images

ইসলাম

যা দেখে দুনিয়ার কষ্ট অস্বীকার করবেন জান্নাতি

ধর্ম ডেস্ক

২৯ নভেম্বর ২০২২, ০৬:৪২ পিএম

জান্নাত মুমিনের স্থায়ী নিবাস। যারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন তারা অনন্তকাল জান্নাতেই থাকবেন। চিরস্থায়ী ভোগ-বিলাসের এই স্থানে মৃত্যু নেই, রোগ-বালাই নেই, বার্ধক্য নেই। জান্নাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে রাসুল (স.) বলেন, ‘মহান আল্লাহ বলেছেন, আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্য এমন জিনিস তৈরি করে রেখেছি, যা কোনো চক্ষু দেখেনি, কোনো কান শোনেনি এবং যার সম্পর্কে কোনো মানুষের মনে ধারণাও জন্মেনি। তোমরা চাইলে এ আয়াতটি পাঠ করতে পারো, ‘কেউ জানে না, তাদের জন্য তাদের চোখ শীতলকারী কী জিনিস লুকানো আছে।’ (সুরা সাজদাহ: ১৩; বুখারি: ৩২৪৪)

আরও পড়ুন: জান্নাতের সুখ শান্তি

দুনিয়ার সুখ শান্তিকে সেদিন অবিশ্বাসীদের কাছে খুব তুচ্ছ মনে হবে। পক্ষান্তরে মুমিনদের কাছে মনে হবে দুনিয়াতে তারা কোনো কষ্টই ভোগ করেননি। সে প্রসঙ্গটি হাদিসে উদ্বৃত্ত হয়েছে এভাবে-

কেয়ামতের দিন অবিশ্বাসীদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তিকে হাজির করা হবে, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় আরাম-আয়েশে দিন কাটিয়েছে। বলা হবে, তোমরা (ফেরেশতারা) একে জাহান্নাম থেকে একবার ডুবিয়ে আনো। অতএব, তাকে জাহান্নামে একবার ডুবিয়ে আনা হবে। অতঃপর তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, হে অমুক! তুমি কি কখনো সুখের ছোঁয়া পেয়েছ? সে বলবে, না, আমি কখনো সুখের ছোঁয়া পাইনি। অতঃপর ঈমানদারদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তিকে হাজির করা হবে, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় দুঃখ-কষ্ট ও বিপদাপদে জীবন কাটিয়েছে। বলা হবে, একে একটু জান্নাত দেখাও। অতঃপর তাকে জান্নাত দেখানো হবে। এরপর তাকে বলা হবে, হে অমুক! তোমাকে কি কখনো দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করেছে? সে বলবে, আমি কখনো দুঃখ-কষ্টে পতিত হইনি।’ (ইবনে মাজাহ: ৪৩২১)

জান্নাতের নেয়ামত প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের জন্য রয়েছে চির বসন্তের জান্নাত, যার পাদদেশে প্রবাহিত হতে থাকবে নদী, সেখানে তাদের সোনার কাঁকনে সজ্জিত করা হবে, সেখানে তারা সূক্ষ্ম ও পুরু রেশম ও কিংখাবের সবুজ বস্ত্র পরিধান করবে এবং উপবেশন করবে উঁচু আসনে বালিশে হেলান দিয়ে, চমৎকার পুরস্কার এবং সর্বোত্তম আবাস!’ (সুরা কাহাফ: ৩১)

‘অবশ্য মুত্তাকিদের জন্য সাফল্যের একটি স্থান রয়েছে। বাগ-বাগিচা, আঙুর, নবযৌবনা সমবয়সী তরুণীবৃন্দ এবং উচ্ছ্বসিত পানপাত্র। সেখানে তারা শুনবে না কোনো বাজে ও মিথ্যা কথা। প্রতিদান ও যথেষ্ট পুরস্কার তোমাদের রবের পক্ষ থেকে।’ (সুরা নাবা: ৩১-৩৬)

‘..যেখানে থাকবে বহমান ঝর্ণাধারা। সেখানে উঁচু আসন থাকবে, পানপাত্রসমূহ থাকবে। সারি সারি বালিশ সাজানো থাকবে এবং উৎকৃষ্ট বিছানা পাতা থাকবে’ (সুরা গাশিয়া: ৮-১৬)। ‘..সেখানে থাকবে পাক-পবিত্র স্ত্রীগণ এবং তারা সেখানে থাকবে চিরকাল।’ (সুরা বাকারা: ২৫)

হুর জান্নাতের একটি বিশেষ নেয়ামত। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে হুরদের দৈহিক অবয়বের বিবরণ দিয়েছেন। যেমন ‘তাদের করেছি কুমারি, সোহাগিনী, সমবয়ষ্কা’ (সূরা ওয়াকেয়া: ৩৬-৩৭)। ‘মুত্তাকিদের জন্য রয়েছে সাফল্য, উদ্যান, আঙ্গুর এবং স্ফীত স্তনবিশিষ্টা সমবয়সী বালিকা।’ (সুরা নাবা: ৩১-৩৩)

এসব সুখ শান্তির একটুখানি দেখেই জান্নাতির মনে হবে দুনিয়ায় কোনো কষ্ট তাকে স্পর্শ করেনি। তাই মুমিনের প্রতি কোরআন সুন্নাহর নির্দেশ হলো- মুমিনের লক্ষ্য হতে হবে পরকালীন সুখ-শান্তি। যার সঙ্গে দুনিয়ার সুখের তুলনা চলে না। মুমিনের আসল চিন্তা কাজ-কর্ম আখেরাতমুখী হতে হবে। সবর করতে হবে। মিথ্যা, দুর্নীতি, হারাম খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারো অধিকার খর্ব করা যাবে না। দীনের পথে অবিচল থাকতে হবে। ধন সম্পদ ও আরাম আয়েশের জন্য লালায়িত না হয়ে কোরআন সুন্নাহভিত্তিক জীবন যাপন করতে হবে। দুনিয়ার ধন সম্পদ, সন্তানাদি এসব আল্লাহর পরীক্ষা। এসবের মোহে পড়ে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল হওয়া যাবে না। আল্লাহ তাআলা এ সম্পর্কে সতর্ক করে বলেন— ‘এবং তোমরা জেনে রাখো, তোমাদের সম্পদ এবং তোমাদের সন্তান শুধু এক পরীক্ষা এবং নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট রয়েছে মহাপুরুস্কার।’ (সুরা আনফাল: ২৮)

আরও পড়ুন: জান্নাতের প্রাসাদ দেখতে কেমন হবে

এ কারণে রাসুল (সা.) তাঁর উম্মতদের সর্বদা দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে দুনিয়ায় সাদাসিধে জীবন যাপনের শিক্ষা দিয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ (স.) আমার কাঁধে হাত রাখলেন এবং বললেন, তুমি দুনিয়ায় এমনভাবে থাকো যেন তুমি একজন মুসাফির অথবা বিদেশি। ইবনে উমর (রা.) বলতেন, ‘যখন সন্ধ্যায় উপনীত হবে তখন তোমরা সকালের অপেক্ষা করো না। আর যখন সকাল হয় তখন সন্ধ্যার জন্য অপেক্ষা করো না। অসুস্থ হওয়ার আগে সুস্থতাকে কাজে লাগাও, আর তোমাদের মৃত্যুর জন্য জীবিতাবস্থায় পাথেয় জোগাড় করে নাও।’ (সহিহ বুখারি: ৬৪১৬)

দুনিয়ায় আল্লাহ তাআলা কাফের-মুশরিকদের প্রচুর ধন সম্পদ দিয়েছেন, নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব দিয়েছেন। তারাও পরকালের পরিবর্তে দুনিয়ার সুখ-শান্তিকে বেছে নিয়েছে। এসব দেখে মুমিনরা বিভ্রান্ত হতে পারেন না। কেননা তাদের ধন-সম্পদ, নেতৃত্ব, খ্যাতি সব দুনিয়ার জীবন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। পরকালে তাদের জন্য কিছুই থাকবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এরা এমন লোক যাদের জন্য আখেরাতে আগুন ছাড়া অন্য কিছুই নেই এবং তারা যা করেছিল আখিরাতে তা নিষ্ফল হবে। আর তারা যা করত তা ছিল নিরর্থক।’ (সূরা হুদ: ১৬)

আরও পড়ুন: কেমন হবে জান্নাতের বাজার

মোট কথা দুনিয়ার রঙে বেশামাল হওয়া মুমিনের কাজ নয়। এজন্যই নবীজি (স.) ইরশাদ করেছেন— الدنيا سجن المؤمن وجنة الكافر ‘দুনিয়া মুমিনের জন্য জেলখানা এবং কাফেরের জন্য জান্নাত।’ (মেশকাত: ৪৯৩১) 

পবিত্র কোরআনের বর্ণনামতে ‘পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কিছুই নয়’ (সূরা আলে ইমরান: ১৮৬)। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে বিশুদ্ধ ঈমান ও নেক আমলের সঙ্গে জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। চিরস্থায়ী সুখের জান্নাত দিয়ে সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আমিন।