং কাঁধে করেই হজ করিয়েছি। আপনার কী মত- আমি কি আমার মায়ের প্রতিদান দিতে পেরেছি? ইবনে উমর (রা.) বললেন, না, মোটেও না; তুমি মায়ের প্রসব বেদনার একবারের ‘আহ’-এরও প্রতিদান দিতে পারনি। (দ্র. বিররুল ওয়ালিদাইন, ইবনুল জাওযি, পৃ-৩)

আরও পড়ুন: মৃত মা-বাবার জন্য সন্তানের করণীয়

অতএব, মুসলিম উম্মাহকে মা-বাবার প্রতি সদাচরণে সচেষ্ট হতে হবে। সবসময় তাদের কৃতজ্ঞতা আদায় করতে হবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহর শুকরিয়ার সঙ্গেসঙ্গে মা-বাবার শুকরিয়া করার নির্দেশনা এসেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি মানুষকে তার মা-বাবার সঙ্গে (সদাচরণের) নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্ট ভোগ করতে করতে তাকে গর্ভধারণ করে। তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে। সুতরাং আমার শুকরিয়া ও তোমার মা-বাবার শুকরিয়া আদায় করো।’ (সুরা লোকমান: ১৪)

শেষকথা হলো- মা-বাবার হক আদায়ের জন্য নির্দিষ্ট কোনো দোয়া নেই। নবীজির নামে ভুল কথা থেকে সতর্ক থাকতে হবে। মনে রাখা উচিত- দীনি জ্ঞান শিখতে হবে নির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে এবং এজন্য নির্ভরযোগ্য আলেমের শরণাপন্ন হতে হবে। বাজারের বই থেকে দীনি জ্ঞান অর্জন করা যায় না। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিস প্রচারের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক হওয়ার তাওফিক দান করুন। নির্ভরযোগ্য কিতাব ও আলেমের কাছ থেকে দীনি শিক্ষা অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।