ধর্ম ডেস্ক
২১ ডিসেম্বর ২০২২, ০৪:৩২ পিএম
পবিত্র কোরআনের দ্বিতীয় ও সবচেয়ে বড় সুরার নাম সুরা বাকারা। এটি মাদানি সুরা। আয়াত সংখ্যা ২৮৬। বাকারা অর্থ গাভী। বনী ইসরাইলের এক গাভীর ঘটনা বর্ণিত হয়েছে এ সুরায়। তাই এই সুরার নামকরণ করা হয়েছে সুরা বাকারা।
এই সুরায় বিশ্বাস-অবিশ্বাস, সৃষ্টির রহস্য, জ্ঞান, বনি ইসরাইলের প্রতি বিধান নাজিলের বর্ণনা, ইবরাহিম (আ.)-কে পরীক্ষা, কেবলার দিক পরিবর্তন, ইসলামি বিধি-বিধান ও মুসলমানদের পরীক্ষা করা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া মধ্যমপন্থী সম্প্রদায় হিসেবে উম্মতে মুহাম্মদির পরিচয় তুলে ধরাসহ আয়াতুল কুরসির মতো ফজিলতপূর্ণ আয়াত এই সুরারই অংশ।
পবিত্র কোরআনের প্রত্যেকটি সুরা ও আয়াতের ভিন্ন ভিন্ন ফজিলতের বর্ণনা পাওয়া যায় হাদিসে। সুরা বাকারা তেলাওয়াতেরও বিশেষ ফজিলত রয়েছে। সুরা বাকারা পড়ার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও না পড়লে তা আফসোসের কারণ হবে। আবু উসামা আল বাহিলি (রা.) বলেন, আমি রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছি, ‘তোমরা কোরআন পাঠ করো। কারণ কেয়ামতের দিন তা পাঠকারীর জন্য শাফায়াতকারী হিসেবে উপস্থিত হবে। তোমরা দুটি উজ্জ্বল সুরা অর্থাৎ সুরা বাকারা এবং সুরা আলে ইমরান পড়ো। কেয়ামতের দিন এ দুটি সুরা এমনভাবে আসবে যেন তা দুই খণ্ড মেঘ অথবা দুটি ছায়াদানকারী অথবা দুই ঝাঁক উড়ন্ত পাখি, যা তার পাঠকারীর পক্ষ হয়ে কথা বলবে। আর তোমরা সুরা বাকারা পাঠ করো। এ সুরাটিকে গ্রহণ করা বরকতের কাজ এবং পরিত্যাগ করা পরিতাপের কারণ।’ (মুসলিম: ১৭৫৯)
আরও পড়ুন: কোরআন যাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করে না
জুবায়র ইবনু নুফায়র (রহ.) থেকে আরেক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, নাওয়াস ইবনু সামআন কিলাবি (রা.) বলেছেন, নবীজি (স.)-কে আমি বলতে শুনেছি যে কেয়ামতের দিন কোরআন ও কোরআন অনুযায়ী আমলকারীদের সামনে সুরা বাকারা ও সুরা আলে ইমরান পেশ করা হবে। রাসুলুল্লাহ (স.) এ দুটির জন্য তিনটি উপমা উল্লেখ করেছেন যেগুলো এখনও আমি ভুলে যাইনি। তিনি বললেন, তারা যেন দুটি কালো মেঘ বা দুটি কালো ছায়া অথবা উড়ন্ত পাখির দুটি ঝাঁক, তাদের মালিকের পক্ষে আবেদন করছে।’ (সহিহ মুসলিম: ১৭৪৯)
সুরা বাকারা শয়তানকে কঠিনভাবে বাধা দিতে সক্ষম। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবর বানিও না। যে ঘরে সুরা বাকারা পড়া হয় সে ঘর থেকে শয়তান পালিয়ে যায়।’ (সহিহ মুসলিম: ৭৮০)
আরও পড়ুন: আল্লাহর কাছে শয়তানের ৪ আবেদন
এই সুরার শেষের আয়াতগুলোর ফজিলত নিয়ে অসংখ্য হাদিস রয়েছে। এক হাদিসে আবু মাসউদ আনসারি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সুরা বাকারার শেষ আয়াতদ্বয় রাতে পাঠ করবে তার জন্য তা যথেষ্ট হয়ে যাবে..।’ (সহিহ বুখারি: ৪০০৮; সহিহ মুসলিম: ১৭৫৩)
উল্লেখ্য, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। যেকোনো সুরা বা আয়াত তেলাওয়াতের সওয়াব রয়েছে। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, পবিত্র কোরআনের প্রতিটি হরফ তেলাওয়াতের বিনিময়ে সর্বনিম্ন ১০টি নেকি পাওয়া যায়। (তিরমিজি: ২৯১০)
আরও পড়ুন: কোরআন না বুঝে ও বুঝে পড়ার পার্থক্য
কোরআনের পরিচর্যাকারী হলেন প্রাণবন্ত মানুষ। কোরআনহীন হৃদয়কে বলা হয়েছে মৃত মানুষের মতো। এ প্রসঙ্গে নবী (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির বুকে কোরআনের কোনো অংশ নেই সে যেন বিরান ঘর।’ (তিরমিজি: ২৯১৬)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুরা বাকারাসহ পবিত্র কোরআনের প্রত্যেকটি সুরা বেশি বেশি তেলাওয়াত করার তাওফিক দান করুন। কোরআনের রঙে নিজেকে ও সমাজকে রঙিন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।