ধর্ম ডেস্ক
১৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০৫:১১ পিএম
পবিত্র কোরআনে কারিমে এমন কিছু আয়াত রয়েছে, যেগুলোর তেলাওয়াত করলে বা শুনলে মুমিন পাঠক ও শ্রোতাকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে একটি সেজদা করতে হয়। এই সেজদাকে সেজদায়ে তেলাওয়াত বলা হয়। এই সেজদা তেলাওয়াতকারী এবং শ্রবণকারী উভয়ের উপর ওয়াজিব।
হানাফি মাজহাবমতে সেজদার আয়াতগুলো হলো-
১. সুরা আরাফ: ২০৬। ২. সুরা আর-রাদ: ১৫। ৩. সুরা আন নাহল: ৪৯। ৪. সুরা বনি ইসরাইল: ১০৯। ৫. সুরা মরিয়ম: ৫৮। ৬. সুরা হজ: ১৮। ৭. সুরা ফোরকান: ৬০। ৮. সুরা নমল: ২৬। ৯. সুরা সিজদা: ১৫। ১০. সুরা সাদ: ২৫। ১১. সুরা হা-মীম সিজদা: ৩৮। ১২. সুরা নাজম: ৬২। ১৩. সুরা আল ইনশিকাক: ২১। ১৪. সুরা আলাক: ১৯।
আরও পড়ুন: কোরআন স্পর্শে পবিত্রতা জরুরি কেন?
তেলাওয়াতে সেজদার নিয়ম-কানুন
তেলাওয়াত শব্দ করে বা নিঃশব্দে যেভাবেই করা হোক না কেন— সেজদা করতেই হবে। তবে একই আয়াত বারবার পড়লে, তেলাওয়াতশেষে একবার সেজদা করলে যথেষ্ট হবে। তেলাওয়াতে সেজদার পদ্ধতি হলো- হাত না উঠিয়ে দাঁড়ানো থেকে আল্লাহু আকবর বলে সোজা সেজদায় চলে যেতে হবে এবং ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আলা’ তিনবার পড়ে আল্লাহু আকবর বলে দাঁড়াতে হবে। সেজদা হবে মাত্র একটি। এতে তাশাহ্হুদ নেই, সালামও নেই। এই সেজদার জন্য হাত উঠাতে বা বাঁধতে হবে না এবং দুইটি সেজদাও করতে হবে না। যদি না দাঁড়িয়ে বসে বসে সেজদা করে অথবা সেজদা করে বসে থাকে তাও জায়েজ আছে। পুরুষদের জন্য আল্লাহু আকবর জোরে বলা উত্তম।
আরও পড়ুন: শুকরিয়ার সেজদায় কি অজু করা ও সতর ঢাকা জরুরি?
কেউ ইচ্ছাপূর্বক শুনে থাকুক কিংবা অন্য কাজে নিয়োজিত থাকাবস্থায় শুনে থাকুক অথবা অজুহীন অবস্থায় শুনে থাকুক— সেজদার আয়াত যে শুনবে, তার ওপরই সেজদা করা ওয়াজিব। এজন্য সেজদার আয়াত তেলাওয়াতকালে চুপে চুপে তেলাওয়াত করা ভালো; যাতে অপর কোনো ব্যক্তিকে অসুবিধায় পড়তে না হয়। নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য যেসব শর্ত আছে, যেমন অজু থাকা, জায়গা পাক, শরীর পাক, কাপড় পাক এবং কেবলামুখি হওয়া। তেলাওয়াতের সেজদার জন্যও এসব শর্ত প্রযোজ্য। নামাজের সেজদা যেভাবে আদায় করতে হয়, তেলাওয়াতের সেজদাও সেভাবে আদায় করতে হবে। কেউ কেউ কোরআনে কারিমের ওপর সেজদা করে—এটি ভুল। এতে সেজদা আদায় হবে না। জেনে রাখা উচিত যে বুঝমান নাবালেগ শিশু থেকে সেজদার আয়াত শুনলেও শ্রোতার ওপর সেজদায়ে তেলাওয়াত ওয়াজিব হয়। নামাজরত ব্যক্তি যদি বাইরের লোকের কাছে অথবা বাইরের লোক নামাজরত ব্যক্তির কাছে আয়াতে সেজদা শোনে তাহলেও তাদের ওপর সেজদা ওয়াজিব হবে। তবে নামাজরত ব্যক্তি নামাজ শেষ করে আলাদাভাবে সেজদা আদায় করবে।
আরও পড়ুন: নামাজরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে হাঁটাচলার বিধান
প্রসঙ্গত, পুরো কোরআন মাজিদে তেলাওয়াতে সেজদার আয়াত মোট ১৪টি। সুতরাং পুরো কোরআন মাজিদ খতম করার পর ১৪টি সেজদা করে নিলে এক খতমের সকল সেজদা আদায় হয়ে যাবে। তবে একাধিক খতম করে কিংবা সারাজীবন যত তেলাওয়াতে সেজদা ওয়াজিব হবে— সবগুলোর জন্য ১৪টি সেজদা আদায় করে নিলেই যথেষ্ট হবে; তবে এ ধারণা ঠিক নয়। বরং যতগুলো সেজদার আয়াত যতবার তেলাওয়াত করা হয়েছে, সবগুলোর জন্য পৃথক পৃথক সেজদা দিতে হবে। শুধু এক বৈঠকে একটি সেজদার আয়াত একাধিকবার পড়লে সেক্ষেত্রে একটি সেজদা ওয়াজিব হবে। উল্লেখ্য, সেজদায়ে তেলাওয়াত বিলম্ব না করে সেজদার আয়াতের পরেই আদায় করা উচিত।
(তথ্যসূত্র: শরহুল মুনইয়া: ৫০১; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১৩৪; ফতোয়ায়ে খানিয়া: ১/১৫৮)