ধর্ম ডেস্ক
১১ ডিসেম্বর ২০২২, ০৪:০৭ পিএম
বিয়ে আল্লাহপ্রদত্ত বিশেষ নেয়ামত এবং রাসুলুল্লাহ (স.)-এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। বিয়ে চরিত্র রক্ষার হাতিয়ার। আল্লাহ তাআলা বান্দাকে অসংখ্য ফেতনা, ক্ষয়-ক্ষতি, নানা অসুখ-বিসুখ ও সমস্যা থেকেও মুক্তি দান করেন বিয়ের কারণে। তাই সক্ষমতা থাকলে দ্রুত বিয়ে করা আবশ্যক।
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন—‘হে যুবকেরা! তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিবাহ করে নেয়। কারণ, বিবাহ চক্ষুকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে।’ (বুখারি: ৫০৬৬; মুসলিম: ১৪০০)
বিয়ের মাধ্যমে দীনের অর্ধেক পূরণ হয়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যখন বান্দা বিয়ে করে, তখন সে তার দীনের অর্ধেক পূরণ করে। অতএব, বাকি অর্ধেকাংশে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে।’ (সহিহ আল-জামিউস সাগির ওয়া জিয়াদাতুহু: ৬১৪৮; তাবারানি: ৯৭২; মুসতাদরাক হাকিম: ২৭২৮; আলবানি বলেন, হাদিসটি হাসান লিগাইরিহি)
আরও পড়ুন: হাদিসের আলোকে ‘নেককার স্ত্রী’ চেনার উপায়
রাসুলুল্লাহ (স.) আরও বলেন, ‘আল্লাহ যাকে পুণ্যময়ী স্ত্রী দান করেছেন, তাকে তার অর্ধেক দীনে সাহায্য করেছেন। সুতরাং বাকি অর্ধেকের ব্যাপারে তার আল্লাহকে ভয় করা উচিত।’ (তাবারানির আওসাত: ৯৭২; সহিহ তারগিব ওয়াত তারহিব: ১৯১৬; আলবানি এই হাদিসকেও হাসান লিগাইরিহি বলেছেন)
সামর্থ্যহীনতার অজুহাতে বিয়ে করতে দেরি নয়
ইসলামে বিয়ের ব্যাপারে এত গুরুত্ব দেওয়ার পরও অনেকে অর্থ-সংকটের কথিত অজুহাতে কিংবা ক্যারিয়ারের চিন্তায় বিয়ে করতে বা করাতে গড়িমসি করেন। অথচ তাদের এ ধরনের চিন্তা-ভাবনা শরিয়তের আলোকে গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা মানুষের আয়-রোজগার স্থায়ী বিষয় নয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে আছে—
‘তিন প্রকারের মানুষকে সাহায্য করা আল্লাহ তাআলা নিজের কর্তব্য হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। ১. আল্লাহ তাআলার পথে জিহাদকারী। ২. মুকাতাব গোলাম- যে চুক্তির অর্থ পরিশোধের ইচ্ছা করে। ৩. বিয়ে করতে আগ্রহী, যে পবিত্র জীবন যাপন করতে চায়। (ইবনে মাজাহ: ২৫১৮)
সম্প্রীতি ও সচ্ছলতা আসে বিয়ের মাধ্যমে
প্রথম মানব-মানবী হজরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)-এর বিয়ের মাধ্যমে এই পবিত্র বন্ধনরীতির প্রচলন হয়। বিয়ে শুধু জৈবিক চাহিদাই নয়, বরং এক মহান ইবাদতও বটে। বিয়ের মাধ্যমে জীবন পরিশীলিত, মার্জিত ও পবিত্র হয়। সম্প্রীতি, দয়া ও সচ্ছলতা আসে বিয়ের মাধ্যমে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাকো এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা রুম: ২১)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত, তাদের বিয়ে করিয়ে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। যারা বিয়েতে সামর্থ্য নয়, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে, যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করে দেন। (সুরা নুর: ৩২-৩৩)
আরও পড়ুন: স্বামী কতদিন স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে থাকতে পারবে?
রোদ, বৃষ্টি, ঠাণ্ডা থেকে রেহাই পেতে এবং সৌন্দর্য বর্ধন করতে যেমন পোশাকের প্রয়োজন। বিয়েও ঠিক তেমনই, দুইজন মানুষকে এমনভাবে এক করে, তারা একে অপরের পোশাক এর মতো হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তারা (স্ত্রীগণ) তোমাদের পোশাক এবং তোমরা (স্বামীগণ) তাদের পোশাকস্বরূপ`। (সুরা বাকারা: ১৮৭)
নারী থেকে দূরে থাকার নিয়তে অবিবাহিত থাকা যাবে না
বিয়ে না করা আল্লাহর রাসুলের পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ সুন্নতের সঙ্গে বেয়াদবি করার শামিল। এমনকি সওয়াবের নিয়তেও যদি হয়। হাদিসে ওসব ব্যক্তিদেরকে কঠিন হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘তিন ব্যক্তি আল্লাহ রাসুল (স.)-এর ঘরে আসলেন। তারা ঘরবাসীদের রাসুল (স.)-এর ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তাঁর ইবাদতের কথা শুনে তারা যেন বলল, কোথায় আল্লাহ রাসুল (স.) আর কোথায় আমরা? তার আগের ও পরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে।
তখন তাদের একজন বলল, আমি সারাজীবন রাতভর ইবাদত করব। আরেকজন বলল, আমি আজীবন রোজা রাখব; কখনো রোজা ভাঙব না। অন্যজন বলল, আমি নারীদের থেকে দূরে থাকব; কখনো বিয়ে করব না। আল্লাহর রাসুল (স.) তখন তাদের কাছে এসে বললেন, ‘আরে! তোমরা এমন-অমন বলছো না! অথচ আমি তোমাদের সবার চেয়ে বেশি আল্লাহকে ভয় করি। কিন্তু আমি রোজা রাখি, আবার ইফতারও করি। নামাজ পড়ি, আবার ঘুমাই। বিয়েও করি। অতএব, যারা আমার সুন্নত ছেড়ে দেবে, তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (বুখারি: ৫০৬৩; মুসলিম: ১৪০১)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর যুবকদের যথাসময়ে বিয়ে করার তাওফিক দান করুন। অভিভাবকদেরকে সুন্নতের অনুসারী হওয়ার ও সুন্নতচর্চায় সন্তানের সহযোগী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।