ধর্ম ডেস্ক
০৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০৬:০৮ পিএম
ক্ষমা একটি উঁচু মানের মানবীয় গুণ। যেসব বান্দা এই গুণে গুণান্বিত আল্লাহ তাআলা তাদের ভালোবাসেন। এটি মূলত আল্লাহ তাআলারই মহান একটি গুণ। তাঁর একটি নাম আল গাফুর বা পরম ক্ষমাশীল। পবিত্র কোরআনের বর্ণনায় ‘নিশ্চয় তিনি আল্লাহ, ক্ষমাশীল, পরম ক্ষমাপরায়ণ।’ (সুরা হজ: ৬০)
আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয়নবীকে এই গুণে গুণান্বিত হওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘(হে নবী!) আপনি ক্ষমাশীলতার নীতি অবলম্বন করুন। সৎ কাজের আদেশ দিন এবং মূর্খদের এড়িয়ে চলুন।’ (সুরা আরাফ: ১১৯)
এ আয়াতের মর্ম সম্পর্কে নবীজি (স.)-কে জিবরাঈল (আ.) বলেন, ‘হে মুহাম্মদ (স.) আল্লাহ তাআলা আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যে ব্যক্তি আপনার সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে, আপনি তার সাথে সম্পর্ক অবিচ্ছিন্ন রাখুন। যে আপনাকে বঞ্চিত করে, আপনি তাকে দান করুন এবং যে আপনার প্রতি অবিচার-অত্যাচার করে, আপনি তাকে ক্ষমা করে দিন।’ (তাফসিরে তাবারি, খণ্ড: ১০, পৃষ্ঠা-৭১৫)
আরও পড়ুন: ৪ আলামতে বুঝবেন আল্লাহ আপনাকে ভালোবাসেন
মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৫৯)
আল্লাহ নিজের এই গুণটি শুধুমাত্র নবীজিকে নয়, বান্দাদেরও অর্জন করতে অনুপ্রাণিত করেছেন এভাবে—‘যদি তোমরা সৎকাজ প্রকাশ্যে করো অথবা গোপনে করো অথবা যদি তোমরা অপরাধ ক্ষমা করে দাও, তাহলে জেনে রাখো যে, আল্লাহ নিজেও ক্ষমাকারী, সর্বশক্তিমান।’ (সুরা নিসা: ১৪৯)
আল্লাহর বান্দা হিসেবে তাই আমাদের উচিত ক্ষমা, দয়া ও উদারতার গুণে নিজেদের সজ্জিত করা। আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসুল (স.) আমাদের সে অনুপ্রেরণাই দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা যদি ওদের মার্জনা কর, ওদের দোষত্রুটি উপেক্ষা কর এবং ক্ষমা কর, তবে জেনে রাখ- আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা তাগাবুন: ১৪)
আল্লাহ তাআলা ক্ষমাকারীদের পছন্দ করেন। ক্ষমাশীলতাকে পরকালীন সমৃদ্ধির উপকরণ বলে ঘোষণা করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে ধাবিত হও যার প্রশস্ততা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর ন্যায়। যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে মুত্তাকীদের জন্য। যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল উভয় অবস্থায় ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ সম্বরণকারী আর মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল। আল্লাহ নেককার লোকদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৩৩-১৩৪)
আরও পড়ুন: আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসার পুরস্কার
আল্লাহ তাআলা ক্ষমাকারীকে পুরস্কৃত করার ওয়াদা করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন—‘আর মন্দের প্রতিফল মন্দ। এরপর যে ক্ষমা করে দেয় এবং আপস নিষ্পত্তি করে, তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে রয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিমদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা শুরা: ৪০)
ক্ষমাশীল ও সবরকারীদের প্রশংসায় পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি ধৈর্য ধরবে ও ক্ষমা করবে, সন্দেহাতীতভাবে তা বড় উচ্চমানের সাহসিকতাপূর্ণ কাজের অন্যতম।’ (সুরা আশ শুরা: ৪৩)
মানুষকে ক্ষমা করে দেওয়াটা তাকওয়ার পথকে মসৃণ করে। তাই তাকওয়ার মতো অনন্য গুণ অর্জন করতে হলে ক্ষমার শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর ক্ষমা করে দেওয়াই তাকওয়ার নিকটতম।’ (সুরা বাকারা: ২৩৭)
আরও পড়ুন: তাকওয়া অর্জনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
নবীজি (স.) ব্যক্তিগত কোনো কষ্টের প্রতিশোধ নেননি কখনও। ক্ষমাই করেছেন জীবনভর। একবার এক বেদুঈন পেছন থেকে শক্ত করে নবীজির চাদর টেনে ধরায় গলায় ফাঁস লাগার উপক্রম হয়, দাগ পড়ে যায়। সে কিছু চাচ্ছিল নবীজির কাছে। নবীজি পেছন ফিরে মুচকি হাসিতে বললেন তাকে কিছু দিয়ে দিতে। রাগ করেননি। বিরক্তি ভাবও প্রকাশিত হয়নি তাঁর থেকে।
মক্কা বিজয়ের পর রাসুলুল্লাহ (স.) অপরাধীদের ক্ষমা করে দিয়ে বলেছিলেন, আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। যা ক্ষমা ও ছাড়ের প্রবাদপ্রতীম এক দৃষ্টান্ত। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (স.) বলেন, ‘সদকা করাতে সম্পদের ঘাটতি হয় না। যে ব্যক্তি ক্ষমা করে আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। আর যে কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে বিনীত হলে তিনি তার সম্মান প্রতিষ্ঠিত করে দেন।’ (সহিহ মুসলিম: ২৫৮৮)
আরও পড়ুন: নবীজির সাধারণ ক্ষমা ঘোষণাটি কেমন ছিল
আল্লাহ তাআলা ক্ষমাশীল ব্যক্তিদের সৎকর্মশীল বলে ঘোষণা করেছেন। এ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় দান করে, রাগ নিয়ন্ত্রণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে থাকে; আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন।’ (সুরা আল-ইমরান: ১৩৪)
সুতরাং আল্লাহ তাআলার ক্ষমা ও সন্তুষ্টি লাভে ধন্য হতে চাইলে— অবশ্যই আমাদের ক্ষমার পথে হাঁটতে হবে। আল্লাহ তাআলা তার ক্ষমাপ্রাপ্ত বান্দাদের দলে আমাদের শামিল করুন। আমিন।