images

ইসলাম

সম্পর্ক নষ্ট করা সবচেয়ে বড় শয়তানি

ধর্ম ডেস্ক

২৭ নভেম্বর ২০২২, ০৭:২৯ পিএম

আল্লাহর বান্দাদেরকে বিপথগামী করতে শয়তান বদ্ধপরিকর। ধোঁকা ও প্ররোচনার নতুন নতুন ফাঁদে মানুষকে আটকানোর চেষ্টা করে সে। এ কাজে শয়তান সফল হবে বলে চ্যালেঞ্জ করেছিল আল্লাহর সঙ্গে। মহান আল্লাহও তাকে সুযোগ দিলেন। এরপর থেকে পুরো মানবজাতীর বিরুদ্ধে তার শয়তানি কর্মকাণ্ড অব্যাহত আছে।

কোরআনুল কারিমে শয়তানকে মানুষের প্রকাশ্য শত্রু ঘোষণা করে আল্লাহ তাআলা বলেন,  'হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে দাখিল হও; আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।' (সুরা বাকারা: ২০৮)

আরও পড়ুন: আয়াতুল কুরসির ফজিলত শিখিয়ে শয়তানের মুক্তির ঘটনা

ফাঁদে আটকিয়ে মানুষকে গুনাহের কাজ করাতে পারলেই শয়তান খুশি। গুনাহেরও আবার শ্রেণিবিভাগ আছে। কিছু গুনাহ শয়তানকে বেশি আনন্দ দেয়, আর কিছু কম। শয়তানের কাছে পবিত্র সম্পর্ক নষ্ট করার চেয়ে বড় খুশির খবর নেই। তেমনই এক ঘটনা বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। হজরত জাবির (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন—

‘শয়তান পানির ওপর তার সিংহাসন স্থাপন করে, তারপর (পুরো বিশ্বে) তার বাহিনী পাঠিয়ে দেয়। আর (ওই শয়তান সদস্য) তার সবচেয়ে বেশি নৈকট্যপ্রাপ্ত, যে (মানুষের মাঝে) সবচেয়ে বেশি ফেতনা সৃষ্টি করে। শয়তান সিংহাসনে বসে সবার ঘটানো ফেতনার বর্ণনা শোনে। একজন এসে বলে আমি অমুক কাজ করেছি, শয়তান বলে তুমি তেমন কোনো কাজ করোনি। এভাবে শয়তান তার পাঠানো অন্যদের (শয়তান সদস্যদের) মন্দ কাজের বিবরণ শুনতে থাকে।

আরও পড়ুন: ‘নেককার স্ত্রী’ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ

অতঃপর একজন এসে বলে- 'আমি অমুকের সঙ্গে ধোঁকার আচরণ করেছি, এমনকি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেছি। এ (ফেতনার) কথা শুনে শয়তান তাকে তার কাছাকাছি (বুকে) টেনে নেয়। আর বলে- তুমিই বড় কাজ করেছ। হাদিস বর্ণনাকারী আমাশ বলেন, আমার মনে হয় তিনি বলেছেন, অতঃপর শয়তান তাকে তার বুকের সঙ্গে জড়িয়ে নেয়।' (মুসলিম: ৭২৮৪; আহমদ: ১৪৩৭৭)

হাদিস থেকে স্পষ্ট যে, সবচেয়ে বড় ফেতনা হচ্ছে- পবিত্র সম্পর্ক নষ্ট করে দেওয়া। বিশেষ করে স্বা-স্ত্রীর বৈবাহিক বন্ধন। সুতরাং পারিবারিক সম্পর্ক কিংবা সামাজিক-রাষ্ট্রিয় ভাঙনের মূল খেলাটা খেলে যায় শয়তান। মানুষ তা বুঝতে পারে না। তাই তার এই প্ররোচনা থেকে সতর্ক থাকা জরুরি। 

শয়তানের ফেতনা থেকে বাঁচার উপায়
শয়তানের ফেতনা থেকে বেঁচে থাকতে বেশি বেশি তাউজ, ইসতেগফার ও দোয়া পড়তে হবে। যেমন—

১) أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ 'আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বানির রাঝিম' অর্থ: 'বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই'
নিয়ম: ফেতনা বা অন্যায়ের সঙ্কল্প মনে আসার সঙ্গে সঙ্গেই তাউজ পড়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে শয়তানের ধোঁকা বা প্ররোচনা থেকে হেফাজতের আশ্রয় চাওয়া। (সুরা আরাফ: ২০০; সুরা ফুসসিলাত: ৩৬)

২) أَستَغْفِرُ اللهَ ‘আস্তাগফিরুল্লাহ।’ অর্থ: ‘আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি’
নিয়ম: প্রতি ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর রাসুলুল্লাহ (স.) এ ইসতেগফারটি ৩ বার পড়তেন।' (তিরমিজি: ৩৪১২)

৩) أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ ‘আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি’ অর্থ: ‘আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর দিকেই ফিরে আসছি’ 
নিয়ম: এটি প্রতিদিন ৭০/১০০ বার পড়া। রাসুলুল্লাহ (স.) প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক তাওবাহ ও ইসতেগফার করতেন।' ((বুখারি: ৬৩০৭)

৪) رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ (أنْتَ) التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ 'রাব্বিগ্ ফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা ইন্নাকা (আংতাত) তাওয়াবুর রাহিম।' অর্থ: 'হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবাহ কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী করুণাময়।'
নিয়ম: রাসুলুল্লাহ (স.) মসজিদে বসে এক বৈঠকেই এই দোয়া ১০০ বার পড়েছেন।' (আবু দাউদ: ১৫১৬)

৫) أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ 'আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি' অর্থ: 'আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছেই ফিরে আসি।' (আবু দাউদ: ১৫১৭, তিরমিজি: ৩৫৭৭)

৬) (মুসা আলাইহিস সালামের বিখ্যাত ইসতেগফার) رَبِّ إِنِّى ظَلَمْتُ نَفْسِى فَٱغْفِرْ لِى ‘রাব্বি ইন্নি জলামতু নাফসি ফাগফিরলি’ অর্থ: হে আমার রব! নিশ্চয় আমি আমার নফসের উপর জুলুম করেছি, সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।’ (সুরা কাসাস: ১৬)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শয়তানের ফেতনা থেকে রক্ষা করুন। তাউজ, ইসতেগফার ও দোয়ার আমলগুলো যথাযথ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।