images

ইসলাম

আউয়াল ওয়াক্তে নামাজ পড়ার ফজিলত

ধর্ম ডেস্ক

১৯ নভেম্বর ২০২২, ০১:৩৪ পিএম

নামাজ ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ। একে দীনের খুঁটি বলা হয়। ঈমান আনার পর একজন মুমিনের বড় দায়িত্বটি হলো সময়মতো নামাজ পড়া। এটি ফরজ দায়িত্ব। ঘরে-বাইরে, দেশে-বিদেশে, সাগরে-মহাকাশে যেখানে যে অবস্থায়ই থাকেন না কেন, সময়মতো নামাজ পড়তেই হবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘...নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা মুমিনদের জন্য অবশ্যকর্তব্য।’ (সুরা নিসা: ১০৩)

কোরআনের এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা নির্ধারিত সময়ে নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আবার পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে উত্তম হলো আউয়াল ওয়াক্তে বা প্রথম ওয়াক্তে নামাজ পড়া। প্রত্যেক নামাজের মোট সময়ের প্রথম অর্ধাংশকে আউয়াল ওয়াক্ত বলা হয়।

মেরাজ রজনীতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার পরের দিন জিব্রাইল (আ.) পৃথিবীতে এসে নিজ ইমামতিতে নামাজ পড়িয়ে নবীজিকে প্রথম ও শেষ ওয়াক্ত নামাজের সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। জিব্রাইল (আ.) টানা দুই দিন এসেছেনে এবং পবিত্র কাবা চত্বরে মাকামে ইবরাহিমের পাশে দাঁড়িয়ে নবীজির ইমামতি করেছেন। প্রথম দিন আউয়াল ওয়াক্তে ও পরের দিন আখেরি বা শেষ ওয়াক্তে নামাজ পড়িয়ে দুই দিনে মোট ১০ ওয়াক্ত নামাজের পছন্দনীয় সময়কাল ওই দুই সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। (মুত্তাফাকুন আলাইহ, মেশকাত: ৫৮৬২-৬৩; আবুদাউদ: ৩৯৩; তিরমিজি: ১৪৯)

আর আউয়াল ওয়াক্তে নামাজ আদায় করাকে রাসুলুল্লাহ (স.) সর্বোত্তম আমল হিসাবে অভিহিত করেছেন। (আবুদাউদ: ৪২৬; তিরমিজি১৭০)। আবার যখন লোকেরা জামাতে নামাজ দেরি করে পড়বে (অর্থাৎ প্রথম ওয়াক্তে পড়বে না), তখন একাকি নামাজ আদায় করে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। (মুসলিম: ৬৪৮; নাসায়ি: ৮৫৯)

আয়েশা (রা.) বলেন, মহানবী (স.) শেষ জীবন পর্যন্ত দ্বিতীয়বার কখনও শেষ ওয়াক্তে সালাত আদায় করেননি। (তিরমিজি: ১৭৪)। এ থেকে আউয়াল ওয়াক্তের গুরুত্ব প্রমাণিত হয়। 

আরও পড়ুন: নামাজের উত্তম সময়

অনেক সময় মানুষ ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় ওয়াক্ত হওয়ার পরও নামাজ আদায়ে দেরি করে থাকে। এ কারণে প্রিয়নবী (স.) যথা সময়ে নামাজ আদায়ের ফজিলত ঘোষণা করেছেন। হাজারো কর্ম ব্যস্ততার মাঝেও যেন মানুষ নামাজের আউয়াল ওয়াক্তের প্রতি যত্নবান হয়। একদিন হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) রাসুল (স.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর নিকট কোন কাজ অধিক পছন্দনীয়? তিনি বললেন, সময়মতো (প্রথম ওয়াক্তে) নামাজ আদায় করা। সময়মতো নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে যারা মসজিদে অপেক্ষায় থাকে, তাদের জন্য নামাজের সওয়াবই লেখা হয়।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত নামাজের জন্য বসে অপেক্ষা করতে থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে নামাজরত থাকে। আর ফেরেশতারাও ততক্ষণ পর্যন্ত তার জন্য এই বলে দোয়া করতে থাকে যে হে আল্লাহ, তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও। হে আল্লাহ, তুমি তাকে রহম করো। (আর ফেরেশতারা) ততক্ষণ পর্যন্ত এরূপ দোয়া করতে থাকে, যতক্ষণ সে সেখান থেকে উঠে চলে না যায় কিংবা যতক্ষণ অজু নষ্ট না করে। (মুসলিম: ১৩৯৫)

আরও পড়ুন: নামাজ জামাতে পড়ার তাগিদ কেন?

জমহুর আলেমদের মতে, জামাতের গুরুত্ব বেশি তবে তা অবশ্যই ওয়াক্তের বাইরে গিয়ে নয়। আবু জার (রা.) বলেন, রাসুল (স.) আমাকে বলেছেন, আমিরগণ যখন ওয়াক্ত থেকে সরিয়ে সালাত দেরি করে পড়বে বা সালাতকে তার ওয়াক্ত থেকে মেরে ফেলবে, তখন তুমি কী করবে? আমি বললাম, আপনি আমাকে কী করতে বলছেন? তখন রাসুল (স.) বললেন, সালাতের সময়েই সালাত আদায় করে নাও। অতঃপর তাদের সঙ্গে যদি আদায় করতে পারো তাহলে আদায় করো। তবে তা তোমার জন্য নফল হবে। (সহিহ মুসলিম: ১৪৯৭; মেশকাত: ৬০০)

উকবা ইবনে আমের (রা.) বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন, তোমাদের প্রতিপালক আনন্দিত হন ওই ছাগলের রাখালের প্রতি, যে একা পর্বত শিখরে দাঁড়িয়ে সালাতের আজান দেয় এবং সালাত আদায় করে। আল্লাহ তাআলা তখন ফেরেশতাদের বলেন, তোমরা আমার বান্দার প্রতি লক্ষ করো! সে আমার ভয়ে আজান দিচ্ছে এবং সালাত আদায় করছে। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালাম। (আবুদাউদ: ১২০৩; নাসায়ি: ৬৬৬; মেশকাত: ৬৬৫)

আরও পড়ুন: নামাজে সচরাচর ৫টি মারাত্মক ভুল 

উক্ত কোরআনের আয়াত ও হাদিসগুলোর মধ্যে আউয়াল ওয়াক্তে নামাজ পড়ার গুরুত্ব পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে। এমনকি জামাআতে সালাত আদায়ের চেয়ে ওয়াক্তকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ওয়াক্ত অনুযায়ী সালাত আদায় করলে আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোরও অঙ্গীকার করেছেন। এমনকি কোনো রাখালও যদি ওয়াক্ত অনুযায়ী একাকি সালাত আদায় করে, তবুও তাকে ক্ষমা করে দেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করান। অতএব দেরি করে নয়, প্রথম ওয়াক্তে নামাজ আদায় করা গুরুত্বপূর্ণ।

আর ওয়াক্তের বাইরে নামাজ আদায়কারীদের আল্লাহ তাআলা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘অতএব সেই সব নামাজ আদায়কারীদের জন্য দুর্ভোগ যারা নিজেদের নামাজে অমনোযোগী’ (সুরা মাউন: ৪-৫)। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজ আউয়াল ওয়াক্তে আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।