ধর্ম ডেস্ক
১৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০২:০৭ পিএম
আরশ আল্লাহ তাআলার সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে বড় ও অলৌকিক। মহান আল্লাহ সেই আরশেই অবস্থান করেন। পবিত্র কোরআনে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘দয়াময় (আল্লাহ) আরশে সমাসীন’ (সুরা ত্বহা: ৫)। অন্য আয়াতে এসেছে, ‘...তিনি মহা আরশের অধিপতি।’ (সুরা তওবা: ১২৯)
আরশের ওপর রাব্বুল আলামিন তাঁর মর্যাদা ও অবস্থান অনুযায়ী সমাসীন। ইরশাদ হয়েছে, ‘মহিমান্বিত আল্লাহ, যিনি প্রকৃত মালিক, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি সম্মানিত আরশের অধিপতি।’ (সুরা মুমিনুন: ১১৬)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় প্রখ্যাত তাফসিরবিদ আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) লিখেছেন, ‘মহান আল্লাহ সব কিছুর মালিক ও স্রষ্টা। কেননা তিনি মহান আরশের অধিপতি, যা সৃষ্টিজগতের ছাদস্বরূপ। আসমান-জমিন ও উভয়ের মধ্যবর্তী সব কিছু আল্লাহর কুদরতে আরশের নিচে বিদ্যমান। আল্লাহর জ্ঞান সব কিছু ঘিরে আছে। সব কিছুর ওপর তাঁর কুদরত কার্যকর। তিনি সব কিছুর রক্ষণাবেক্ষণকারী।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির: ২/৪০৫)
আরও পড়ুন: যে সাহাবির সঙ্গে কথা বলেছেন মহান আল্লাহ
আরশের বিশালতা ও ব্যাপ্তি সাত আসমান, সাত জমিন ও কুরসি থেকেও বড়। আল্লাহর আরশ সাত আসমান সাত জমিন ও কুরসি সবগুলোকেই বেষ্টন করে আছে। হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আসমান ও জমিনের দূরত্ব পাঁচশ বছর, প্রত্যেক আসমানের দূরত্ব পাঁচশ বছর, সপ্তম আসমান ও কুরসির দূরত্ব পাঁচশ বছর, কুরসি ও পানির দূরত্ব পাঁচশ বছর, আরশ পানির ওপর, আল্লাহ আরশের ওপর। আল্লাহর কাছে তোমাদের কোনো আমল গোপন নয়। (বায়হাকি: ৪০১ পৃষ্ঠা)
এই বিশাল আরশ কীভাবে স্থির আছে? এই আরশ কারা বহন করছেন? মূলত একদল শক্তিমান ফেরেশতা মহান আল্লাহর আরশকে ধারণ করে আছেন। তাঁদের সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যারা আরশ ধারণ করে আছে এবং যারা এর চতুষ্পার্শ্ব ঘিরে আছে, তারা তাদের রবের সপ্রশংসা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং তারা তাঁর প্রতি ঈমান আনে...। ’ (সুরা মুমিন: ৭)
জাবের বিন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘আমাকে আরশ ধারণকারী ফেরেশতাদের সম্পর্কে বলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তাঁরা এমন যে তাঁদের কানের লতি থেকে গর্দানের শেষ সীমানার মধ্যবর্তী স্থানে দ্রুতগামী ঘোড়ার ৭০০ বছরের দূরত্ব রয়েছে।’ (আবু দাউদ: ৪৭২৭)
হাদিসবিদ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) লিখেছেন, ‘হাদিসটির সনদের সূত্র সহিহ।’ (ফাতহুল বারি: ৮/৬৬৫)
আরও পড়ুন: ডানার সাহায্যে ফেরেশতারা যেসব কাজ করেন
আরশের অনেক খুঁটি রয়েছে। যেভাবে সিংহাসনের খুঁটি থাকে। এ সম্পর্কে হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবীজি (স.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন সব মানুষ বেহুঁশ হয়ে যাবে। অতঃপর সর্বপ্রথম আমারই হুঁশ ফিরবে। তখন আমি মুসাকে (আ.) দেখতে পাব যে, তিনি আরশের খুঁটিসমূহের মধ্যে একটি খুঁটি ধরে রয়েছেন। আমি জানি না, আমার আগেই কি তাঁর হুঁশ এলো, নাকি তুর পাহাড়ে বেহুঁশ হওয়ার প্রতিদান তাকে দেওয়া হলো।’ (বুখারি : ৩৩৯৮)
অন্যদিকে আল্লাহর কুরসি সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘...তাঁর কুরসি আকাশ ও পৃথিবীময় পরিব্যাপ্ত..।’ (সুরা বাকারা: ২৫৫)
আরশ ও কুরসি কি অভিন্ন—এ প্রশ্ন নিয়ে তাফসিরবিদদের ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা দেখা যায়। তবে বিশুদ্ধ কথা হলো— আরশ ও কুরসি এক নয়। এ বিষয়ে ইবনে আব্বাস (রা.)-এর একটি বক্তব্য পাওয়া যায়। ইবনে আবি শায়বা (রহ.) তাঁর ‘সিফাতুল আরশ’ নামক গ্রন্থে এবং হাকিম (রহ.) তাঁর ‘মুসতাদরাক’ গ্রন্থে সাঈদ বিন জুবাইরের সূত্রে ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, ‘কুরসি হলো মহান আল্লাহর কুদরতি কদম (পা) মুবারক রাখার স্থান।’ কুরসিও আল্লাহ তাআলার অনেক বড় সৃষ্টি। পবিত্র কোরআনে এর বিশালতা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তাঁর কুরসি সব আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে।’ (সুরা বাকারা: ২৫৫)
আরও পড়ুন: আল্লাহর কুদরতের কিছু অনুপম নিদর্শন
এই আয়াতের তাফসিরে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত একটি ব্যাখ্যা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘কুরসি হলো দুই পা রাখার স্থান এবং আরশের বিশালতার পরিমাণ আল্লাহ ছাড়া কেউ অনুমান করতে পারে না।’ (তাফসিরে তাবারি: ৩/১০)
হজরত আবু জর গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নবীজিকে (স.) কুরসি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলো। তিনি বলেন, আরশের সামনে কুরসির তুলনা ভূপৃষ্ঠের কোনো ময়দানে নিক্ষিপ্ত আংটির মতো এবং কুরসির তুলনায় আরশের মর্যাদা আংটির তুলনায় ময়দানের মর্যাদার মতো। আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আল্লাহর আরশের তুলনায় কুরসি এত ছোট যে তা যেন একটি বিশাল মরুভূমিতে পড়ে থাকা আংটির মতো।’ (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া: ১/১৪)
আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) লিখেছেন, এই বর্ণনার সূত্র বিশুদ্ধ। কুরসি হলো ওই আংটিতুল্য। আর ওই মরুভূমি হলো আরশতুল্য। অথচ কুরসিটাই আকাশ ও পৃথিবীময় পরিব্যাপ্ত। তাহলে আল্লাহর আরশ কত বড়!