ধর্ম ডেস্ক
০৭ ডিসেম্বর ২০২২, ০২:৪৩ পিএম
রাতের ইবাদত আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম। রাতে যেকোনো নফল ইবাদতের গুরুত্ব বেশি। তাহাজ্জুদের মতো মহান ইবাদতও রাতে সীমাবদ্ধ। এজন্যই পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই রাতে জাগরণ ইবাদতের জন্য গভীর মনোনিবেশ, হৃদয়ঙ্গম এবং স্পষ্ট উচ্চারণে অনুকূল।’ (সুরা মুজ্জাম্মিল: ৬)
পূর্বসূরি মুসলিম মনীষীরা রাতের ইবাদতে জোর দিতেন। এতে সওয়াব বেশি, আবার গুনাহেরও কাফফারা হয়। আবু উমামাহ (রা.) বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন, তোমরা অবশ্যই রাতে ইবাদত করবে। কারণ এটা তোমাদের আগের নেককারদের অভ্যাস। এটি আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় আর পাপের কাফফারাস্বরূপ। (তিরমিজি: ৩৬১৯)
আরও পড়ুন: ফরজ বাধ্যতামূলক, নফলে আল্লাহর নৈকট্য
আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতি দয়াবান। তাই তিনি নবী কারিম (স.)-এর মাধ্যমে আমাদের এমন কিছু আমল বলে দিয়েছেন, যার মাধ্যমে আমরা সহজেই রাতভর ইবাদতের সওয়াব অর্জন করতে পারি। নিচে হাদিসের আলোকে সেরকমই কিছু আমল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
জামাতের সঙ্গে ফজর ও এশার নামাজ আদায়
উসমান ইবনে আফফান (রা.) বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি এশার নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করে তার জন্য অর্ধরাত (নফল) নামাজ আদায়ের সওয়াব রয়েছে। যে ব্যক্তি এশা ও ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করে তার জন্য সারা রাত (নফল) নামাজ আদায়ের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে। (তিরমিজি: ২২১)
আরও পড়ুন: যে দুরাকাত নামাজে তাহাজ্জুদের সওয়াব
রাতে সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত তেলাওয়াত
আবু মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘সুরা বাকারার শেষে এমন দুটি আয়াত রয়েছে যে ব্যক্তি রাতের বেলা আয়াত দুটি তেলাওয়াত করবে তার জন্য এ দুটি আয়াত যথেষ্ট’ (বুখারি: ৪০০৮)। ইমাম নববি (রহ.) বলেন, অর্থাৎ এই দুটি আয়াত সারা রাত ইবাদতের সওয়াব প্রাপ্তিতে যথেষ্ট।
রাতে ১০০ আয়াত তেলাওয়াত
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রাতের বেলায় এক শ আয়াত পড়ে, তার আমলনামায় পুরো রাত ইবাদত করার সওয়াব লিপিবদ্ধ করা হবে। (ইবনে খুজাইমাহ: ১১৪২)
আরও পড়ুন: ঘুমের আগে যেসব সুরা পড়তেন নবীজি
বিধবা নারীকে সাহায্য
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী (স.) বলেছেন, বিধবা ও মিসকিনের জন্য খাদ্য জোগাড় করতে চেষ্টারত ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদকারীর মতো অথবা রাতে সালাতে দণ্ডায়মান ও দিনে সিয়াম পালনকারীর মতো। (বুখারি: ৫৩৫৩)
তাহাজ্জুদের নিয়তে ঘুমানো
আবু দারদা (রা.) বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করার নিয়তে বিছানায় আসে, কিন্তু তার চক্ষুদ্বয় নিদ্রা প্রবল হয়ে যাওয়ায় ভোর পর্যন্ত সে ঘুমিয়ে থাকে, তার জন্য তার নিয়ত অনুসারে সওয়াব লেখা হবে, আর আল্লাহর পক্ষ থেকে তার নিদ্রা তার জন্য সদকাস্বরূপ হয়ে যাবে। (সুনানে নাসায়ি: ১৭৮৭)
আরও পড়ুন: তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম কানুন
জুমার দিন বিশেষ সুন্নত আদায়
আউস ইবনে আউস আস-সাকাফি (রা.) বলেন, আমি রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি জুমার দিন উত্তমরূপে গোসল করবে এবং সকাল-সকাল জুমা আদায়ের জন্য যাবে, জুমার জন্য বাহনে চড়ে নয় বরং পায়ে হেঁটে মসজিদে যাবে এবং কোনোরূপ অনর্থক কথা না বলে ইমামের কাছে বসে মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনবে, সে (মসজিদে যাওয়ার) প্রতিটি কদমের বিনিময়ে এক বছর সিয়াম পালন ও রাতভর সালাত আদায়ের (সমান) সওয়াব পাবে। (আবু দাউদ: ৩৪৫)
আরও পড়ুন: কেয়ামতের দিন জুমা আদায়কারীর বিশেষ সম্মান
সীমান্ত পাহারা
সালমান ফারসি (রা.) বলেন, আমি রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহর পথে এক দিন বা এক রাত সীমানা পাহারা দেওয়া, এক মাসের সাওম পালন ও সালাত আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর ওই প্রহরী যদি এ অবস্থায় মারা যায়, তাহলে তার আমলের সওয়াব অবিরত পেতে থাকবে, তার জন্য সর্বক্ষণ রিজিক (জান্নাত থেকে) আসতে থাকবে এবং সে কবরের কঠিন পরীক্ষা থেকে মুক্তি পাবে। (মুসলিম: ১৯১৩)
উত্তম চরিত্রের অনন্য মর্যাদা
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (স.) বলেছেন, যে মুসলমান শরিয়তের ওপর আমলকারী হয় সে নিজের ভদ্র স্বভাব ও উত্তম চরিত্রের কারণে ওই ব্যক্তির মর্যাদা লাভ করে, যে রাতে নামাজে অনেক বেশি পরিমাণ কোরআন পাঠ করে এবং অনেক বেশি রোজা রাখে (মুসনাদে আহমদ: ৬৬৪৮)।
আরও পড়ুন: নবীজির চরিত্র সম্পর্কে আয়েশা (রা.) যা বলেছেন
আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছি, মুমিন নিজ সচ্চরিত্রের মাধ্যমে রোজাদার ও রাতভর ইবাদতকারীর সমান মর্যাদা লাভ করতে পারে। (আবু দাউদ: ৪৭৯৮)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। সারারাত ইবাদতের সওয়াব লাভে উল্লেখিত আমলগুলো করার তাওফিক দান করুন। আমিন।